গল্প- 'মাদকাসক্ত' by আলী ইদ্রিস

নিশি রাতে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন পড়শিদেরকে অতর্কিতে জাগিয়ে দিয়ে কালবৈশাখীর মতো আগমন ঘটে সেলিমের। এক তলা বাড়ীর সীমানা প্রাচীরে শীটের ফটকে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে এক সাথে বার কয়েক লাথি মারলে যে শব্দ হয়,

সেই শব্দে পড়শিরা গভীর ঘুম থেকে জেগে বুঝতে পারে যে, রাত দুটো বেজেছে। দিনের পর দিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি এখন তাদের গা-সহা হয়ে গিয়েছে। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের ঘুমের অতোটা ব্যাঘাত হয় না যতটা বয়স্কদের হয়। সেটা সেলিমের সৌভাগ্যই বলতে হবে। নতুবা জোয়ান ছেলেরা এতোটা ধৈর্য দেখাতো না, নেশাখোরকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে নেশামুক্ত করতো।
অভ্যেসবশত পড়শিরা ঘুমিয়ে পড়লেও সেলিমের মা ও বোনকে রাত দুটো পর্যন্ত জেগে থাকতে হয়। নেশার বিষাক্ত উত্তেজনায় রাজা-উজির মেরে, হৈ চৈ সহকারে রাস্তা কাঁপিয়ে শেষে বাসার ফটকে জোরে জোরে লাথি মেরে সেলিম তার কর্মকান্ডের প্রথম পর্ব সমাপ্ত করে।
দ্বিতীয় পর্বে যা ঘটে সেটা বাইরের কেউ জানে না, কিন্তু মা-বোনের সারা রাতের ঘুম হারাম করে দিয়ে ঘরটাকে দোযখে রূপান্তরিত করে। প্রথমইে খাবার টেবিলে বসে দু'একটি খাবার পাতে তুলে নেয়। খেতে যদি সুস্বাদু না হয় তৎক্ষণাৎ সে খাবারের বাটি ধাক্কা দিয়ে টেবিল থেকে মাটিতে ফেলে দেয়, পরক্ষণেই গস্নাস, জগ, পেস্নট ভাঙ্গার তান্ডব শুরু হয়। সেলিমের প্রতিদিনের ভাংচুর-তান্ডবে ঘরের পেস্নট-গস্নাসের স্টক প্রায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। জমানো অর্থ থেকে প্রতিদিন সেলিমের হাতে পাঁচ'শ টাকা ধরিয়ে দিতে হয়, নতুবা সে মা-বোনের উপর আক্রমণ চালায়। রাত তিনটা নাগাদ সেলিম ক্লান্ত হয়ে বিছানা নিলে মা ও বোন ঘুমোবার সুযোগ পায়।
চার সদস্যের সুখী, ধনবান পরিবারের কর্তা ইমরান সা'বের মৃতু্যর পূর্বে পরিবারে সুখের বন্যা বইতো। তখন সেলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাবার পাজেরো গাড়ী চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতো-আসতো। পকেট ভরা টাকা। আড্ডাবাজিতে অগ্রগামী। কথায় কথায় বাজি ধরে এবং বাজিতে হেরে বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে শহরের অভিজাত রেস্তোরাঁয় ডিনার খেতো, সাথে মদ্য জাতীয় পানীয় আর সিগারেট। পানীয় পান করতে করতে নেশা ধরে যেতা, সিগারেটের শেষাংশ জমে ছাইদানী উপচে পড়তো। এরপর ওরা বেরিয়ে পড়তো জনশূন্য রাজপথে গভীর রাতে। মোটর গাড়ী ছেড়ে ওরা মোটর সাইকেলে দাবড়ে বেড়াতো এক পাড়া থেকে আর এক পাড়ায়। ঘুমন্ত কাকগুলো মোটর বাইকের গর্জনে ডালে ডালে ডেকে উঠতো। অট্টালিকার দারওয়ানরা হুইসেল বাজিয়ে সতর্কতা জারি করতো, কিন্তু এক দঙ্গল ধাবমান জোয়ানকে দেখে চুপসে লুকিয়ে পড়তো। পুলিশকে ওরা পাত্তাই দিতো না, শুধু র্যাব-পুলিশের গাড়ী দেখলে মোটর বাইকের গতি শস্নথ করে ভদ্র ছেলেদের মতো আচরণ করতো। মোটর বাইক থেকে নেমে ওরা আড্ডা বসাতো ঝুপড়িতে। ধনবান অভিজাত মা-বাবার ছেলেরা বিলাসবহুল প্রাসাদ ছেড়ে টিন-শেডের ঝুপড়িতে কি মজা পেতো কে জানে। প্রাসাদোপম বাড়ীর শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত শীতল কক্ষ ছেড়ে নেশার টানে ঝুপড়ির ভেপসা গরমে ঘন্টার পর ঘন্টা কিভাবে কাটাতো ভাবতে আশ্চর্য লাগে । নেশাখোররা কি অমৃত রেখে বিষও পান করতে পারে, বেহেস্ত ছেড়ে দোযখেও ঠাঁই নিতে পারে ? ধনীর দুলাল সেলিমের বাবার মৃতু্যর পূর্বে মাদকের নেশায় যে মওতার কুঅভ্যাস গড়ে উঠেছিল বাবার মৃতু্যর পর যেন সেই নেশা আরও জেঁকে বসলো।
ইমরান সা'বের স্বপ্ন ছিল ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে বাবার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ে যোগ দেবে এবং তিনি একমাত্র ছেলেকে মনের মতো করে ব্যবসাটা শিখিয়ে-পড়িয়ে নেবেন। দু'যুগের সাধনায় অংশীদার বন্ধুর সাথে মাথার ঘাম পায়ে প্রবাহিত করে পোশাক-শিল্পের কারখানাটি নিজে দাঁড় করিয়েছেন। কিন্তু ইমরান সা'ব জানতেন না যে, নিজের ছেলেটি বখে গিয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অর্থের চাহিদা থাকলেও বাবার মতো ছেলের অর্থোপার্জনের আকাঙ্ক্ষা নেই, বাবার কেনা পাজেরো জিপ থাকলেও নিজের উপার্জনে একটি ছোট গাড়ী কেনারও ইচ্ছে নেই। ইমরান সা'ব ভেবে পান না তারই ছেলে তার মতো অধ্যবসায়ী না হয়ে কর্মবিমুখ হলো কেন। অর্থ-বিত্তের আধিক্যই কি তার কারণ? ইমরান সা'ব ভাবছিলেন ছেলে ব্যবসাতে যোগ দিলে তাঁর পরিশ্রমের ভগ্নাংশ ছেলের কাঁধে তুলে দেবেন, কিন্তু তাঁর আশা পূরণ হলো না। উপরন্তু ব্যবসার কলেবর বৃদ্ধি পাওয়াতে বয়সের অনুপাতে ইমরান সা'বের খাটুনি বেড়ে গেল। রাতদিন পরিশ্রম, বিদেশ ভ্রমণ, খদ্দেরদের সাথে মিটিং-বৈঠক, এ সব কওে ইমরান সা'বের শরীর অসুস্থ হয়ে পড়তো, তদুপরি একমাত্র ছেলের ব্যবসায়ে উদাসীনতা তাকে প্রায়ই ভাবিয়ে তুলতো। শরীর ও মনের উপর পরিবারিক অশান্তির প্রভাবে অজান্তেই ইমরান সা'বের রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়েছিল, কিন্তু ডাক্তার দেখানোর ফুরসত পাননি। এর মধ্যেই তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটলো। হাসপাতালে নেওয়ার পথে ইমরান সা'ব শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
আপন হাতে গড়া প্রতিষ্ঠিত ব্যবসাটি ইমরান সা'ব নিজেই তত্ত্বাবধান করতেন বলে পোশাক কারখানাটি দিন দিন উন্নতি করছিল। কিন্তু তাঁর মৃতু্যর পর ছেলে, মেয়ে বা স্ত্রী কেউই ব্যবসার হাল ধরতে পারলো না। স্ত্রী ভেবেছিলেন ওটা ছেলের কাজ, ছেলেই সামলাবে, কিন্তু অন্য নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা ছেলের যে ব্যবসার প্রতি বিন্দুমাত্রও আকর্ষণ ছিল না, জননীর ব্যাপারটি অনুধাবন করতে সময় লাগলো। ইতোমধ্যে অর্ধ বছর পার হয়ে গেছে। স্বামীর জীবদ্দশায় স্ত্রী ভুলেও কোনদিন পোশাক কারখানায় যাননি ,ইমরান সা'বও সে সম্পর্কে স্ত্রীকে অবহিত করেননি। ফলে যা হওয়ার কথা তাই হলো, সুযোগ বুঝে অংশীদার বন্ধু ব্যবসাটি পুরোপুরি কব্জা করে ফেললো।
এদিকে ব্যবসা থেকে কোন মুনাফার অংশ না পাওয়াতে ইমরান পরিবারের সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়লো। এতদিন চাওয়ার পর মুহূর্তেই টাকার বান্ডিলগুলো বেগম ইমরানের হাতে এসে পৌঁঁছতো। সেই স্বপ্নের দিনগুলোর অবসান হয়ে গিয়েছে। গত ছ'মাস যাবৎ বেগম ইমরান ঘরে জমানো টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন। এখন সে জমানো টাকা নিঃশেষ হয়ে যাওয়াতে মহিলার টনক নড়লো। এবার তিনি কারখানায় ইমরানের অংশীদার বন্ধুর কাছে নিজের মুনাফার হিস্যা চাইলেন। কিন্তু অংশীদার বন্ধু ব্যবসাতে লোকসান হচ্ছে বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বন্ধুর স্ত্রীকে ফিরিয়ে দিলেন এবং বলে দিলেন যে, ভবিষ্যতে মুনাফা হলে মুনাফার অংশ নিজেই গিয়ে দিয়ে আসবেন। বেগম ইমরান এবার সত্যিকারের ভাবনায় পড়লেন। কারখানা্ ও বাড়ী ছাড়া ইমরানের অন্য কোন সম্পত্তি বা ব্যাংক ব্যালেন্স আছে কিনা মৃতু্যর পূর্বে তা ইমরান স্ত্রীকে জানিয়ে যায়নি। থাকলে নিশ্চয়ই জানিয়ে যেতেন-এ বিশ্বাসে মহিলা এখন রেখে যাওয়া একমাত্র সম্পত্তি নিজের বাড়ি ছাড়া আয়ের অন্য কোন উৎস খুঁজে পেলেন না।
ইতোমধ্যে সেলিমের নেশার মওতা আরও প্রকট, আরও শক্তিশালী হলো। সেলিমের নেশাগ্রস্ততা এমন পর্যায়ে পেঁৗছলো যে, এখন সে মা-বোনকে শুধু মানসিকভাবে নয়, শারীরিকভাবেও অত্যাচার করতে লাগলো। ঘুম থেকে উঠেই সে প্রাতঃরাশ সেরে নেশাদ্রব্য কেনার অর্থ চায়, পুরো পাঁচ'শ টাকা। না দিতে পারলে মাকে প্রথমে বকুনি, পরে গায়ে হাত তুলতে লাগলো। নিরূপায় মা নিজের গয়না বেচার অর্থ থেকে ছেলের দাবী মেটান। টাকা না দিলে সেলিম মায়ের গায়ে হাত উঠায়। বোন সেটা সহ্য করতে না পেরে ভাইকে শাসন করলে সে আরও হিংস্র হয়ে বোনের গায়ে হাত তোলে। ছেলের শারীরিক অত্যচার মা মুখ বুঁজে সহ্য করলেও বোন তা করে না, চিৎকার করে সারা বাড়ি কাঁপিয়ে তোলে, পাল্টা আঘাত করার চেষ্টা করে। ইমরান ভিলায় তখন কুরুক্ষেত্র, পড়শিরা এসে ভিড় জমায় এবং তাদের সক্রিয় বাধাদানে হাতাহাতি বন্ধ হয়।
নিত্যদিন একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। রাত তিনটায় নেশাগ্রস্ত হয়ে বাসায় ফিরে শীটের ফটকে লাথি মেরে বিকট আওয়াজ সৃষ্টি, এরপর বাসার ভেতরে আসবাবপত্র ছোঁড়াছুঁড়ি, চিৎকার করে গালি-গালাজ করা, আবার কখনও মা-বোনের গায়ে হাত তোলা এবং এক সময় নিস্তেজ হয়ে ঘুমিয়ে পড়া। দিনের বেলা দ'ুটোয় ঘুম ভাংলে খেয়েদেয়ে আবার আস্তানার উদ্দেশ্যে যাত্রা। তখন নেশার জন্য হাতে কমপক্ষে প'াঁচশ টাকা চাই, মা টাকা দিতে না পারলে আবার গায়ে হাত তোলা। তাই মা টাকাটা আগে থেকেই যোগাড় করে রাখেন। পড়শিরাও সেলিমের অনাচারে অভ্যস্ত ও সহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। তারা আর দৌড়ে আসে না। এদিকে মা-বোনের ধৈর্য্যের পরীক্ষা চলতেই থাকে। এ যেন এক দোযখে বসবাস। নিজের ওরসজাত সন্তানের হাতে প্রতিদিন মার খাওয়া, আপন ভাই কর্তৃক সোমত্ত বোনের গায়ে প্রত্যহ হাত তোলা, এ অত্যাচার কতদিন চলবে। মা-মেয়ের একই প্রশ্ন, আর কতদিন? সংসারে এক টাকা আয় নেই, মার গয়না বিক্রির টাকায় বাজার খরচ চলছে, সেই অর্থ থেকে প্রতিদিন পাঁচ'শ টাকা নেশার জন্য ছেলের হাতে তুলে দেয়া, তাতেও রক্ষে নেই। নেশাগ্রস্ত হয়ে রাত দ'ুটোয় বাড়ি ফিরে ফের মা-বোনের উপর অত্যচার। "হারামজাদাকে কি যমেও ভয় পায়, তাই তো ওর মরণ হয় না। মরলে তো কিছুটা দিন শান্তিতে বাঁচতে পারতাম, হাতে একটা বন্দুক থাকলে ওর বুকে গুলি করতাম।" ভুক্তভোগী মা প্রায়ই খেদোক্তি করতেন আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়তেন।
একদিন এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলো। মা গিয়েছিলেন কিছু বাজার-সওদা করতে, ঘরে খাবার-দাবার ছিল না। বোনটি একা কলেজের পাঠ সম্পাদন করছিল। সেলিম ঘুম থেকে উঠে দুপুরের খাবার চাইলো। বোন খাবার দিলো। সেলিম নেশার টাকা চাইলো। বোনের হাতে কোন টাকাপয়সা ছিল না, সে দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলো। আর যায় কোথায়। অমনি অসহায় মেয়েটিকে টেনে হিঁচড়ে, লাথি মেরে মেঝেতে ধরাশায়ী করলো। মেয়ের করুণ আর্ত চিৎকারে এবার পড়শিরাও নির্বিকার থাকতে পারলো না, তারা এসে নেশাখোর ভাইয়ের ছোবল থেকে বোনকে মুক্ত করলো। ঠিক সে মুহূর্তে মা ফিরে এসে প্রতিবেশীদের মুখে ঘটনা শুনলেন। পুত্রের অত্যাচারে অতিষ্ঠ মা ধৈর্য্য ধরে রাখতে পারলে না। পড়শিদের জটলা ডিঙ্গিয়ে ঘরের ভেতরে থেকে একটি লাঠি হাতে নিলেন এবং ইচ্ছামতো ডান হাতের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ছেলেকে পিটালেন। নেশাখোর সেলিম এমন পিটুনি কোনদিন খায়নি, বিশেষ করে মাটির মতো ধৈর্যশীল সর্বংসহা মার হাতে এমন পিটুনি খাওয়া তাকে স্তম্ভিত করলো। এরপর একে একে পড়শিরা প্রস্থান করলে সেলিম নিঃশব্দে, বিনা প্রতিবাদে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
ঝড়ের তান্ডব থেমে গেলে যেমন স্বস্তি নেমে আসে বিছানায় সেলিমের নিঃশব্দ অবস্থান কিছুক্ষণের জন্য হলেও পরিবারে শান্তির হাওয়া বইয়ে দিল। মা-বোন যেন স্বর্গের সুখ পেলেন। হৈ-হলস্না, চিলস্নাচিলিস্ন, জিনিসপত্র ছোঁড়াছুঁড়ি, অশস্নীল অশ্রাব্য গালিগালাজ, মা-বোনের গায়ে হাত তোলা কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ থাকায় ঘরটাকে বেহেস্তর মতো মনে হচ্ছিল। কিন্তু বেহেস্তর পরিবেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। ক্ষুধার্ত নেশাগ্রস্ত সেলিমের নেশাটা মাথাচাড়া দিয়ে দ্বিগুণ শক্তিতে মাঝ-রাতে জেগে উঠলো। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সে ঘুমন্ত মা-বোনের উপর চড়াও হলো। দু'হাতে দু'জনের চুলের ঝুটি ধরে বিছানার উপর দাঁড় করিয়ে কিল, ঘুসি, লাথি, থাপ্পড় মারতে লাগলো। অত্যাচারিত নারী দু'জনকে অর্ধ-বিবস্ত্র আর নিস্তেজ করে সেলিম ক্লান্ত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। এবার মধ্যরাতে নারীদ্বয়ের চিৎকারে কোন পড়শি এগিয়ে এলো না। নেশাখোর জাতকের হাতে মা, উন্মত্ত ভাইয়ের হাতে বোন নিপীড়নের শিকার হলো।
দুঃসহ, অসহনীয় অবস্থার কোন পরিবর্তন হলো না ইমরান পরিবারে। একটি দুষ্ট সদস্যের অপকর্ম অপর দু'টি সদস্যকে ধ্বংসের দিকে ধাবিত করলো। সেলিমের নিত্যকার নির্যাতনে অতিষ্ঠ মা-বোন ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে দিশেহারা হয়ে পড়লো। কি করে এ দুরাত্মার হাত থেকে বাঁচা যায়, যে কোন কিছুর বিনিময়ে প্রহূত মা-বোন এখন পশুটার হাত থেকে মুক্তি পেতে চায়। কি করে সম্ভব? একজন নেশাগ্রস্ত পুরুষের শক্তির কাছে দু'জন নারীর শক্তিও যথেষ্ট নয়। অতিষ্ঠ, অনন্যোপায় নারীদ্বয় সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করতে লাগলেন। এ মুক্তি কামনা খুবই কষ্টের। ্ঔরসজাত সন্তানের নির্যাতন থেকে মা'র মুক্তি, ভাইয়ের অত্যাচার থেকে বোনের মুক্তি, এ যেন হূদয়ের ভেতরে রক্তক্ষরণ থেকে বাঁচার আকুতি। অবশেষে বিধাতা স্বয়ং নড়ে উঠলেন। একটি টেলিফোন কল এলো মার কাছে "আপনার ছেলের বাড়াবাড়ি চরমে উঠেছে, ওকে আমাদের পাওনা টাকা ফেরত দিতে বলেন, দু'দিন সময় দিলাম। নতুবা তৃতীয় দিনে ছেলের লাশ দেখবেন।" মা-বোন তো সেলিমের লাশই নীরবে চেয়েছিলেন। পাওনা টাকা ফেরত দেবেন কোত্থেকে। নিজেরাই এখন উপোস দিচ্ছেন। তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় বাসার সামনের রাস্তায় কয়েকটি গুলির আওয়াজ শোনা গেল। তখনই কে যেন মাকে খবর দিলো সেলিম রাস্তায় পড়ে আছে। স্নেহসিক্ত মার মন নির্বিকার থাকতে পারলো না। মা কেঁদে উঠলেন , কিন্তু ততদিনে চোখের অশ্রু শুকিয়ে গেছে ।
============================
গল্প- 'বেঁটে খাটো ভালোবাসা' by রেজানুর রহমান  কবর by জসীম উদ্দীন (পল্লীকবি)  গল্প- 'নদীর নাম চিলমারী' by নীলু দাস  গল্প- 'লাউয়ের ডগা' by নূর কামরুন নাহার  গল্প- 'অপূর্ব সৃষ্টি' by পারভীন সুলতানা গল্প- 'ঊনচলিস্নশ বছর আগে' by জামাল উদ্দীন  গল্প- 'সুচ' by জাফর তালুকদার   গল্প- 'বাসস্ট্যান্ডে যে দাঁড়িয়েছিল' by ঝর্না রহমান  গল্প- 'গন্না' by তিলোত্তমা মজুমদার  গল্প- 'ঘুড়িয়াল' by শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়  গল্প- 'প্রক্ষেপণ' by মোহিত কামাল  গল্প- 'গন্তব্য বদল' by রফিকুর রশীদ  গল্প- 'ঝড়ের রাতে' by প্রচেত গুপ্ত  গল্প- 'শুধু একটি রাত' by সাইপ্রিয়েন এক্ওয়েন্সি। অনুবাদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া  গল্প- 'পিতা ও কুকুর ছানা' by হরিপদ দত্ত  স্মরণ- 'শওকত ভাই : কিছু স্মৃতি' by কবীর চৌধুরী  সাহিত্যালোচনা- 'রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পালাকারের নাটক  স্মরণ- 'আবদুল মান্নান সৈয়দ : কবি ও প্রাবন্ধিক' by রাজু আলাউদ্দিন  স্মরণ- 'সিদ্ধার্থ শংকর রায়: মহৎ মানুষের মহাপ্রস্থানে by ফারুক চৌধুরী  গল্প- 'ফাইভ স্টার' by সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম  গল্প- 'নূরে হাফসা কোথায় যাচ্ছে?' by আন্দালিব রাশদী  গল্প- 'হার্মাদ ও চাঁদ' by কিন্নর রায়  গল্প- 'মাটির গন্ধ' by স্বপ্নময় চক্রবর্তী  সাহিত্যালোচনা- 'কবি ওলগা ফিওদোরোভনা বার্গলজ'  গল্পিতিহাস- 'বালিয়াটি জমিদারবাড়ির রূপগল্প' by আসাদুজ্জামান  ফিচার- ‘কাপ্তাই লেক:ক্রমেই পতিত হচ্ছে মৃত্যুমুখে' by আজিজুর রহমান


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্য
লেখকঃ আলী ইদ্রিস

এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.