ফেরত যাচ্ছে শতাধিক প্রকল্প by মো. আল-আমিন

প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। শেখ হাসিনা সরকারের নেয়া প্রকল্পগুলোর ত্রুটি-বিচ্যুতি পুনরায় পর্যালোচনা করছে পরিকল্পনা কমিশন। আর রাজনৈতিক বিবেচনায় নেয়া প্রকল্পগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে আলাদাভাবে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় চূড়ান্ত হওয়া প্রকল্পগুলো আবারো যাচাই করা হচ্ছে। নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রেও গ্রহণ করা হচ্ছে একই নীতি। ফেরত পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের শতাধিক নতুন প্রকল্প। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গিয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ নতুন প্রকল্পগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রকল্পগুলোর কোনো অংশ পরিবর্তন কিংবা সংযোজন-বিয়োজন লাগলে ডিপিপি সংশোধনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পুনর্যাচাইয়ে যেসব প্রকল্পে ত্রুটি পাওয়া যাবে না, সেগুলো উপদেষ্টার নজরে আনার নির্দেশনা রয়েছে।

সূত্র আরও বলছে, পরিকল্পনা কমিশনের বিভিন্ন বিভাগ থেকে শতাধিক প্রকল্প বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ থেকে ৩৫ থেকে ৪০টি প্রকল্প, কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ২০-২২টি প্রকল্প, শিল্প ও শক্তি বিভাগ থেকে ১৫টি প্রকল্প এবং আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগ থেকে ১০-১৫ প্রকল্প ফেরত পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পগুলোর ত্রুটি-বিচ্যুতি পুনরায় পর্যালোচনা করার পর সংশোধন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা কমিশনের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বিদায়ী সরকারের আমলে চাপে পড়ে ঠিকমতো পর্যালোচনা না করেই অনেক প্রকল্প একনেকে পাঠানো হয়েছে। একনেকে পাঠানো পাস না হওয়া প্রকল্পগুলো আবারো ফেরত পাঠানো হচ্ছে। সেগুলো আবারো যাচাই করা হবে। দুর্বলতা আছে কিনা দেখা হবে। এসব প্রকল্পের সঠিক পর্যালোচনা করলে খরচ অনেক কমে আসবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভৌত অবকাঠামো বিভাগ থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে ৮টি প্রকল্প ফেরত পাঠানো হয়েছে। এসব প্রকল্প পুনরায় যাচাই-বাছাই করে পাঠাতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন প্রকল্পগুলো আবারো পর্যালোচনা করা হবে। শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রকল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে তিনি বলেন, গ্যাস অনুসন্ধান প্রকল্পগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এতদিন কার স্বার্থে এই ধরনের প্রকল্পগুলো নেয়া হয়নি জানি না। গ্যাস অনুসন্ধান প্রকল্পগুলো নেয়া হলে আমাদের বেশি দামে গ্যাস আমদানি করার প্রয়োজন হতো না।

ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) সোলেমান খান বলেন, আগের সরকারের আমলে গ্রহণ করা প্রকল্পগুলোর প্রয়োজনীয়তা কতোটুকু এবং প্রকল্পের টাকা কোন জায়গা থেকে আসবে, এগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। আসলে বোঝার জন্যেই এটা করা দরকার।

এদিকে গত বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বিগত সরকারের সময়ে একনেক সভায় বিপুলসংখ্যক প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্পও থাকতো। এখন সেসব যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। দেশীয় অর্থায়নের চেয়ে বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া যাবে এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেয়া হবে বলেও জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.