যেমন আছে ৩২ নম্বর

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ই আগস্ট সরকার পতনের দিন আক্রান্ত হয়েছিল ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক সময়ের বাসভবন এই বাড়িটি স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছিল। ৫ই আগস্টে হামলা-ভাঙচুরে এ বাড়িটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেতরে থাকা সব স্মারক-সামগ্রী ভস্মীভূত হয় আগুনে। ঘটনার দেড় মাস পরও একই অবস্থায় আছে বাড়িটি। কর্মচারীদের কেউ আর এখন সেখানে যান না। গতকাল দুপুরে ওই বাড়ির সামনে গেলে নিরাপত্তার দায়িত্বে কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখানে থাকা মামুন নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি ওই এলাকায় ১৯ বছর ধরে পানি বিক্রি করেন। এখনো এখানে আছেন। সরকারি নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টরা তাকে বাড়িটি দেখে রাখতে বলেছেন। এজন্য কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে নিষেধ করেন। এ ছাড়া কেউ খুব একটা আসেন না। বাড়ির ভাঙা ফটকটি ভেতর থেকে লাগানো। ভেতরে দেয়াল ঘেঁষে ঘাস, লতাপাতা বেড়ে উঠছে। সাধারণ মানুষ যাতে ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তারকাঁটা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ভাঙা ফটক ও দেয়ালে।

পকেট গেট দিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা যায় বাড়িতে রাখা সব জিনিসপত্র পুড়ে মেঝেতে ছাই-কয়লার স্তূপ হয়ে আছে। এগুলো আর পরিষ্কার করা হয়নি। বাড়ির নিচতলার প্রথম কক্ষে ইতিহাস লেখা ছবি ও প্রতিকৃতি ছিল এগুলো আর নেই। অগ্নিসংযোগে দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়েছে। সিলিং ফ্যানগুলো দুমড়ে-মুচড়ে গেছে আগুনের তাপে। আগুনে পুড়েনি এমন কিছু কাগজপত্র ছড়ানো ছিটানো বিভিন্ন স্থানে। সিঁড়ি বেয়ে দু’তলায় উঠলে সেখানেও ধ্বংস চিহ্ন দেখা যায়। আগুনে সবকিছু পুড়ে গেছে। ধোঁয়া ও আগুনে দেয়াল কালো হয়ে আছে। তৃতীয়তলায়ও একই চিত্র। সেখানে কিছু পুরাতন জিনিসপত্র ছড়িয়ে আছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ৩২ নম্বর বাড়ির সামনের সড়কটি প্রায় সময়ই বন্ধ থাকতো। বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন হতো বাড়ির সামনে। এখন এই সড়কটি উন্মুক্ত। লেকপাড়ে স্থাপন করা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হতো। ৫ই আগস্টের দিন প্রতিকৃতিতে সবুজ রঙ মেখে দেয়া হয়। এ এলাকায় এখন দিনের বেলা গাড়ি পার্কিং করেন আশপাশের লোকজন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এলাকার তরুণরা রাতে এই সড়ক এবং লেকপাড়ে বসে আড্ডা দেন। অনেকে সংগীতের আসরও বসান।
৫ই আগস্টে সরকার পতনের পর ১৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানানোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ওইদিন ছাত্র-জনতা প্রতি বিপ্লবের আশঙ্কায় ওই এলাকায় অবস্থান নিলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আর ওই বাড়ির দিকে যেতে পারেননি। যারা যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তাদের প্রধান সড়কে আটকে দেয়া হয়। মারধরও করা হয় কয়েকজনকে। ওইদিন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী শ্রদ্ধা জানাতে গেলে তাকেও ফিরিয়ে দেয়া হয়। এরপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আর ৩২ নম্বরের দিকে যাচ্ছেন না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বাড়িটি সিলগালা করে রাখা হয়। ১৯৮১ সালে তার কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসলে বাড়িটি তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তিনি জাদুঘর বানানোর উদ্যোগ নেন। ১৯৯৪ সালের ১৪ই আগস্ট জাদুঘরটি উদ্বোধন করা হয়। পরে পাশের প্লটে একটি নতুন ভবন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কার্যালয় করা হয়। ৫ই আগস্ট এই ভবনটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.