স্মরণ- 'কাউন্ট লিও তলস্তয়ের মৃত্যু-শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি' by বেলাল চৌধুরী

কাউন্ট লিও তলস্তয়ের জন্ম এক মহাদশয় রুশ পরিবারে ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ৯ সেপ্টেম্বর ইয়াসনায়া পলিনায়ায়। মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতৃ-মাতৃহীন হলে তিনি তাঁর খুড়োখুড়িমা আর গৃহশিক্ষকদের কাছে প্রতিপালিত হন। কোনো ডিগ্রি ছাড়াই তিনি খুব অল্প বয়সে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়লেও শিক্ষার প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ, যার জন্য তিনি তাঁর পিতামাতার তালুক ইয়াসনায়া পলিনায়ায় ফিরে আসেন। এখানে তিনি তাঁর কর্মচারীদের শিক্ষিত করে তুলতে নিষ্ফল উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ায় হতোদ্যম হয়ে পড়েন।
এ সময় তিনি ভাইবেরাদরদের সঙ্গে করে প্রায়ই মস্কো আর সেন্ট পিটার্সবার্গ আসা-যাওয়া করার পথে প্রত্যাশিত রুশ অভিজাত শ্রেণীর দায়িত্বজ্ঞানহীন সুখপরায়ণতা জীবনচর্যায় অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু একসময় তাঁর বোধোদয় ঘটে।
১৮৫৭ সালে তলস্তয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। আর পরের বছরই আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ত্রয়ীর প্রথম খণ্ড 'চাইল্ডহুড' প্রকাশ করেন। এর পরপর বের হয় 'বয়হুড' আর 'ইউথ'। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের সময় তলস্তয় সিভাস্তপোলে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। আসন্ন নির্দ্বিধচিত্তে এসব নিয়ে লেখালেখি তাঁকে সেন্ট পিটার্সবার্গের সাহিত্যমহলে সুপরিচিত করে তোলে এবং জারের নজরে আসেন।
যদিও তলস্তয়কে ঔপন্যাসিক হিসেবে স্মরণ করা হয়, প্রকৃত প্রস্তাবে তিনি তিন-তিনটি পূর্ণাবয়ব উপন্যাসের রচয়িতা : প্রথমে ওয়ার অ্যান্ড পিস; 'আনা কারেনিনা' উপন্যাসটি সম্পর্কে ভ্লাদিমির নভোকফ বলেছেন, 'বিশ্বসাহিত্যে সর্বোত্তম প্রেমের উপন্যাস' আর রিজারেকসন? সে সময় তলস্তয়ের প্রধান পরিচয় ছিল, নৈতিক দার্শনিক আর তাঁর রাজনৈতিক রচনাগুলি পুরো রাশিয়ায় বিপুলভাবে সমাদৃত হতে শুরু করে। কেননা তিনি বিশ্বাস করতেন, মেহনতি মানুষের সাদাসিধে অস্তিত্বে; পার্থিব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ব্যতিরেকে যা জীবনের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। তিনি লিখতেন পুঁজিবাদবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দীর্ঘ রচনাসংবলিত পুস্তিকা। যাতে থাকত অহিংস প্রতিবাদের পক্ষে (যে মত পরবর্তীকালে গান্ধীজি প্রবর্তনে প্রয়াসী হয়েছিলেন) আর সেই সঙ্গে ধর্মীয় সংস্কার সাধন।
১৯০১ খ্রিস্টাব্দে যার জন্য তাঁকে অর্থডঙ্ চার্চের অনুষ্ঠানগুলো থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তাঁর সম্পূর্ণ নতুন সহজ-সরল খ্রিস্টীয় নিজস্ব ধারণাপ্রসূত ভাষ্য, যা তাঁকে আরো বেশি জনপ্রিয় করে তোলে তাঁর অনুসারীদের কাছে।
শেষ জীবনে তলস্তয় তাঁর আত্মীয়স্বজন আর স্ত্রীকে বিরক্ত ও হতাশাগ্রস্ত করে ধর্মবিশ্বাস, আখ্যা, অভিধা, খেতাব স্বত্বাধিকার_মালিকানা পরিত্যাগ করে সাধকের জীবন নিয়ে ইহলীলা সংবরণ করেন ১৯১০ সালের ২০ নভেম্বর রাশিয়ার আস্তাপোভাতে।
বাংলা ভাষায় তলস্তয় চর্চা নতুন কিছু নয়। তাঁর রচনার সঙ্গে বাঙালি পাঠকসমাজ বহুকাল ধরেই পরিচিত। বিশেষ করে বাংলা ভাষায় অন্নদাশঙ্কর রায়ের 'টলস্টয়' আর আমাদের অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর 'টলস্টয়; অনেক প্রসঙ্গের কয়েকটি প্রসঙ্গ' খুবই উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। এ ছাড়া আমাদের সময়ের ডাকসাইটে রুশ ভাষা-বিশেষজ্ঞ হায়াৎ মামুদ সম্পাদিত আফ্রো-এশীয় লেখক ইউনিয়ন কর্তৃক তলস্তয়ের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন হিসেবে প্রকাশিত 'তলস্তয়' গ্রন্থটির কথা না বললেই নয়। হায়াৎ মামুদের মতো রুশ সাহিত্যশিল্পের মৌলিক তরজমাকার থাকতে আমাদের মতো অজ্ঞজনদের বিশেষ করে কালজয়ী রুশ লেখকদের সম্পর্কে অল্পবিস্তর কিছু লেখাটা অমার্জনীয় বলেই মনে হয়।
এখানে আরেকটি তথ্য উল্লেখ করা অবশ্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করি। যেমন_বিংশ শতাব্দীর শুরুতে যখন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের প্রবর্তন করা হয়, তখনো কিন্তু তলস্তয় জীবিত থাকা সত্ত্বেও কোথাকার কোন এক ফরাসি কবি সুলি প্রুধোমকে প্রথম নোবেল পুরস্কার দেওয়া হলে সাহিত্যামোদীদের লজ্জায় জিভ কাটার দশা হয়েছিল। বড় কারণ আজ এত বছর বাদেও সাহিত্যশিল্পপ্রীতির জন্য খোদ ফ্রান্সের জাতীয়তাবাদী অধিবাসীরাও ওই প্রাপকের নাম মনে করতে পারেন কি না সন্দেহ।
রুশ বিপ্লবের পুরোধা মহামতি লেনিনের প্রিয় লেখকদের অন্যতম ছিলেন স্বয়ং তলস্তয়। তলস্তয় সে রকমভাবে স্লোগানসর্বস্ব বিপ্লবী লেখক না হলেও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লেনিন কিন্তু তলস্তয়ের লেখায় প্রত্যক্ষ করেছিলেন বিপ্লবাকাঙ্ক্ষী রুশ সমাজের বিশ্বস্ত অবয়ব।
=========================
ইতিহাস- 'বাংলায় সিপাহি বিদ্রোহ' by রিদওয়ান আক্রাম  শিল্প-অর্থনীতি 'এখন প্রয়োজন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের' by সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ  রাজনৈতিক আলোচনা- 'গণতন্ত্র : চাইলেই ধরা দেয় না' by এমাজউদ্দীন আহমদ  আন্তর্জাতিক- 'কোরীয় অঞ্চলে নতুন উত্তেজনা কত দূর যেতে পারে?' by জগলুল আহমেদ চৌধূরী  আলোচনা- 'মানসিক নির্যাতনের প্রতিকার কোথায়' by আশরাফ-উল-আলম  আসুন, ওদের দিকে মমতার হাত বাড়িয়ে দিইঃ গোলটেবিল বৈঠক।এইচআইভি/এইডস : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা ও মানবাধিকার  আলোচনা- 'আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস'  আলোচনা- 'নেত্রীর অশ্রুপাত, হরতাল এবং অ্যাকশনে বিএনপি' by সঞ্জীব রায়  আলোচনা- 'আরো আলোকিত হোক জনশক্তি রপ্তানি খাত'  আলোচনা- 'কানকুন সম্মেলনে আমাদের প্রত্যাশা' by শিরীন আখতার  আলোচনা- 'জনসংখ্যার বিপদ ও পরিত্রাণের পথ'  শিল্প-অর্থনীতি 'বিনিয়োগ ও মূল্যস্ফীতি:দুর্ভাবনার বিষয়' by ড. আর. এম. দেবনাথ  গল্পসল্প- 'হায়রে নাড়ি ছেঁড়াধন' by শিখা ব্যানার্জী  গল্পসল্প- 'জননী ও জন্মভূমি' by শুভ রহমান  গল্পালোচনা- ''বিভীষণ' বিদায় ও হরতাল সমাচার' by শুভ রহমান  খবর- হরতালের বিরুদ্ধে একজোট, উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা  আলোচনা- 'হজ ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে কিছু কথা' by এয়ার কমোডর (অব.) মুহম্মদ জাকীউল ইসলাম


দৈনিক কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ বেলাল চৌধুরী


এই স্মরণ'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.