ইতিহাস- 'কাউন্ট লিও তলস্তয়ের হৃদয়সংবেদী ডায়েরি' by দেবেশ রায়

বাংলায় তলস্তয়-চর্চা খুব কম। সাধারণ নভেল পাঠকদের কথা ধরছি না, যাঁরা নভেল লেখেন তাঁদের পক্ষে তলস্তয় যেন তত অবশ্যপাঠ্য নয়, পুনর্পাঠ্য তো নয়ই। হয়তো একটু বাড়িয়ে ভাবছি, কারণ গৌরীশঙ্কর মিত্র কর্তৃক সংক্ষেপিত অনুবাদ বইটি একসময় তো পড়া হতো। গৌরীশঙ্করের বইটি তাঁকে দিয়ে সম্পূর্ণ করিয়ে একবার প্রকাশের চেষ্টা করেছিলাম। তিনি অসুস্থ শরীরে করেও দিলেন এই কঠিন কাজ। আমি গৌরীদার বইটি পড়িনি। তখন প্রকাশের আগে মিলিয়ে দেখতে গিয়ে চোখে পড়ল_ওটা এভরিম্যান ক্লাসিকসের লাল মলাটের বই, কনস্টান্স গারনেট-এর অনুবাদ। এর মধ্যে 'ওয়ার অ্যান্ড পিস'-এর আরো নতুন অনুবাদ বেরিয়েছে। পরে তথ্য মিলিয়ে দেখা গেল, ওই এভরিম্যান-সংস্করণটিই সংক্ষেপিত।
সেটার ভলিউম-সংখ্যা ও খণ্ডসংখ্যা আলাদা। আর অধ্যয়নগুলোও একটু আলাদা। কনস্টান্স গারনেট-এর রুশ সাহিত্য অনুবাদের একটু নিন্দে আছে_তিনি নাকি যথেচ্ছ বাদ দিতেন। গৌরীদার বাংলা অনুবাদ তারও সংক্ষেপণ।

(তলস্তয়ের সমস্যা কী ছিল যে তিনি তাঁর ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্থির করতে পারছিলেন না, তিনি কী লিখবেন? এর ভেতর তিনি তুর্গেনেভকে একটা চিঠিতে লিখেছিলেন, 'আমি সাহিত্য-চর্চার যোগ্য নই, তাই লিখব না।' তুর্গেনেভ সস্নেহে জবাব দিয়েছিলেন, 'কী আর বলব, আমি তো অতীত। আমাকে ভাঙিয়ে তো তোমার চলবে না, কিন্তু তুমি তো ভবিষ্যৎ। তোমাকে না ভাঙিয়ে আমার চলবে কী করে? সুতরাং লেখো। তুমি লেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারো না')

পরে আরো একটু খোঁজখবর নিয়ে জানা গেল কিছু মজার তথ্য। রুশ ভাষায় 'ওয়ার অ্যান্ড পিস'-এর কোনো প্রামাণিক সংস্করণই নেই। প্রথম সংস্করণ বেরোয় ১৮৬৮তে গ্রন্থাকারে, চারটি ভলিউমে, মানে চারটি বইয়ে। তার পরের বছর আরো দুটি ভলিউম বা বইয়ে উপন্যাসটি সম্পূর্ণ হয়। দ্বিতীয় সংস্করণও বেরোল এই ছয় খণ্ডেই, ১৮৬৯-এ। সেই সংস্করণে প্রথম চারটি ভলিউমের টেঙ্ট অনেক সংশোধন করা হয়েছে। মনে হয়, '৬৯-এই প্রথম সংস্করণের শেষ দুই ভলিউম বেরোয় বলে সে দুটি সংস্কারের সময় পাননি কাউন্ট। বা এমনো হতে পারে, শেষ দুই ভলিউম বেরোতে বেরোতে প্রথম চার ভলিউম শেষ হয়ে যায়। ফলে সেই চার ভলিউমের সংশোধিত পাঠের পুনর্মুদ্রণ করে সেটটাকে সম্পূর্ণ করা হয়। তৃতীয় সংস্করণে কাউন্ট একেবারে বদলে সাজালেন ১৮৭৩-এ। তাতে ভলিউম বা বইয়ের সংখ্যা কমিয়ে ফেলা হলো_এবার হলো চার ভলিউম। আর ভেতরে নানা রকম বিষয়ের ওপর যে সন্দর্ভগুলো ছিল, সেসব সরিয়ে উপশিরোনাম দিয়ে ৯টি প্রবন্ধের একটি পরিশিষ্ট করা হলো। তৃতীয় সংস্করণেই তলস্তয় সবচেয়ে বেশি বদলালেন। নানা রকম কথা উঠেছিল রাশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকায়। ১৮৬৮তে তলস্তয় সেই সব নিয়ে একটা আলোচনাও করেছিলেন। তার পরও ১৮৭৩-এর তৃতীয় সংস্করণে তলস্তয় সমালোচকদের আপত্তি মেনে নিয়ে অনেক সংস্কার করেন। ফরাসির জায়গাগুলো রুশ ভাষায় অনুবাদ করে দেন। উপন্যাসের ভেতরে নানা বিষয়ে নানা মতামত ব্যাখ্যা করেছিলেন_সমালোচকদের তাতে আপত্তি ছিল। তলস্তয় সেগুলো গল্প থেকে সরিয়ে পরিশিষ্টে নিয়ে গেলেন।
১৮৮০ সালে তলস্তয় তাঁর প্রথম দিকের সব লেখার স্বত্ব দিয়ে দেন কাউন্টেসকে। কাউন্টেস তো ছিলেন 'ওয়ার অ্যান্ড পিস'-এর সহলেখক। প্রতিটি পৃষ্ঠা অনেকবার কপি করেছেন, প্রতিটি ঘটনা, যা পেছন থেকে সামনে আনা হয়েছে বা সামনে থেকে পেছনে নেওয়া হয়েছে_তার ঔচিত্য-অনৌচিত্য নিয়ে তলস্তয়কে ভাবিয়েছেন। ভলিউম-ভাগ, অধ্যয়-ভাগ, খণ্ড-ভাগ নিয়ে মতামত স্থির করেছেন। তিনি ১৮৮০তে স্বত্বাধিকার পেয়েই তলস্তয় 'ওয়ার অ্যান্ড পিস'-এর সংশোধিত ও বিন্যস্ত ১৮৭৩-এর তৃতীয় সংস্করণ বাতিল করে দিয়ে ১৮৬৯-এর পাঠ ও বিন্যাস পুনরুদ্ধার করলেন। তার পর থেকে এই পাঠ ও ১৮৭৩-এর সংস্করণের কিছু বিন্যাস মিলিয়েই 'ওয়ার অ্যান্ড পিস'-এর এখনকার প্রচলিত মান্য সংস্করণ চলে আসছে। ১৯৬৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের খুবই বিখ্যাত সাহিত্যবিদ এন কে গুদজি বেশ আলোড়ন তোলেন এই পুরনো কথা তুলে। তিনি বলেন, ১৮৭৩-এর তৃতীয় সংস্করণই তলস্তয়ের পুনর্বিবেচিত ও পরিবর্তিত প্রামাণিক পাঠ, সুতরাং সেই পাঠ ধরেই আমাদের 'ওয়ার অ্যান্ড পিস' পড়া উচিত।
গুদজির লেখাটি আমার পড়া নেই; যদিও গুদজিকে নিয়ে লেখা কিছু প্রবন্ধ দেখেছি। তা থেকে মনে হয়েছে, তখনকার, লেখার, সমকালীন ১৮৬৫ থেকে সামাজিক কিছু মতামত সম্পর্কে তলস্তয়ের ব্যাখ্যা বা নীরবতা নিয়ে একটা তর্ক চলছিল। বইটি নিয়ে সবাই এমন আলোড়িত হয় যে ওই মতগুলো নভেল থেকে আলগা হয়ে একটা অসংগত প্রাধান্য পেয়ে যায়। পঞ্চম সংস্করণে তলস্তয় এগুলোর নিষ্পত্তি ঘটাতে চান। উপন্যাসটি লেখার সময় ১৮৬৬-র নভেম্বরে তাঁর সাগরেদ ফেটকে একটা চিঠিতে লিখছেন, 'আমি তো শুধু চরিত্রগুলোর চেহারা, কাজকর্মের কথা লিখতে চাই না। চাই তাদের ইতিহাস বদলে দিতে।'
দুই.
চিঠিতে লেখা এমন একটি কথা থেকে কেউ চাইলে আন্দাজ করতে পারেন যে সম্ভবত তলস্তয় 'ইতিহাস বদলে' দেওয়ার কথায় বলতে চেয়েছিলেন, তাঁর বইয়ে বিখ্যাত যে সব ব্যক্তির কথা আছে, তাঁদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণা অনেক সময় তিনি বদলে দিতে চাইছেন। ওই চিঠিতেই তিনি লিখেছিলেন, 'সেটাই হয়ে উঠছে আমার লেখার প্রধান বাধা (বা প্যাঁচ বা দুঃসাধ্যতা বা গেরো)।'
মানে_ঘটনার একটা পরম্পরা মানুষজনের স্মৃতিতে স্থায়ী হয়ে রয়েছে। সেটা তো বদলানো সম্ভব নয় ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে লেখা এই নভেলে। ঘটনা ঘটেছে ১৮১২তে। লেখা হচ্ছে ১৮৬৫তে। মাত্র ৫৩ বছর এমন কিছু দূরতর ব্যবধান নয়।
আবার, হয়তো এই ব্যবধানটাই চোরাবালির মতো। যদি হতো দু-তিন শতক পেরোনো বা আরো বেশি, যেমন_কাজানতজাকিম-এর 'দ্য মডার্ন সিকোয়াল টু ইউলিসিস' বা টমাস মান-এর 'জোসেফ অ্যান্ড হিজ ব্রাদার্স', তাহলে লেখক সময়ের ওপর তাঁর কর্তৃত্ব আরোপ করতে পারতেন একটা বিপরীত উপায়ে। সেই সময়ের ধারণা, বস্তু, আকার, লোকজন, পোশাক-আশাক, সম্বোধন, দিনরাতের ব্যবহার, জল, উৎপাদন, যাতায়াত, সময়জ্ঞান, দূরত্ববোধ, ঘনিষ্ঠতা, যৌনতা, খাদ্য, অধিবিদ্যা_এসব লৌকিক ও প্রচলিত জানা দিয়েই তাঁর গল্পের আর্থ-ওয়ার্ক বা জমি তৈরির কাজ করে রাখেন, তাহলে সেটাই কার্যত হয়ে উঠতে পারে একটা পরিকাঠামো লেখকের বানানো মানুষজন, চিন্তাভাবনা ও ঘটনাগুলোর ইন্দ্রিয়তা লাভের পক্ষে।
আবার, ঘটনাকাল আর লিখনকালের মধ্যে সময়ের ব্যবধান যদি এতই কম হয় যে কোনো কোনো সময়, লেখক ইচ্ছা করলে, তেমন কোনো ব্যবধানই নেই এমনও ধরে নিতে পারেন, তাহলে তাঁর জমি তৈরির কোনো আলাদা কাজই থাকল না, তাঁর একমাত্র কাজ দাঁড়াল সেই সমকালের_ঘটনা, লিখন ও পঠনকালের_সহজ পরিচায়ক কিছু চিহ্ন, যা কখনোই প্রতীক বা রূপক নয়, শুধুই পরিচয়জ্ঞাপক কিছু দূরপনেয় জন্মচিহ্ন, পাসপোর্টে যেমন লিখতে হয়, খোঁজা ও বের করা এবং সেগুলো থেকেই সরাসরি তাঁর বানানো লোকজনের কাণ্ডকারখানার গল্পে। এমন নভেলের উদাহরণ ত্বরিত মনে পড়ল_ভোলতেয়ারের 'কাঁদিদ'।
'ওয়ার অ্যান্ড পিস'-এর ঘটনাগুলো যখন ঘটছে, তখন তলস্তয়ের বয়স -২৩ ও -১৬। মাইনাস তেইশ ও মাইনাস ষোল_তাঁর জন্মের ওই কয় বছরের আগে। ৯ বছর বয়সের মধ্যেই মা-বাবা দুজনকেই হারিয়ে এক পিসির কাছে মানুষ হন। ১৬ বছর বয়স হতেই তিনি তাঁদের পল্লীসাম্রাজ্য ছেড়ে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান এবং পরীক্ষা না দিয়ে তিন বছর না পেরোতেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আবার তাঁর দেশের বাড়ি, ইয়াসনায়া পলিয়ানায় চলে আসেন, বছর চারেক পর ককেসাসে সৈন্য দলে নাম লিখিয়ে পার্বত্য উপজাতিদের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই করেন। পরের বছরই তাঁর প্রথম বই 'চাইল্ডহুড' একটি কাগজে ধারাবাহিক বের করতে করতেই দুই বছর পর সেবাস্তোপলে বদলি হয়ে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে লড়াই করে পরের দুই বছরে 'সেবাস্তোপল স্কেচেস' লেখেন এবং কাগজে বেরও করেন। তলস্তয়ের বয়স তখন ২৭-২৮। ওই 'স্কেচেস'-এর জন্য তাঁর নামও হয়েছে। একবার সেন্ট পিটার্সবুর্গ ঘুরে এসে তিনি পশ্চিম ইউরোপে যান। তখন তাঁর বয়স ২৯, তিন বছর পর আবার যান। ফিরে এসে প্রতিবেশী এক জমিদারের মেয়ে সোফিয়া বেহর্সকে বিয়ে করেন ৩৪ বছর বয়সে ১৮৬২তে, আর সে বছরই লেখেন 'কসাকস'। পরের ছয় বছর ধরে 'ওয়ার অ্যান্ড পিস' (১৮৬৩-১৮৬৯), তিন-চার বছর বিরতির পর আবার তিন বছর ধরে (১৮৭৩-৭৬) 'আনা কারেনিনা'।
এমন কালপঞ্জিতে আপাতত লক্ষ করার মতো ঘটনা হচ্ছে, তলস্তয় বেশি বয়সে বিয়ে করেছিলেন এবং বেশি বয়স হওয়া সত্ত্বেও কম লিখেছিলেন। যা লিখেছিলেন, তাও ছিল তাঁর নিজেরই জীবন নিয়ে। আর তাঁর ৩৫ থেকে ৫০-৫২ বছর বয়স পর্যন্ত ১৬ বছর তাঁর প্রধান শিল্প-আকার, আখ্যান, গঠনে তিনি ক্লান্তিহীন এক দৈত্য। বছর ১০ পরে আরেকবার ফিরে এসেছিল আখ্যানের আকার নিয়ে তাঁর মগ্নতা_মাঝখানে ফাঁক দিয়ে দিয়ে 'ডেথ অব আইভ্যান ইলিচ', 'ক্রেউৎসার সোনাটা', 'রেজারেকশন' (উপন্যাস) ও শেষ অপ্রকাশিত 'হাজি মুরাদ'। এই দ্বিতীয় পর্বে কি তিনি মাপতে চাইছিলেন আখ্যানের শিল্পসীমায় মানুষের আধ্যা@ি@@@ক সংকটকে কি অন্তর্গত করা যায়? বাস্তবের স্থানান্তর ঘটিয়ে বা না ঘটিয়ে?
তিন.
তলস্তয়ের সমস্যা কী ছিল যে তিনি তাঁর ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত স্থির করতে পারছিলেন না, তিনি কী লিখবেন। এর ভেতর তিনি তুর্গেনেভকে একটা চিঠিতে লিখেছিলেন, 'আমি সাহিত্য-চর্চার যোগ্য নই, তাই লিখব না।' তুর্গেনেভ সস্নেহে জবাব দিয়েছিলেন, 'কী আর বলব, আমি তো অতীত। আমাকে ভাঙিয়ে তো তোমার চলবে না, কিন্তু তুমি তো ভবিষ্যৎ। তোমাকে না ভাঙিয়ে আমার চলবে কী করে? সুতরাং লেখো। তুমি লেখা ছাড়া আর কিছুই করতে পারো না।'
তুর্গেনেভ (১৮১৮-৮৩) তখন তো খ্যাতির তুঙ্গে। গোগোলের মৃত্যুতে একটা লেখা লিখেছিলেন বলে অন্তরিন থাকেন। দাসপ্রথায় কড়া বিরোধী ছিলেন। ১৮৫৪তে ছাড়া পেয়ে ইউরোপে চলে যান, সেখানেই, বেশির ভাগটাই ফ্রান্সে, থাকতেন। ফ্লবেয়ার, জেরসি জর্জ স্ট্যান্ড_এঁদের বন্ধু ছিলেন। রাশিয়া ও ইউরোপের ভেতর তিনি ছিলেন সেতু। ১৮৬২-র মধ্যে তাঁর সবচেয়ে নামকরা লেখাগুলো লেখা হয়ে গেছে। তিনি তলস্তয়কে এত উৎসাহ দিচ্ছেন কেন?
কারণ তলস্তয় যখন ককেসাস ও ক্রিমিয়ায় যুদ্ধ করছেন, তখন তাঁর 'চাইল্ডহুড' বেরিয়ে গেছে। এ বইটি নিয়েই ১৯৩৯-এ টমাস মান তাঁর একটি প্রবন্ধে লিখেছিলেন, "তলস্তয় নিজেই তো বলেছেন, 'ছদ্ম বিনয় না করে বলা যায় এটা ইলিয়াডের মতো কিছু।' এটা শুধুই একটা সত্যের সংক্ষিপ্ততম উচ্চারণ। বাইরে কিছু কারণে হয়তো তুলনাটি আরো মানানসই হয় তাঁর সাবালক বয়সের দানবতুল্য লেখা 'ওয়ার অ্যান্ড পিস'। কিন্তু তিনি যা কিছু লিখেছেন, তার যেকোনোটি প্রসঙ্গেই এ কথা বলা যায়। তাঁর লেখার শুদ্ধ আখ্যানশক্তি অতুলনীয়।...সেই শক্তি প্রত্যেক স্পর্শ, যে গ্রহণ করার যোগ্য (কারণ এমন দিতে পারার মতো তো দ্বিতীয় কেউ নেই) সে শক্তির নতুন-নতুনতর প্রকাশের স্ফুরিত ধারায়, সৃষ্টির আদিম ইন্দ্রিয়তায় আর স্বাস্থ্যের নিষ্ণাত হয়ে উঠবে।" স্বয়ং সম্রাট তাঁর 'সেবাস্তোপল কাহিনী' পড়ে এতই মুগ্ধ হন যে তিনি এর ফরাসি অনুবাদ প্রকাশের আদেশ দেন। আর যুদ্ধের সেই বাস্তবিয়নে সম্রাজ্ঞী এতই দীর্ঘকাল ধরে কাঁদেন যে সেই কান্না তলস্তয়ের খ্যাতি বাড়াতেই থাকে।
কিন্তু রাশিয়ার সেন্সর বোর্ড তাতে গলেনি। সেবাস্তোপলের পরের কিস্তি এত কাটাকুটি ও ছিন্নভিন্ন আকারে 'কনটেমপোরারি' কাগজে বেরোল যে তলস্তয় নিজেই যেন তা চিনতে পারেন না। এই কিস্তিটাতে তলস্তয় লিখেছিলেন রাশিয়ার সাধারণ সৈন্যদের দুর্বহ জীবনের কথা এবং সেন্সর আটকে দেবে ভয়েই দ্বিতীয় খসড়া করেছিলেন একটু রেখে-ঢেকে। তাতেও কিছু আটকানো গেল না। 'কনটেমপোরারি'র সম্পাদক ছিলেন রাশিয়ার খ্যাতিমান কবি, নেক্রাসভ। তলস্তয়ও পার্টনার হয়েছিলেন। সেন্সর কী কাণ্ড করেছে তা জানিয়ে নেক্রাসভ যে চিঠি দিয়েছিলেন তলস্তয়কে, ক্রিমিয়াতে, সেটা পড়লে বোঝা যায় রুশ সাহিত্যে তলস্তয় তখনই কতটা আশা-ভরসা হয়ে উঠছেন একটু বিদগ্ধ পরিবেশে। নেক্রাসভ লিখছেন_"তোমার লেখা হারিয়ে যাবে না।...তুমি যেভাবে 'সত্য'কে আমাদের সাহিত্যের অবিমিশ্র উপাদান করে তুলছ, সেটা আগে কখনোই ঘটেনি। আমি এখনকার আর কোনো লেখকের কথা জানি না, যে তোমার মতো পাঠককে বাধ্য করতে পারে সহৃদয়-হৃদয়সংবেদী হতে, ভালোবাসা ও সমানুভূতি বোধ করতে।...তোমার আবির্ভাব ঘটেছে এমন এক শুভক্ষণে' যখন সবচেয়ে গোঁড়া যাঁরা তাঁরাও বাধ্য হচ্ছেন তোমাকে নিয়ে উচ্চাশা জানাতে।"
এই চিঠির তারিখ ২৮ আগস্ট ১৮৫৫। এক মাসও কাটেনি। ১৭ সেপ্টেম্বর ৫৫ তলস্তয় তাঁর ডায়রিতে লিখছেন, "কাল খবর পেলাম আমার 'এক রাত্রি' লেখাটা বেরিয়েছে সেন্সরের কাটাকুটি নিয়ে। মনে হচ্ছে, খোঁচররা আমার হদিস পেয়েছে।...সাহিত্যই আমার প্রধান ও একমাত্র বৃত্তি। অন্য সব ঝোঁক ও কাজের বাইরে। আমার লক্ষ্য সাহিত্যিক খ্যাতি।"
তলস্তয়ের ডায়েরির একটা সংক্ষেপিত ও সম্পাদিত সংস্করণ একসময় বেরিয়েছিল তলস্তয়বিদ, বিদ্বান আর এফ ক্রিশ্চিয়ানের সম্পাদনায়। তার আগে আমি তলস্তয়ের ডায়েরি পড়িনি। সেই ৯৪-এর সংস্করণ সংক্ষেপিত ও সম্পাদিত বলেই সহজ হয়েছিল এটা ধরতে পারা, কী দৈত্যের মতো প্রস্তুত করলেন তলস্তয় নিজেকে! দুর্ভাগ্যত, তলস্তয়ের জুয়া খেলা, মদ খাওয়া, নারীবিলাস, খ্রিস্টধর্ম উদ্ধার, দাসমুক্তি, সত্যাগ্রহ ইত্যাদি আমাদের দেশে বেশি পরিচিত। মহাত্মা গান্ধী তলস্তয়ের আদর্শ ও কাজ থেকে নিজের আদর্শ ও কাজ খুঁজে নিয়েছিলেন_এমন কথার ফলে আমরা হয়তো তাঁর গল্প-উপন্যাস নিয়ে ততটা আগ্রহ দেখাইনি। কিন্তু ওই সম্পাদিত সংস্করণটিতে তাঁর আত্মপ্রস্তুতিটাই প্রধানতম দৃশ্য হয়ে ওঠে। প্রায় সব ইউরোপীয় সাহিত্য, বিশেষ করে আখ্যান, ঘেঁটে পড়া। পড়া, পড়া আর পড়া। দুই খণ্ডের বড় সংস্করণটিতে তাঁর পড়ার পদ্ধতিটাও বোঝা যায়। বিশেষত তার কোনো বই পড়লে, তা থেকে নোট রাখতেন। ৪০ বছর বয়সের পর গ্রিক, জার্মান, ইতালিয়ান ও শেষে হিব্রু ভাষা শেখেন কিছু বই তিনি লেখকের ভাষায় পড়তে চান বলে। তাঁর ককেসাস ও ক্রিমিয়া যুদ্ধের অভিজ্ঞতা, তাঁর নিজের যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা, সাধারণ সৈনিক হিসেবে তাঁর ওপর যে অত্যাচার হতো সেই কথা, সাধারণ সৈন্যরা ফুটো নৌকায় নদী পার হতে বাধ্য হতো, ফলে জলে ডুবে মারা যেত, তলস্তয়ও ডুবতে বসেছিলেন, ১৮১২-র যুদ্ধের পর সৈন্যদের অস্ত্র বদলায়নি, অফিসারদের ইউনিফর্ম বদলেছে, গরিবদের লেখাপড়া শেখানো ও তাদের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেওয়ার জটিলতা, সেনাপতিদের ভেতর কোন্দল, যৌনসঙ্গ, যৌন অসুখের ভোগান্তি_এর প্রতিটি বিষয়ের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ আছে, তিনি কী করে জড়িয়ে ছিলেন তার কারণসহ। তলস্তয়ের প্রধান আখ্যানগুলোতে তাঁর কোন অভিজ্ঞতা কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে, তার একটা তালিকা তৈরি করা খুব একটা শ্রমসাধ্য কাজ নয়। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়াটি খুঁজে বের করা খুবই কঠিন যে কোনো একটি ঘটনা প্রথমে কিভাবে তাঁর ডায়েরিতে আসছে, আর কিছু 'সমতুল্য' ঘটনা জড়ো হয়ে তলস্তয়কে ওই বিষয়ে একটি সামগ্রিক ধারণার দিকে কিভাবে নিয়ে যাচ্ছে, ঘটনার সমতুল্যতা তলস্তয় কোন বিচারে নির্ণয় করছেন, সেই সামগ্রিক ধারণাটিকে তলস্তয় একটা কর্মসূচির আকার দিচ্ছেন_কখনো কখনো লিখেও, সেই কর্মসূচি অনুযায়ী কাজ গুছিয়ে নিচ্ছেন। কোনো এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতে কোনো এক আখ্যানে সেই ঘটনাটি উপন্যস্ত হচ্ছে। তলস্তয় পৃথিবীর কাছে সাহসী তাত্তি্বক ও তত্ত্বের সাহসী রূপকার বলেই বেশি পরিচিত। তিনি তাঁর নিজের কাছে পরিচিত ছিলেন কোন পরিচয়ে? এই আত্মপরিচয় খুব একটা সোজা কিছু নয়। এই আত্মপরিচয়ের ভেতর লুকানো থাকতে পারে ছলনা, দেখানো হতে পারে কোনো সামর্থ্যহীন ইচ্ছা। আত্মপরিচয় একটিই মাত্র আকার নয়। কঠিনও নয়, তরলও নয়। আলো, কুয়াশা, ঋতু_যা কিছু আমাদের দেখার বাধা_ওজন, ইনফ্রা রে, সেসব আত্মপরিচয়ের আকারটাকে পরিবর্তমান রাখে।
চার
তাঁর প্রথম উপন্যাস 'স্টোরি অব চাইল্ডহুড' লিখেছিলেন ককেসাসে। ১৮৫২-র ২৭ মে তিনি উপন্যাসটির তৃতীয় খসড়া শেষ করেই চতুর্থ খসড়া শুরু করেন। ৩০ মে তাঁর এক প্রবীণ আত্মীয়াকে চিঠিতে লেখেন, 'আমি কোনো উচ্চাশার বশে লিখছি না। লিখি, ভালো লাগে বলে। কাজ করলে আমার আনন্দ হয়, মনে হয় কিছু একটা করছি এবং আমি কাজ করছি।' সেদিনই তিনি তাঁর ডায়েরিতে লিখছেন, 'অন্য রুশ লেখকদের মতো আমার কি ক্ষমতা আছে লেখার? নিশ্চয়ই নয়।' তিন দিন পরই লিখছেন, 'আমার ক্ষমতা সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই। মনে হয় আমার ধৈর্য, দক্ষতা ও যথাযথতা কম। তার ওপর আমার স্টাইল, অনুভূতি ও চিন্তার খুব ঐশ্বর্য নেই। এই শেষ কথাটায় আমি আমার মতো পাকাপাকি দিচ্ছি না।' চতুর্থ খসড়া সংশোধন করতে করতে 'নিশ্চয়ই কিছু বানান ভুল থেকেই গেল' বলে ক্লান্ত শরীরে তিনি তাঁর সামরিক জীবন নিয়ে নতুন গল্প শুরু করলেন, 'দ্য রেইড'।
'চাইল্ডহুড' তিনি পাঠিয়েছিলেন কনটেমপোরারি রিভিউ-এ। পাঠিয়েছিলেন ৩ জুলাই। ছদ্মনামে_'এল এন' এই সংক্ষিপ্ত পরিচয়ে। তাঁর ২৪ বছর পূর্ণ হলো ২৬ আগস্ট, ১৮৫২। ডায়েরিতে লিখলেন, '২৪ বছর বয়স হলো অথচ আমি এখনো কিছু করলাম না।' পরদিনই কাগজ থেকে চিঠি এল, উপন্যাসটি তারা ছাপছে, এর পরের লেখাগুলোও ছাপবে। কাগজের কপি তলস্তয় পেলেন ৩১ অক্টোবর।
অনেক পরে তিনি বুলগাকভকে বলেছিলেন, এই লেখাটি নিয়ে, 'আমার কী রকম ধারণা হয়ে গিয়েছিল, আমার আগে কেউ সেই যুগে বিস্ময়কর কবিতা অনুভবও করেননি, প্রকাশও করেননি।' তলস্তয় কি তাঁর চিন্তায়, কি তাঁর টেকনিকে আন্তরিকতা ও সততার বিনিময়ে কোনো চমৎকার কখনো দেখাতে চাননি। এটা তাঁর কাছে খাঁটি হিরের মতো স্বচ্ছ অথচ কৌণিকতায় সত্যময় ছিল যে তিনি জীবনে নানা দিক বিশ্বস্ততার সঙ্গে লিখবেন এবং সে বিশ্বস্ততা কোনো প্রথা মেনে নেয় না। তাঁর বর্ণনার ভাষাতে তিনি উপমা ব্যবহার করতেন না, যদি না সেই উপমা ছাড়া ভঙ্গিটা লেখাই না যায়। কারণ উপমার মধ্যে একটা কিছুকে জোর দেওয়ার মিথ্যা ঘটার ভয় আছে। এই 'চাইল্ডহুড'-এর এক খসড়ায় তিনি লিখেছিলেন, 'আমি তো কোনো দিন প্রবালের মতো ঠোঁট দেখলাম না, দেখলাম ইটের রং, মরকত মণির মতো চোখও দেখলাম না, দেখলাম ধোপাবাড়ির নীল।' এটা বাইরের কোনো ব্যাপার নয়, লেখক-ব্যক্তিত্বের একেবারে ভেতরের নিরিখ_কোন শব্দ সত্যের কত কাছাকাছি। কোনো পুনরাবৃত্তির ভয়ে বা কাব্যিকতার লোভে তলস্তয় কখনো শব্দ বাছেননি। খসড়ার পর খসড়া যে তিনি করতেন, সে শ্রমের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল যথাশব্দটি খুঁজে বের করা। শব্দ নিয়ে এই বাতিকের জন্য প্রকাশকের সঙ্গে তাঁর গোলমাল হয়েছে_প্র্রুফে এত কাটাকুটি কেন? গল্প বলার সাবেকি পদ্ধতিতে তিনি বিশ্বাসই করতেন না_চরিত্র সম্পর্কে প্রথমে বলা, তারপর পরিবেশের বর্ণনা, তারপর ঘটনা। তলস্তয় মনে করতেন, ঘটনাটা বলতে বলতে তার ফাঁকে ফাঁকে চরিত্র বা পরিস্থিতির কথা আসবে। এটা কোনো তুচ্ছ তর্ক ছিল না_এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল তাঁর উপন্যাসসত্তা, উপন্যাসন সম্পর্কে তাঁর ধারণা।
উপন্যাসকে রহস্যমুক্ত করতে আর উপন্যাসকে যোগক্রিয়া বানাতে তাঁর আপত্তি ছিল এত গভীর যে তাঁর ইন্দ্রিয়গুলোর ওপর তাঁকে সম্পূর্ণ নির্ভর করতে হতো। যেন লেখকের ইন্দ্রিয়ই অ্যাটলাসের সেই কাঁধ। তাঁর দুই সরু চোখ ছিল ইগলের মতো অভ্রান্ত, তাঁর ছোঁয়া ছিল গোলাপের পাপড়ির মতো স্পর্শকাতর, তাঁর ঘ্রাণশক্তি ছিল বাঘের মতো। তিনি চষা মাটির গন্ধ আর অনাবাদি মাটির গন্ধ আলাদা করে শুঁকতে পারতেন, জানলার ঠাণ্ডা কাচের ওপর হাতের চেটোর স্পর্শের শিহরণ টের পেতেন, ঘোড়ার পেছনে পায়ের কোনো একটি পেশিকম্পন দেখতে পেতেন।
ছদ্মনামে লেখা তাঁর এই প্রথম উপন্যাস 'চাইল্ডহুড' একই সঙ্গে সরল, প্রায় প্যাস্টোরাল ও নির্বেদী, প্রায় মাইনোটরের গুহায় নামা যেন। কোনো আবিষ্কারের বাহাদুরি নেই, বরং প্রত্যাখ্যান আছে স্পষ্ট। কৌশলের ও দক্ষতার বদলে আছে আন্তরিকতা, সংক্রমণশীল আন্তরিকতা। বিশেষজ্ঞতার বদলে একেবারে নিখাদ খনিজ। কে লিখেছেন 'চাইল্ডহুড', তা না জেনেই কাগজের সম্পাদককে তুর্গেনিভ লিখেছিলেন, 'তাঁকে বলো, যদি তিনি শুনতে চান যে আমার দরজা তাঁর জন্য খোলা, তাঁকে অভিনন্দন ও প্রশস্তি।' দুদিনস্কিন রিভিউ করেছিলেন, 'তাঁর প্রথম লেখা যদি হয় এটা তাহলে এক নতুন প্রতিভাকে আমরা স্বাগত বলতে পারি।' আলমাজভ লিখেছিলেন আরেক রিভিউয়ে, 'প্রায় বিশ্বাস করতে হচ্ছে রুশ সাহিত্য সত্যি আবার বেঁচে উঠছে।' কিছু দন পর সাইবেরিয়ার গভীর থেকে আরেক তরুণ লেখক, ফিয়োদর মিখাইলেভিচ দস্তয়েভস্কি, বয়সে তলস্তয়ের চাইতে ৯ বছরের বড়, সদ্য নির্বাসন থেকে ফিরে এসেছেন এবং তাঁকে বাধ্য করা হয়েছে সৈন্যবাহিনীতে ঢুকতে, 'চাইল্ডহুড' পড়ে তাঁর এক বন্ধুকে বলেছিলেন, 'লিও তলস্তয়কে আমি কী বিপুল পছন্দ করে ফেলেছি, কিন্তু আমার মনে হয় অন্য রকম কিছু বেশি লেখা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না (কিন্তু এটা আমার ভুলও হতে পারে)।'
এই সব জেনে যুদ্ধক্ষেত্রে বসে তলস্তয় তাঁর ডায়েরিতে লিখছেন, 'খারাপ কিছু লিখতে আমার আত্মসম্মানে বাধবে। কিন্তু আমি জানি না, সত্যিকারের ভালো কিছু লেখার শক্তি আমার আছে কি না (২৬ নভেম্বর ১৮৫২)।'
সেটা জানতে তখন, সেই যুদ্ধক্ষেত্রেই তিনি লিখতে শুরু করেছেন 'দ্য রেইড', 'দ্য নভেল অব এ রাশিয়ান লর্ড', 'বয়হুড'। গল্প লেখার প্রয়োজন তাঁর এতই প্রবল বোধ হচ্ছিল যে তিনি ভাবছিলেন যত গল্প মাথায় আছে সব কি একটা জীবনে লেখা যাবে!
============================
স্মরণ- 'কাউন্ট লিও তলস্তয়ের মৃত্যু-শতবর্ষের শ্রদ্ধাঞ্জলি' by বেলাল চৌধুরী  ইতিহাস- 'বাংলায় সিপাহি বিদ্রোহ' by রিদওয়ান আক্রাম  শিল্প-অর্থনীতি 'এখন প্রয়োজন ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের' by সৈয়দ মাহবুবুর রশিদ  রাজনৈতিক আলোচনা- 'গণতন্ত্র : চাইলেই ধরা দেয় না' by এমাজউদ্দীন আহমদ  আন্তর্জাতিক- 'কোরীয় অঞ্চলে নতুন উত্তেজনা কত দূর যেতে পারে?' by জগলুল আহমেদ চৌধূরী  আলোচনা- 'মানসিক নির্যাতনের প্রতিকার কোথায়' by আশরাফ-উল-আলম  আসুন, ওদের দিকে মমতার হাত বাড়িয়ে দিইঃ গোলটেবিল বৈঠক।এইচআইভি/এইডস : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সেবা ও মানবাধিকার  আলোচনা- 'আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস'  আলোচনা- 'নেত্রীর অশ্রুপাত, হরতাল এবং অ্যাকশনে বিএনপি' by সঞ্জীব রায়  আলোচনা- 'আরো আলোকিত হোক জনশক্তি রপ্তানি খাত'  আলোচনা- 'কানকুন সম্মেলনে আমাদের প্রত্যাশা' by শিরীন আখতার  আলোচনা- 'জনসংখ্যার বিপদ ও পরিত্রাণের পথ'  শিল্প-অর্থনীতি 'বিনিয়োগ ও মূল্যস্ফীতি:দুর্ভাবনার বিষয়' by ড. আর. এম. দেবনাথ  গল্পসল্প- 'হায়রে নাড়ি ছেঁড়াধন' by শিখা ব্যানার্জী  গল্পসল্প- 'জননী ও জন্মভূমি' by শুভ রহমান  গল্পালোচনা- ''বিভীষণ' বিদায় ও হরতাল সমাচার' by শুভ রহমান  খবর- হরতালের বিরুদ্ধে একজোট, উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা  আলোচনা- 'হজ ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে কিছু কথা' by এয়ার কমোডর (অব.) মুহম্মদ জাকীউল ইসলাম


দৈনিক কালের কণ্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ দেবেশ রায়


এই ইতিহাস'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.