‘ভাজ্জি’র ব্যাটে ভারতের হাসি

আজ থেকে বহুদিন পরেও কুইজের খুব ভালো একটি প্রশ্ন হবে—বোলার হিসেবে খেলে, ১১২ রানে ১ উইকেট নেওয়ার পরও টেস্টে ম্যান অব দ্য মাচ হয়েছেন কে?
হরভজন সিং নিজেও খুব অবাক। ম্যাচ-সেরা পুরস্কার নেওয়ার পর বললেন, ‘কখনো ভাবিনি ব্যাটিংয়ের জন্য টেস্টে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হব।’ হরভজন না ভাবলে কী হবে, তাঁর দুই সতীর্থ কিন্তু নিশ্চিত ছিলেন। হরভজনকে শুধু বোলার মানতে বরাবরই আপত্তি শচীন টেন্ডুলকার ও বীরেন্দর শেবাগের। ‘একটু ধৈর্য ধরলেই টেস্ট সেঞ্চুরি পাবে’—হরভজনকে সব সময়ই বলে এসেছেন ভারতের দুই ব্যাটিং-স্তম্ভ। নিরন্তর অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য কাল এই দুজনকে প্রশংসায় ভাসালেন হরভজন। তাঁদের এই অনুপ্রেরণাই তো বিব্রতকর এক হার থেকে বাঁচাল ভারতকে।
আহমেদাবাদ টেস্ট শুরুর আগে যদি বলা হতো টেস্ট হবে ‘ড্র’—কোনো দিক না তাকিয়েই মাথা পেতে নিতেন ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। মহেন্দ্র সিং ধোনি নিশ্চয়ই মানতে চাইতেন না, নিশ্চিত জয় কে হারাতে চায়! কিন্তু চতুর্থ দিন বিকেলের নাটকীয় এক ঘণ্টা পাল্টে দিয়েছিল সব হিসাব। ক্রিস মার্টিনের বিধ্বংসী এক স্পেল অবিশ্বাস্য জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল নিউজিল্যান্ডকে। কাল সেই স্বপ্ন মাথা কুটে মরেছে হরভজনের ব্যাটে।
আগের রাতে ধোনি হরভজনকে বলেছিলেন, ‘লক্ষ্মণের সামর্থ্য আমরা জানি, কিন্তু একা তো পারবে না। ওর সমর্থন দরকার।’ হরভজন কথা দিয়েছিলেন, সমর্থন দিয়ে যাবেন। কাল কিন্তু কথা রাখতে পারলেন না। এমন ব্যাটিং শুরু করলেন যে উল্টো সহযোগী হয়ে গেলেন লক্ষ্মণ! লক্ষ্মণের ২৯ রানের সময় উইকেটে নেমেছিলেন, একপর্যায়ে ছাড়িয়ে গেলেন তাঁকে। আগে সেঞ্চুরি ছোঁয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা, হঠাৎই স্টিভ ডেভিসের অবাক করা এক সিদ্ধান্তের শিকার লক্ষ্মণ। ব্যাটে জোরেশোরে লাগার পরও এলবিডব্লু! পরের বলে আবারও সংশয়পূর্ণ এলবিডব্লু। ৮ উইকেট পড়ে গেছে, ‘ভাজ্জি’র সেঞ্চুরি নিয়েই তখন শঙ্কা। ৯৫ থেকে ভেট্টোরির বল গ্যালারিতে পাঠিয়ে দূর করলেন সেই শঙ্কা। ভিভিএস লক্ষ্মণের কথা আর কী বলা যায়! ভারত বিপর্যয়ে পড়বে আর লক্ষ্মণের ব্যাট চওড়া হয়ে যাবে, কিছুদিন ধরে এটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই লক্ষ্মণ দলের প্রয়োজনে আরেকটি ‘ভেরি ভেরি স্পেশাল’ ইনিংস খেলবেন, এতে আর অবাক হওয়ার কী আছে!
জয়ের স্বপ্ন উঁকি দিয়ে হারিয়ে যাওয়ায় একটু আক্ষেপ থাকতে পারে ভেট্টোরির। সেই প্রথম দিনের পর চোটের কারণে আর বোলিংই করতে পারেননি বেনেট, দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করতে পারেননি রাইডার-উইলিয়ামসনও। টেলর-ম্যাককালামদেরও বল হাতে নিতে হয়েছে। দিন শেষে তাই ফলাফলে অসন্তুষ্ট হবেন না ভেট্টোরি। বাংলাদেশ বিপর্যয়ের ভূতটা তো আপাতত তাড়ানো গেছে!

No comments

Powered by Blogger.