আলোচনা- জব্দকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে জাগরণ সৃষ্টি করুন by এম জেড হোসেন আরজু

সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী বিশ শতকের প্রতিনিধি দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেলের (১৮৭২-১৯৭০) চিন্তাধারা গত সেনা-সম্পৃক্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাইভেট সেক্টর হতে বেআইনি কৌশলে অর্থ জব্দকরণ ঘটনার প্রেক্ষাপটে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক মনে করি। তিনি লিখেছেন ইতিহাসের এটাই শিক্ষা যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নিতে চায় না।
এর সঙ্গে সংযোজন করা সমীচীন হবে, যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেওয়ার বিনীত ফরিয়াদ করে থাকে, তারা দুর্বল এবং তাদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে প্রয়োগের সুযোগ থাকে না। রাষ্ট্র কর্তৃক সম্পদ জব্দকরণ (Confiscation)-এর আইন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বপ্রথম ১৮৬১ সালে অনুমোদন লাভ করে লাখ লাখ ক্রীতদাসকে মুক্তির প্রয়াসে অসাধারণ এক মানবতাবাদী ব্রত নিয়ে। বস্তুত আইনটির সার্থক প্রয়োগ ঘটেছিল দেশটির ভৌগোলিক-সামাজিক অখণ্ডতা এবং জাতীয় স্বাধীনতা সংরক্ষণেও একটি বিশাল পরিমাপের ত্যাগের রাস্তা নির্মাণ করে। সে মুক্তির মহাসরণি নির্মাণে ছয় লাখ ২০ হাজার সৈন্যের জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছিল এবং সর্বব্যাপ্ত গৃহযুদ্ধের (১৮৬১-১৮৬৫) সফল সমাপ্তির পর পরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে ভূষিত আব্রাহম লিংকন (১৮০৯-১৮৬৫) আকস্মিক ঘাতকের গুলিতে প্রাণ ত্যাগ করেন। বর্ণিত আইনটি প্রণয়ন এবং কার্যকরকরণের নায়কদের জীবনালেখ্য আজ সে দেশের জাগরণ ও জাতীয় আত্মপ্রতিষ্ঠায় উজ্জ্বল উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে। আর বাংলাদেশ! বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত প্রতিভা কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) যাকে বলেছেন 'হতভাগ্য জাতি'। আরেক প্রয়াত প্রবাসী বাঙালি-প্রতিভা নীরোদ চন্দ্র চৌধুরীর (১৮৯৭-১৯৯৯) ভাষ্যমতে 'আত্মঘাতী বাঙালি'। রাষ্ট্র শাসন-পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই বলতে বলতে চারটি দশক প্রায় অতিক্রান্ত। এরই মাঝে আরেক প্রহসন জাতির জীবনে মঞ্চস্থ হয়ে গেল ২০০৭-২০০৮ অব্দে। তারই একটি সংঘটিত আখ্যান হলো, সে সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্র্তৃক প্রায় ৪০টি করপোরেট বিজনেস হাউস ও ব্যক্তি থেকে প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা ভীতি ও শক্তি প্রদর্শনপূর্বক জব্দ করা। জব্দকৃত অর্থের পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট ও প্রমাণিত অপরাধ অথবা সরকারের জব্দকরণ প্রক্রিয়ায় আইনগত দিকটি অনুসৃত না হওয়ায় ইতিমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত জব্দকৃত অর্থ দুই মালিককে ফেরত প্রদানেরও রায় দিয়েছেন।
পৃথিবীখ্যাত পাকিস্তানি সমাজবিজ্ঞানী হামযা আলাভিন (১৯২১-২০০৩) ১৯৭২ সালে প্রকাশিত একটি সাড়াজাগানো নিবন্ধ_'The State of Post Colonial Societies : Pakistan & Bangladesh'-এর আলোকে একটু বর্ধিত ও পরিণত সময়ের ভিত্তিতে বিশ্লেষিত হতে পারে বাংলাদেশের বুর্জোয়া ও আমলা সামরিকদের মুষ্টিমেয় বা অলিগার্কি (Oligarchy,.) শাসনের মধ্যবর্তী দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের সর্বশেষ জটিল মাত্রায় আরোহণকাল অথবা বিগত সেনাসমর্থিত ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক শাসনকাল। পুঁজিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থা মেনে নিয়ে এখানে রাষ্ট্র-শাসনশীল পক্ষগুলো যদি স্বার্থসংশ্লিষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ ও স্বায়ত্তশাসিত বৈশিষ্ট্যে স্ব স্ব কর্মসূচি বাস্তবায়নের আপাত সহনশীল সম্পর্ক বজায় না রাখে, তাহলে প্রচলিত ধারায় রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন হোঁচট খাবে, এমনকি ক্ষমতার বহু মেরু প্রতিযোগিতায় আগ্নেয়গিরির মতো বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। ফলস্বরূপ অপেক্ষমাণ বৈদেশিক সাম্রাজ্যবাদী বুর্জোয়ারা স্থলাভিষিক্ত হতে পারে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও সম্পদ লুণ্ঠন প্রক্রিয়ায় বৃহত্তম ভোক্তার। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সরকারের এবং অক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর চরম ব্যর্থতার পরম্পরায় ২০০৭ সালে এক অদ্ভুত প্রকরণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতাসীন হয় এবং এখতিয়ারবহির্ভূত ক্ষমতাচর্চায় মরিয়া হয়ে ওঠে। উদ্ভট ক্ষমতাচর্চার নিপীড়নমূলক একটি প্রকাশ হলো সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কিছু সদস্য দেশের প্রতিষ্ঠিত বিজনেস করপোরেট হাউস ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা জব্দ করেন। সরকারি বিশেষ তহবিলে জমা দেওয়া হলেও লোপাট করা হয়েছে শত শত কোটি টাকা বলে পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে।
২০০৮ সালের শেষ পর্বে দেশে নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলে করপোরেট বিজনেস হাউসগুলো পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে জব্দকৃত অর্থ ফেরত পাওয়ার দাবি উত্থাপন করতে থাকে। মাননীয় উচ্চ আদালত ২৪ আগস্ট, ২০১০ দুটো প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জব্দকৃত ২৯৭ কোটি টাকা ফেরত দিতে সরকারকে নির্দেশও প্রদান করেন। অন্যদিকে বসুন্ধরা গ্রুপের দায়ের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে মাননীয় উচ্চ আদালত মেঘনা সিমেন্ট মিলস্ লিমিটেডের কাছ থেকে ৫২ কোটি টাকা গ্রহণ কেন অবৈধ ও আইনবহির্ভূত হবে না এবং কেন এ টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না_মর্মে সরকারের প্রতি রুল জারি করেছেন। বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রাজত্বকালে দেশের অন্যতম বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে কয়েক দফায় ২৫০ কোটি টাকা জব্দ করা হয়। মাননীয় হাইকোর্টের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের সংবিধান-বহির্ভূত কোনো ক্ষমতা নেই। সব ক্ষমতা সংবিধানের আলোকে প্রয়োগ করতে হবে। সংবিধানের কোথাও সরকারি কর্তৃপক্ষকে আইন-বহির্ভূতভাবে অর্থ গ্রহণের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। প্রজাতন্ত্রের সংবিধানের ৮১, ৮২ ও ৮৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কারো কাছে কোনো টাকা পাওনা না থাকলে এবং পাওনা থাকলে তা নিষ্পত্তি না করা ছাড়া সরকার কোনো টাকা আদায় করতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কালের কণ্ঠকে যে অভিমত উপস্থাপন করেছেন, তাতে নৈর্ব্যক্তিক ও আইনগত প্রক্রিয়ায় সহজ ও সম্মানজনক সমাধান পাওয়া যায়। তাঁর অভিমত, 'বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের অ্যাকাউন্ট হোল্ডার, ওই অ্যাকাউন্টে রক্ষিত টাকা কাকে দেবে না দেবে, সে সিদ্ধান্ত সরকারই নিতে পারে। সরকার চাইলে আমরা টাকা ফেরত দেব।' গত জুন মাসে জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সরকারি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মহীউদ্দীন খান আলমগীর বলেছেন, 'বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের কাছ থেকে যে টাকা আদায় করা হয়েছে_তা অবৈধ, সরকারের উচিত, ওই টাকা ফেরত দেওয়া।'
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.)-এর শাসনকালকে অবিতর্কিতভাবে বিশ্বের আদর্শস্থানীয় ও শান্তি-শৃঙ্খলা-অগ্রগতির স্বর্ণোজ্জ্বল সময় বলে গণ্য করা হয়। সাহাবিরা পর্যন্ত দ্বিতল ভবন ও জৌলুশপূর্ণ জীবন যাপন করতেন। তখন রাষ্ট্রীয় রাজস্বের মূল উৎস ছিল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া জাকাত। তৎকালীন আরব সাম্রাজ্যের উত্থানে ব্যবসায়ীদের অবদান ইসলামের বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক স্তম্ভ নির্মাণে সত্যিকার শক্তিস্বরূপ সক্রিয় ছিল।
বিশ্বের যেকোনো রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক পরিমণ্ডলে পদার্পণ করলে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে ভারতীয় করপোরেট বিজনেস হাউসগুলোর শক্তিশালী ও সম্মানিত বিশাল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। সুদূর ও বৈরী প্রকৃতির আফ্রিকাতে পর্যন্ত তারা বিকাশমান অর্থনৈতিক পরাশক্তি ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছে। আমি দেখেছি, তানজানিয়াতে টাটা স্টিল উদ্যোক্তাদের আবরণে বিশাল কার্যক্রমে নিয়োজিত, রিলায়েন্স পেরুতে এবং বেদান্ত মঙ্গোলিয়াতে লৌহ, তাম্র এবং কয়লাখনিতে বিভোর। ভারত সরকার এবং তাদের বৈদেশিক দূতাবাসগুলো সর্বান্তঃকরণে সামগ্রিক সহযোগিতা দিয়ে ভারতীয় প্রাইভেট কম্পানিগুলোকে ভারতের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি এবং সর্বোপরি ভারতীয় অর্থনীতির বিশাল, সুগভীর ও মহাশক্তিশালী ভিত্তি বিনির্মাণে যথাযথ সার্থক ভূমিকা রেখে চলেছে। এক টাটা সারা বিশ্বের ৮০টির মতো দেশে বিনিয়োগ করে অর্থনৈতিক টাইকুন হিসেবে বিশ্বে বিরল সম্মান অর্জন করেছে। বিপরীতে, বাংলাদেশের সরকারের ভূমিকা বা অবস্থান? এখন পর্যন্ত সরকার কোনো দেশি করপোরেট বিজনেস হাউসকে কোনোভাবে বাংলাদেশের বাইরে সম্ভাবনাময় খাতে বিনিয়োগে আনুষ্ঠানিক রাস্তা দেখাতে পারেনি অথবা বৈদেশিক বিনিয়োগের পেশাদারি প্রস্তাব রাখেনি। আধুনিক মালয়েশিয়ার স্থপতি মাহাথির মোহাম্মদের শাসনকাল (১৯৮১-২০০৩) সব ধরনের বহির্দেশীয় নির্ভরশীলতা হ্রাস এবং বহুজাতিক কম্পানিগুলোর অর্থনৈতিক আগ্রাসনে দেশীয় পুঁজিবাদী শ্রেণী তথা শক্তিশালী করপোরেট বিজনেস হাউস তৈরিতে কৌশলগত ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। মাহাথির দেশীয় সম্ভাবনাময় বেসরকারি ব্যবসায়িক কম্পানিগুলো থেকে অঙ্গীকার আদায় করেন যে তারা দেশ ও জাতির স্বার্থ সমুন্নত রেখে ব্যবসা করবে। বিনিময়ে আন্তর্জাতিক টেন্ডার প্রজ্ঞাপনের পরিবর্তে সেসব অঙ্গীকারবদ্ধ দেশি কম্পানিকে বিভিন্ন সেক্টরে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আজ সেখানে পেট্রা গ্রুপ, কুওক গ্রুপ, হংলিয়ং গ্রুপ, মালয়েশিয়া মাইনিং করপোরেশন, সানওয়ে গ্রুপ জাতীয় প্রেক্ষাপট থেকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের প্রেক্ষাপটে খনি, কৃষিশিল্প এবং প্রযুক্তি খাতে উপযুক্ত ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আধুনিক মালয়েশিয়া নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গে মালয়েশিয়ার মানচিত্রের বাইরে ওই সব কম্পানির অর্থনৈতিক বিশাল পদচারণ সম্ভব হয়েছে শুধু সরকারের বিশ্বাসী ভূমিকা ও সময়োচিত কার্যকর সহযোগিতায়।
সাম্প্রতিক সময়ে ফিলিপাইনে নির্বাচিত জুনিয়র বেগিনো একুইনো বা নই নই সরকার সব জল্পনা-কল্পনা হটিয়ে দিয়ে মালয়েশীয় ও সহযোগী দেশীয় নির্মাণ কম্পানিগুলোর সঙ্গে পূর্ববর্তী অরোরা সরকারের বহুল বিতর্কিত সব চুক্তি অক্ষুণ্ন রাখা ও বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রুগ্ণ রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি বলীয়ানকরণে বেসরকারি কম্পানি ও সরকারের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসযোগ্যতা নির্মাণ অপরিহার্য বিধায় এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আমার মনে হয়, এ দেশে সরকারে আসীন ব্যক্তিরা এখনো চিরায়ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ধারণা মস্তিষ্কে এবং মনে ধারণ করে চলেছেন, যেখানে ব্যবসায়ীদের স্থান নির্ধারণ করা আছে তৃতীয় শ্রেণীর অস্পৃশ্য নাগরিক হিসেবে। চীন, ভারত প্রভৃতি রাষ্ট্র এ ধারণা থেকে অবমুক্ত হয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। স্বদেশি ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীদের সেখানে সম্মাননা দেওয়া হয় প্রায় জাতীয় বীরের পর্যায়ে। বেদনাদায়কভাবে আমরা আজ আত্মবিরোধী চরিত্রে আক্রান্ত। একসময় আমরা পাকিস্তানি বুর্জোয়া ও পাঞ্জাবি আমলাদের তীব্র বিরোধিতা করেছি বাঙালিদের বঞ্চনায়, সংখ্যাগুরু হয়েও সর্বক্ষেত্রে দুর্বল সংখ্যালঘুর ক্লিষ্ট অধিকার পাওয়ায়। আজ স্বাধীন বাংলাদেশে বাঙালি বুর্জোয়া উত্থান ও শিল্পায়নের সমুজ্জ্বল সম্ভাবনাকেও রাষ্ট্রীয় আইন ও শাসনতন্ত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নানা আঙ্গিকে আমরা অর্বাচীনভাবে বাধাগ্রস্ত করে তুলেছি। তারই একটি অন্ধকারপূর্ণ ঘটনা করপোরেট বিজনেস হাউসগুলো থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে অর্থ জব্দকরণ। হয়তোবা সে শাসনকাল আরো স্থায়ী হলে এ ধরনের অর্থ ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা আজও আহত অবস্থায় অপ্রকাশিত থাকত। বর্তমান নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণের অব্যবহিত পর রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি পত্র পাঠিয়ে জব্দকৃত অর্থের- মালিক/প্রতিষ্ঠানগুলোকে টাকা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জ্ঞাপন করেছে বলে প্রকাশ। এই অতিদ্রুত বোধোদয়কে বলব, চরম শিক্ষণীয়; বিশেষত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের প্রাণশক্তি ব্যক্তিদের জন্য।
গ্লোবালাইজেশনের যুগে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর শোষণ থেকে পরিত্রাণে জাতীয় সরকার শুধু এককভাবে প্রতিরোধ কৌশল অবলম্বন করলে স্বনির্ভর জাতীয় অর্থনৈতিক উত্থান সম্ভব হবে না। বাংলাদেশকে অনুধাবন করতে হবে বিশ্বের বৃহৎ রাষ্ট্র-শক্তিবর্গ এবং তাদের প্রশাসন বাস্তবভাবে বিশ্বাস করে তাদের প্রাইভেট করপোরেট বিজনেস হাউসগুলো দ্বারাই সম্ভব বাইরের রাষ্ট্রগুলো থেকে উচ্চমাত্রায় অর্থনৈতিক স্বার্থ ও মুনাফা অর্জন। অবশ্যই জাতীয় বুর্জোয়া বিকাশে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে ভারতের মতো, চীনের অনুরূপ অথবা মালয়েশিয়ার সদৃশ। এ জন্য এখনই দরকার সরকারের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টির সৎ ও আন্তরিক প্রচেষ্টা তথা করপোরেট বিজনেস হাউস বনাম সরকারর উচ্চপর্যায়ের প্রতিষ্ঠানগুলোর পারস্পরিক সুস্থ ও আন্তরিক সম্পর্ক সৃষ্টি। এ অপরিহার্য অভিকর্ষে জব্দ করা অর্থ মালিকদের কাছে প্রত্যর্পণ একটি সেতুস্বরূপ পরিগণিত হতে পারে। জব্দকৃত প্রায় এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা জাতীয় বাজেটের অঙ্কে তেমন খুব একটা প্রভাবদায়ক আর্থিক শক্তি নয়। অথচ পারস্পরিক অবিশ্বাস দূরীকরণ এবং বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক বিনির্মাণে সেটি প্রাইভেট সেক্টর থেকে জাতীয় বাজেটের সমপরিমাণ প্রতিক্রিয়া ও প্রভাব রাখবে মনস্তাত্তি্বকভাবে। এ যেন কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া চিলির খনিশ্রমিকদের উদ্ধারের মতো জাতীয় জাগরণমূলক ঘটনা। মাত্র ৩৪ জন খনিশ্রমিককে ভূ-গর্ভস্থ স্বর্ণখনি থেকে উদ্ধার তৎপরতায় চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্টিয়ান পিনারে স্বয়ং উপস্থিত থেকেছেন। উদ্ধার মিশন যেদিন সম্পূর্ণ ও সফল হলো সেদিনই প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা বুলেটের গতিতে সে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চতম পর্যায়ে উন্নীত হয়। আমাদের গভীর প্রত্যয়, জব্দকৃত অর্থ প্রত্যর্পণ তার চেয়ে গভীর ইতিবাচক প্রভাবসঞ্চারী হবে সরকারের শুধু জনপ্রিয়তার বুনিয়াদকে আরো বিশালভাবে নির্মাণে নয়, জাতীয় অর্থনীতির এই ক্রান্তিকালে অভিনব গুণগত ও পরিমাণগত প্রভাবও রাখবে অবশ্যম্ভাবীভাবে। পরিশেষে এই প্রেক্ষাপটে মহাগ্রন্থ আল কোরআনের একটি উক্তি সরকার বাহাদুরকে সবিনয়ে স্মরণ করিয়ে দেওয়া কর্তব্য মনে করি, 'তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না' (সুরা-নিসা, আয়াত-২৯)। বাংলাদেশের জনগণের কাছে জাতীয় সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার এবং সরকার ও দেশীয় শিল্পপতি-ব্যবসায়ীদের মধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক স্বার্থে শুভ মনস্তাত্তি্বক সম্পর্ক সৃষ্টিতে নির্বাচিত সরকার সত্যিই যে আন্তরিক, তা প্রমাণের এখনই মোক্ষম সময়। যে সুগভীর ও মহত্তম প্রেরণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৮৬১ সালে সম্পদ জব্দকরণের আইন প্রবর্তিত ও বাস্তবায়িত হয়েছিল, সে ভাবাদর্শে উদ্ভাসিত হয়ে বাংলাদেশে করপোরেট বিজনেস হাউসগুলোকে অবিলম্বে জব্দকৃত অর্থ ফিরিয়ে দিয়ে প্রথাগত রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও জাতীয় অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধন ঘটাতে পারে বর্তমান গণভিত্তিশীল নির্বাচিত সরকার।
======================
সংসদীয় গণতন্ত্রের গল্পসল্প  রাষ্ট্রীয় সমাজে চিন্তা করার স্বাধীনতার প্রয়োজন  বাঙালের জলবায়ু দর্শন: ইঁদুরই কি শ্রেষ্ঠ জীব  প্রকৃতি- পাহাড়টির সঙ্গে ধ্বংস হবে ঐতিহ্যও  স্মরণ- আজও প্রাসঙ্গিক বেগম রোকেয়া  আলোচনা- উইকিলিকসঃ জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ত্রিমুখী সংগ্রাম  মুক্তিযুদ্ধ- মুজিব বললেনঃ তোমাদের এখনই ঢাকা ত্যাগ করা উচিত  আলোচনা- ডিজিটাল-প্র্রযুক্তিই মানুষকে আরও বেশি মানবিক করে!  খবর- সংরক্ষিত বনে শুঁটকিপল্লি  ট্রেনের ওপর ট্রেন  সংকেত অমান্য, দুই ট্রেনের সংঘর্ষ  আলোচনা- রবীন্দ্রনাথের কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন ভাবনা  আলোচনা- 'ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় ঠাঁয় নেই দরিদ্রর উচ্চ শিক্ষা  বিশেষ আলোচনা- ফিরে দেখা গঙ্গা চুক্তি  আলোচনা- 'সংসদ বর্জনের অপসংস্কৃতি বন্ধ হোক'  আলোচনা- 'উইকিলিকসে বাংলাদেশ, তারপর?  আলোচনা- 'ওয়াংগালাঃ গারোদের জাতীয় উৎসব'  স্মরণ- 'বাঘা যতীনঃ অগ্নিযুগের মহানায়ক'  খবর, কালের কণ্ঠের- আগেই ধ্বংস মহাস্থানগঃ হাইকোর্টের নির্দেশে কাজ বন্ধ  কেয়ার্নের সঙ্গে স্বার্থবিরোধী চুক্তির পেছনেও জ্বালানি উপদেষ্টা  উইকিলিকস জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের আত্মসমর্পণ  সবুজ মাঠ পেরিয়ে  আলোচনা- 'আরো অনুদানের টাকা সরিয়েছিলেন ইউনূস'  আলোচনা- 'একটি 'উজ্জ্বল ভাবমূর্তির' এভারেস্ট থেকে পতন  গল্পালোচনা- 'আসি আসি করে আশিতে আসবে!'  রাষ্ট্র ও রাজনীতিঃ সবুজ মাঠ পেরিয়ে  স্মরণ- 'রবীন্দ্রনাথ—সার্ধশত জন্মবার্ষিকীতে'  স্মরণ- 'জননেতা দেওয়ান ফরিদ গাজী'  আলোচনা- 'প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফর ও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নতুন পর্যায়'  আলোচনা- 'কর্মপরিবেশঃ স্বর্গে তৈরি'  গল্পালোচনা- ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া...’  আন্তর্জাতিক- উইকিলিকসঃ হাটে হাঁড়ি ভাঙা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ  গল্পসল্প- ওরা ধান কুড়ানির দল  শিক্ষা- আদিবাসী পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চাই


দৈনিক কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ এম জেড হোসেন আরজু


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.