জুলকারনাইনের অন্তর্ধান-রহস্য

কতভাবেই না চমকে দিতে পারে পাকিস্তানের ক্রিকেট। প্রথমে খবর এল, ‘নাই’ হয়ে গেছেন একজন জলজ্যান্ত মানুষ। আগের ম্যাচে জয়ের নায়কদের একজন তিনি। খেলা নিয়ে সংশয় ছিল না কালও। কিন্তু পাকিস্তান দল সময়মতো স্টেডিয়ামে এলেও এলেন না জুলকারনাইন হায়দার। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, পাকিস্তানি উইকেটরক্ষককে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না!
এই আচমকা ‘উধাও’ হওয়া নিয়ে যখন চারদিকে হইচই, সন্ধ্যায় অসমর্থিত সূত্রে জানা গেল জুলকারনাইনকে দেখা গেছে দুবাই বিমানবন্দরে। প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুক্তরাজ্যে যাওয়ার। দুবাই বিমানবন্দরে জুলকারনাইনকে দেখা যাওয়ার খবর ক্রিকইনফোর কাছে স্বীকারও করেছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) একটি সূত্র। অথচ কাল বিকেলে পিসিবিই বলেছিল, জুলকারনাইনের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তারা নাকি তদন্তও শুরু করেছে, এমনকি জানানো হয়েছে আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিটকেও।
পিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার নাদিম সারওয়ার ক্রিকইনফোকে বলেছিলেন, ‘তাঁকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যাপারটা আমরা বুঝতে পেরেছি আজ (কাল) সকালে, যখন স্টেডিয়ামে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। টিম ম্যানেজমেন্টকেও সে কিছু জানায়নি।’ ম্যানেজার ইন্তিখাব আলমের বক্তব্যও ছিল এ রকম, ‘আমি এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে শুধু এটুকু নিশ্চিত করতে পারি, হায়দার দলের সঙ্গে মাঠে আসেনি এবং আমরা ওকে খুঁজছি।’ তবে নিখোঁজ হওয়ার সূত্র পাওয়া গেছে জুলকারনাইনের ভাই রাজা হায়দারের কথায়, ‘চতুর্থ ওয়ানডের পর জুলকারনাইনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ও বলেছে, ম্যাচের পর থেকেই ও নানা ধরনের হুমকি পাচ্ছে, তবে বিস্তারিত কিছু বলেনি।’
‘নাই’ হয়ে যাওয়ার আগে এমনই একটা ইঙ্গিত দিয়ে গেছেন জুলকারনাইনও। ফেসবুকে দিয়েছেন রহস্যময় এক স্ট্যাটাস, ‘ছেড়ে যাচ্ছি পাকিস্তান ক্রিকেট, কারণ শেষ ম্যাচটা হারার জন্য একজনের কাছ থেকে বাজে বার্তা পেয়েছি।’ শেষ ম্যাচটা বলতে এখানে জুলকারনাইন সম্ভবত চতুর্থ ম্যাচটাই বুঝিয়েছেন, যেটিতে এক বল বাকি থাকতে এক উইকেটে জিতেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল জিয়ো টিভির এক প্রতিবেদক দাবি করেছেন, তাঁকেও এমন একটি খুদে বার্তা পাঠিয়েছেন জুলকারনাইন। ওই খুদে বার্তাতেই জুলকারনাইন অনুরোধ করেছেন লাহোরে তাঁর পরিবারের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে আর আভাস দিয়েছেন, চলে যেতে পারেন যুক্তরাজ্যে। তাঁর বাড়িতে ইতিমধ্যেই পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে।
তবে সত্যিই যুক্তরাজ্য বা অন্য কোথাও চলে গেছেন কি না, এ ব্যাপারটি পরিষ্কার নয়। তবে সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। নিয়ম অনুযায়ী ক্রিকেটারদের পাসপোর্ট দলের ম্যানেজারের কাছে থাকে। তবে মিডিয়া ম্যানেজার সারওয়ার জানিয়েছেন, জরুরি প্রয়োজনের কথা বলে জুলকারনাইন রোববার রাতেই পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন। পাকিস্তানের টিভি চ্যানেলগুলো জুলকারনাইনের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলেছে, কিন্তু কিছু জানতে পারেনি। আইসিসির এক সূত্র ক্রিকইনফোকে বলেছেন, ‘এটা পরিষ্কার, সে নিজের ইচ্ছাতেই চলে গেছে। কারণটা এখনো পরিষ্কার নয়।
বড় এ ঘটনার ঠিক আগে জুলকারনাইন খবর হয়েছেন ‘ছোট’ এক ঘটনায়। বেঁধে দেওয়া সময়ের চেয়ে মাত্র ৫ মিনিট দেরিতে হোটেলে ফেরায় ওপেনার শাহজাইব হাসান ও বাঁহাতি স্পিনার আবদুর রেহমানের সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছিল জুলকারনাইনকেও। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে নিখোঁজ হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ওই জরিমানা ছিল স্রেফ ক্রিকেটারদের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য। অপরাধের মাত্রার মতো জরিমানাও হয়েছিল সামান্য, মাত্র ৫০০ দিরহাম (প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকা)।
সব রহস্যের সমাধান সম্ভব কেবল জুলকারনাইনকে খুঁজে পাওয়া গেলেই। তবে হয়তো আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না, কিংবা পাওয়া গেলেও কখনো আলোয় আসবে না এই অধ্যায়। পাকিস্তান ক্রিকেট যে রহস্য উপহার দিতেই ভালোবাসে!

No comments

Powered by Blogger.