বিশ্বকাপ! বিশ্বকাপ

বাংলাদেশ এর আগে মিনি বিশ্বকাপ, ছোটদের বিশ্বকাপ (অনূর্ধ্ব-১৯) আয়োজন করেছে। কিন্তু সত্যিকার বড় বিশ্বকাপ আয়োজকের তালিকায় নাম লেখাতে যাচ্ছে এবারই। ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যৌথ আয়োজনের সেই বিশ্বকাপ ২০১১ খুব বেশি দূরে নয়। মাত্রই ১০২ দিন দূরে দাঁড়িয়ে ৫০ ওভারের ক্রিকেটের বৃহত্তম মহাযজ্ঞ। কাল ১০ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টা এক মিনিটে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে যাবে শত দিনের ক্ষণগণনা। জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। তারপর ১০-১৫ মিনিটের আতশবাজির উৎসব জানিয়ে দেবে বাংলাদেশ সত্যিই ঢুকে পড়েছে বিশ্বকাপে।
বিশ্বকাপের সুবাস যতটা ছড়িয়েছে বাতাসে, সেই তুলনায় প্রস্তুতি কতটা হলো? গতকাল স্থানীয় আয়োজক কমিটির (এলওসি) পক্ষ থেকে যা জানানো হলো, তাতে দেখা যাচ্ছে, সময়ের তুলনায় বেশি গতিতে এগোচ্ছে প্রস্তুতি। এলওসির আহ্বায়ক দেওয়ান শফিউল আরেফিন (টুটুল) তাঁর দীর্ঘ লিখিত বক্তব্যে যা বললেন, তাতে দেশবাসী করতালি দেওয়ার জন্য হাত দুখানি সামনে সাজিয়ে ফেলতে পারে।
যৌথ আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ ১৭ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঙ্গে উদ্বোধনী ম্যাচ ও দুটি কোয়ার্টার ফাইনালসহ মোট ৮টি ম্যাচের আয়োজনের ভার পেয়েছে। মোট ৪৯টি ম্যাচের এক ষষ্ঠমাংশও নয়। কিন্তু অর্থ, শ্রম ও মেধা বিনিয়োগের দিক দিয়ে সুবিশাল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি আবু হেনা মোস্তফা কামাল যেমন বললেন, এই আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছুঁতে চায় ক্রিকেট-বিশ্বের হূদয়, তাহলে তো এমনটি হতেই হবে। দুটি মূল ভেন্যু (ঢাকা ও চট্টগ্রাম), দুটি বিকল্প ভেন্যু (ফতুল্লা) ও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভেন্যুর (বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম) উন্নয়নেই সরকার বরাদ্দ করেছে ২৫৬ দশমিক ১৪ কোটি টাকা। এর বাইরে প্রচার-প্রচারণা, নিরাপত্তা, আতিথেয়তা বাবদ খরচ হবে আরও কোটি কোটি টাকা। ঢাকা ও চট্টগ্রামের সিটি করপোরেশনও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। নগর পরিচ্ছন্নকরণ, সজ্জিতকরণের জন্য ঢাকা সিটি করপোরেশন নামছে ৬৪ কোটি টাকার বাজেট নিয়ে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বাজেট আরও বেশি, ৮৪ কোটি টাকা।
রাজধানীর অভিজাত এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গতকাল শফিউল আরেফিন অবকাঠামো, প্রচার-প্রচারণা, নিরাপত্তা, মিডিয়া-সুবিধা, টিকিট বিক্রি, দল ও অতিথিদের আবাসন, পরিবহন, বাণিজ্যিকসহ সব বিষয়েই আলোকপাত করেছেন। স্থানীয় আয়োজক কমিটি গঠিত হওয়ার ১৫ মাস পর এই প্রথম সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়াটা জনতার কাছে এক ধরনের জবাবদিহিও। বিশ্বকাপ মাঠে নামার আগে অন্তত তাতে বেশ স্বচ্ছ মনে হচ্ছে আয়োজকদের। তবে তাদের আসল প্রশংসাটা জুটবে মাঠে নামার পর কিংবা আয়োজন শেষে।
শফিউল আরেফিন জানিয়েছেন, সব ভেন্যুর উন্নয়নকাজ পূর্ণোদ্যমে শেষের দিকে এগোচ্ছে, আগামী ডিসেম্বরের মাঝামাঝি আইসিসির পর্যবেক্ষক দল সবকিছু সম্পন্ন দেখতে পাবে এবং খুশি হবে।
বিশ্বকাপের গরম বাতাসটাই আসলে গায়ে লেগে গেছে। ১১ নভেম্বর ১০০ দিনের গণনা শুরুর পর আরও লাগবে। প্রচারণার অংশ হিসেবে আইসিসির নির্দেশনায় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি মিনি বিশ্বকাপ আয়োজন করা হবে। এখান থেকে নির্বাচিত ছেলেমেয়েরা প্রতিটি ম্যাচের আগে অংশগ্রহণকারী দেশের পতাকা বহন করবে। তারকা খেলোয়াড়, সংগীতশিল্পীদের নিয়ে প্রতিটি জেলায় হবে রোড শো। ফেব্রুয়ারির গোড়াতেই বিশ্বকাপ বিশ্বভ্রমণ শেষে আসবে বাংলাদেশে। এই কাপ নিয়ে হবে শোভাযাত্রা। সারা দেশে বিলবোর্ড, হোর্ডিং, ব্যানার, ফেস্টুন, কাটআউট, পোস্টার জানিয়ে দেবে, বাংলাদেশ বিশ্বকাপের গর্বিত আয়োজক। বিশ্বকাপের দূত শচীন টেন্ডুলকার, মুরালিধরন ও সাকিব আল হাসান আগামী জানুয়ারি থেকেই টিভির পর্দায় হাজির হবেন বিশ্বকাপের আমন্ত্রণ নিয়ে।
আইসিসির যোগাযোগ বিভাগের প্রধান কলিন গিবসন আশাবাদী, বিশ্বকাপের সংবাদ প্রচারে সংবাদমাধ্যম পাবে সর্বোত্তম সুবিধা। বিসিবির সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালের সঙ্গে এই সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মাহবুবুল আনাম, বিসিবির মিডিয়া কমিটির প্রধান জালাল ইউনুস ও স্বাগতিক টুর্নামেন্ট পরিচালক আলী আহসান (বাবু)।

No comments

Powered by Blogger.