ফাউন্ডেশনকে কোনো অর্থ না দিতে ইসলামী ব্যাংককে নির্দেশ

ইসলামী ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের অস্বচ্ছ অর্থ ব্যয়ের প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোম্পানির সামাজিক কল্যাণের (সিএসআর) নামে এই তহবিল ব্যয় করা হয়ে থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অস্বচ্ছ ব্যয় ঠেকাতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ফাউন্ডেশনকে আর কোনো অর্থ বরাদ্দ না দিতে ইসলামী ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে।
পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ফাউন্ডেশনকে ইসলামী ব্যাংক কী পরিমাণ অর্থ দিয়েছে এবং সেই অর্থ কোথায়, কীভাবে ব্যয় হয়েছে, তা পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষ পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিবন্ধন ছাড়াই ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকায় আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (এমআরএ) বলবে বলেও জানা গেছে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শনে দেখা গেছে, সিএসআর তহবিল থেকে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন। এ বিষয়ে ক্ষুদ্রঋণ তদারকি সংস্থা এমআরএ ফাউন্ডেশনকে অনুমোদন না দিলেও ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে তারা। এমনকি এমআরএ ক্ষুদ্রঋণ পরিচালনার বিষয়টি নাকচ করার পরও ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন তা মানছে না।
শরিয়াহ অনুসারে হালাল বলে বিবেচিত হয় না—এমন অর্থ প্রতিবছর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ফাউন্ডেশনকে দিয়ে থাকে। এর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নেয় না ইসলামী ব্যাংক।
এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকে ফাউন্ডেশনের নামে আটটি ব্যাংক হিসাবে প্রাপ্ত লাভ, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল, রাজশাহীতে কমিউনিটি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ, হোমিও ক্লিনিকে লগ্নি করা অর্থের ওপর আয় ও ভাড়া আয়, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া যাকাতের অর্থ এবং অনুদান ফাউন্ডেশনে জমা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের পাঁচটি খাত থেকে আয় এই ফাউন্ডেশনে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে (’০৭ সালের কিছু অর্থসহ) এসব খাত থেকে ৫০ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যাংকের আয় হয়। যার মধ্যে কোম্পানি কর (করপোরেট ট্যাক্স) দেওয়া হয় ২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। প্রতিরক্ষা বাহিনীর গলফ ক্লাবে দেওয়া হয় ৩০ লাখ টাকা। আর বাকি ২৮ কোটি এক লাখ টাকা ফাউন্ডেশনকে দেওয়া হয়।
২০০৯ সালে এমন আয়ের পরিমাণ ছিল তিন কোটি ২৯ লাখ টাকা। যার মধ্যে এক কোটি ২৭ লাখ টাকা কোম্পানি কর এবং বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে ৫৭ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকি এক কোটি ৪৪ লাখ টাকা দেওয়া হয় ফাউন্ডেশনকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এসব অর্থের খরচের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে সামাজিক কল্যাণমূলক কাজের কথা উল্লেখ থাকলেও তহবিলের আর্থিক বিবরণী নেই। কিন্তু ব্যাংকের সাধারণ শেয়ারহোল্ডার ও আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা এবং বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার জন্য বিস্তারিত আর্থিক প্রতিবেদনের প্রয়োজনীতা রয়েছে।
একজন বিদেশি দানবীর নাম প্রকাশ না করে বাংলাদেশের সিডর এলাকার জন্য ১৩ কোটি ডলার দান করেন। এই দান নিতে সরকার ও ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের (আইডিবি) মধ্যে চুক্তি হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে এই অর্থের মধ্যে ৪৫ লাখ ডলার বা ৩০ কোটি ৭৬ লাখ টাকার অনুদান ব্যবস্থাপনার জন্য (কৃষি কর্মসূচির আওতায়) আইডিবি ও ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে চুক্তি হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর অর্থায়ন যথাযথ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে কি না বা সরকারের কোনো সংস্থা তার দেখভাল করছে কি না তা স্পষ্ট নয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু নাসের মোহাম্মদ আব্দুজ যাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোন কারণে আমাদের এমন চিঠি দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে পরিষ্কার হতে পারছি না, তাই এখনই কোনো মতামত দিতে পারছি না।’ তিনি আশা করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সহসাই তাঁদের কাছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্ঘাটিত তথ্য জানাবেন। তাহলে তাঁরাও এর সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।
তবে আব্দুজ যাহের বলেন, ‘আমরা আমাদের শেয়ারধারী ও আমানতকারীদের কাছে কোনো অস্পষ্টতা বা অস্বচ্ছতা রাখি নাই। সবকিছুই তাঁদের কাছে পরিষ্কার করা হয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.