চার ইনিংসে চার সেঞ্চুরি

খুলনার ড্রেসিংরুমের সামনে বসে ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসানদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন। পরিচিত সাংবাদিক দেখেই ডাক দিলেন তামিম ইকবাল, ‘দেখলেন, জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানরা সবাই কী দারুণ খেলছে!’
নিজে এই পর্বে খেলতে পারছেন না, কিন্তু সতীর্থদের পারফরম্যান্সে উচ্ছ্বসিত তামিম। শুধু তামিম কেন, মুশফিকুর রহিম, তুষার ইমরান কিংবা ইমরুল কায়েস; জাতীয় দলের ভেতরে-বাইরের সব ব্যাটসম্যানের একই উচ্ছ্বাস, এবার জাতীয় দলের ব্যাটসম্যানরা জাতীয় লিগে ভালো পারফরম্যান্স করছেন।
কালকের উচ্ছ্বাসের আপাত কারণ চারটি সেঞ্চুরি। জাতীয় লিগের দ্বিতীয় পর্বে যে দুটি ম্যাচ হলো, তাতেই চারটি সেঞ্চুরির দেখা মিলল। দুই সেঞ্চুরিয়ান ইমরুল কায়েস ও ফজলে রাব্বির দল খুলনা ও বরিশাল জয় পেল। সেঞ্চুরি করেও পরাজিত দলে রইলেন ঢাকার মোহাম্মদ আশরাফুল ও রাজশাহীর মুশফিকুর রহিম।
ধানমন্ডি ক্রিকেট মাঠে রাজশাহীর বিপক্ষে ৮ রানের জয়ে ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট পাওয়া বরিশালকে তুলে দিয়েছে তালিকার শীর্ষে। ৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু করা ঢাকা ৪ উইকেটে খুলনার কাছে হারায় তারা নেমে গেল দ্বিতীয় স্থানে। কালকের জয়ে খুলনার পয়েন্ট ৬, পরাজয়ের পরও রাজশাহীর সমান।
তবে এসব পয়েন্টের হিসাবের চেয়েও অনেক বড় হয়ে উঠল কাল চার সেঞ্চুরিয়ানের কীর্তি। দিনের আলোচনার বেশিটাই টেনে নিলেন এ বছরের চমক ফজলে রাব্বি। বরিশালের এই তরুণ এর আগে জাতীয় লিগের চার ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটিসহ করেছিলেন ১৮৮ রান।
কাল বরিশালের ইনিংস শুরু করতে নেমে ১৪৭ বলে ১৬টি চার ও ২টি ছয়ে সাজিয়ে ১৪৮ রান করে অপরাজিত থেকে গেলেন! আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান নাসিরউদ্দিন ফারুকের সঙ্গে ১৭২ রানের জুটি গড়েছেন রাব্বি। এই জুটিই মূলত বরিশালকে ২৭২ রানের বড় পুঁজির পথ দেখাল।
কিন্তু এই বড় পুঁজিটাকেই অপর্যাপ্ত বানাতে বসেছিলেন মুশফিকুর রহিম। এর আগে ৩ ম্যাচে দুবার সেঞ্চুরির কাছাকাছি যাওয়া মুশফিকুর ১২০ বলে ১১৪ রানের ইনিংস খেলেছেন ৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় সাজিয়ে। কিন্তু সেভাবে সঙ্গ না পাওয়ায় জয় আনতে পারলেন না রাজশাহীর জন্য।
৫২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল রাজশাহী। এরপর নাঈম ইসলামকে নিয়ে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৬৭ রানের জুটি গড়ে স্থিতিশীলতা আনতে চেয়েছিলেন মুশফিকুর। কিন্তু ২০১ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে আবার বিপাকে পড়ে যায় রাজশাহী। সেখান থেকে অষ্টম উইকেটে সোহরাওয়ার্দীকে নিয়ে ৪৫ রানের জুটি গড়েন জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক। ২৫ বলে ৩২ রান করা সোহরাওয়ার্দী রাজশাহীকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু এক ওভারের ব্যবধানে সোহরাওয়ার্দী ও মুশফিকুর ফিরে যাওয়ায় খালেদ মাসুদদের স্বপ্ন ভেঙে যায়।
মিরপুরে ঘটনা ঘটেছে উল্টো। শুরুতে উত্তম সরকারের ৬৬ রান এবং শেষে আশরাফুল ও অধিনায়ক মোহাম্মদ শরীফের ৮৯ রানের জুটিতে বরিশালের মতো ঢাকাও করেছিল ২৭২ রান।
জবাবটাও ভালো দিচ্ছিল খুলনা। ৪৬ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর মোহাম্মদ মিঠুনকে (৫৯) নিয়ে ১৪০ রানের জুটি গড়েন ইমরুল। কিন্তু ‘পাওয়ার প্লে’ নিয়ে সেই ওভারেই এই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে যায় খুলনা। এরপর এক প্রান্ত থেকে উইকেট পতন চলছিল, খুলনার ওপর রান-বলের হিসাবের চাপ বাড়ছিল।
কোথায় কিসের চাপ! পাওয়ার প্লে কাজে লাগাতে চার নম্বরে পাঠানো জিয়াউর রহমান ৪১ বলে ৩টি ছক্কা ও একটি চারে ৪২ রান করে চার বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতিয়ে দেন খুলনাকে।

No comments

Powered by Blogger.