ভারতে পার্লামেন্ট অচল ৬৩ কোটি রুপি ক্ষতি

টেলিযোগাযোগ খাতে দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে ভারতের পার্লামেন্টে গতকাল বুধবারও অচলাবস্থা ছিল। গত আট কার্যদিবস ধরে চলা এই অচলাবস্থায় ৬৩ কোটি রুপি ক্ষতি হয়েছে। সে দেশের পার্লামেন্ট প্রশাসন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে গতকাল এই দুর্নীতির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন কংগ্রেস পার্টির সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। গতকাল ভারতের সুপ্রিম কোর্টও এই দুর্নীতির প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জারি করা একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ বাতিল করেছেন।
রাজধানী নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সোনিয়া বলেন, ‘টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে চলমান বিতর্কে মনমোহন সিংকে কোনোভাবে দোষারোপ করা চলে না। প্রধানমন্ত্রী পদে থাকা এ ধরনের সততাসম্পন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এভাবে আঙুল তোলা লজ্জাজনক।’ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিরোধী দলের দোষারোপের জবাবে এ কথা বলেন সোনিয়া।
টেলিযোগাযোগ খাতের দুর্নীতি তদন্তের ব্যাপারে মনমোহন সিংয়ের ভূমিকাসংক্রান্ত এক মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মত বদলেছেন। গত সপ্তাহে আদালত মনমোহনের সমালোচনা করেন এবং কেন তিনি এই তদন্ত শুরু করতে ১৬ মাস দেরি করেছেন তার কারণ দর্শাতে বলেন। কিন্তু গতকাল ওই কারণ দর্শানোর নোটিশ বাতিল করা হয়। বিরোধীদলীয় এক পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) তদন্তের ওই অনুরোধ করেছিলেন।
গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতে বলেন, মনমোহন কোনো ভুল করেননি। আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই এবং কোনো অপরাধের ঘটনায়ও তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়নি। বরং আদালত জানতে চাইছেন, ওই তদন্তের অনুরোধ রক্ষায় তাঁর ভূমিকা কী ছিল।
ভারতে ২০০৮ সালে দ্বিতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে। দেশটির মহা হিসাব নিরীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ (সিএজি) বিভাগ গত সপ্তাহে জানায়, যথাযথ প্রক্রিয়ায় ওই লাইসেন্স না দেওয়ায় সরকার চার হাজার কোটি ডলারের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ইচ্ছাকৃত ও অস্বচ্ছ পন্থায় নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ওই লাইসেন্স দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ইতিমধ্যে পদত্যাগ করেছেন টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এ রাজা।
টেলিযোগাযোগ খাতের বিশাল এই দুর্নীতি যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি) মাধ্যমে তদন্ত করার দাবি করছে বিরোধী দল। গত ৯ নভেম্বর শীতকালীন অধিবেশন শুরুর পর থেকেই এই দাবিতে তারা পার্লামেন্ট অচল করে রেখেছে। এতে করে বন্ধ হয়ে গেছে পার্লামেন্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম। আটকে গেছে অনেক আর্থিক বিল। অধিবেশন শুরুর প্রথম দিনের পর এ পর্যন্ত এক দিনও পূর্ণদিবসের কার্যক্রম সম্পূর্ণ হয়নি। কিন্তু যৌথ কমিটি গঠন না করার বিষয়ে অনড় কংগ্রেস। তারা বলছে, পৃথক সংস্থার মাধ্যমে ইতিমধ্যে অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় পার্লামেন্টের দুই কক্ষ লোকসভা ও রাজ্যসভা এবং পার্লামেন্ট-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০১০-১১ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রয়েছে ৫৩৫ কোটি রুপি। বছরে তিনবার পার্লামেন্ট অধিবেশন বসে। গত পাঁচ বছরে গড়ে বার্ষিক ৬৮ দিন পার্লামেন্টের কার্যক্রম চলেছে। এই হিসাবে পার্লামেন্টে একটি অধিবেশনের দৈনিক গড় ব্যয় প্রায় সাত কোটি ৮০ লাখ রুপি।
দেশের করদাতাদের এই অর্থের অপচয় ও কালক্ষেপণের জন্য ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল পরস্পরকে দোষারোপ করছে। রাজ্যসভার কংগ্রেসের সদস্য অশ্বিনী কুমার অভিযোগ করেন, আলোচনায় অংশ না নিয়ে বিরোধী দল পার্লামেন্টকে অচল করে রেখেছে। সরকার সব বিষয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু বিরোধী দল পার্লামেন্টকে কার্যকর হতে দিচ্ছে না। তিনি বলেন, জেপিসির মাধ্যমে তদন্ত করার দাবি অযৌক্তিক।
বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এমপি রাজীব প্রতাপ রুডি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী একজন অর্থনীতিবিদ। জেপিসির দাবি মেনে না নেওয়ায় পার্লামেন্টের যে ক্ষতি হচ্ছে, তা তাঁর বোঝা উচিত। কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (সিপিআই) নেতা গুরুদাস দাসগুপ্ত বলেন, তাঁর দল চায় একটি কার্যকর পার্লামেন্ট দেখতে। কিন্তু সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিরোধীদের দাবি তাদের কনে পৌঁছাচ্ছে না।

No comments

Powered by Blogger.