জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ ও আহত তাদেরকে রাষ্ট্রীয় উপাধি দিতে হবে : বুলবুল
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মুরাদপুর জুরাইন এলাকায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের শ্যামপুর অঞ্চলের উদ্যোগে আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় ও আর্থিক অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমরা রাষ্ট্রের কাছে দাবি জানাই ফ্যাসিস্ট সরকার এবং তাদের দোসররা বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার কোটি বিদেশে পাচার করেছে সেই টাকা দেশে ফিরিয়ে এনে শহীদ এবং আহতদের পরিবারের সদস্যদের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে লাগাতে হবে। আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ছাত্র রাজনীতি বন্ধ নয় বরং সংস্কার করতে হবে। ছাত্রদের কল্যাণে এবং দেশের কল্যাণে ছাত্র রাজনীতিকে ঢেলে সাজানোর এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ডকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। আমরা এটাকে অন্যায় এবং ফ্যাসিবাদের অংশই মনে করি। যারা সুকৌশলে এখনো ৫ আগস্টকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড করছে, এখনই তাদের মূলোৎপাটন করতে হবে।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ও জোন পরিচালক সৈয়দ জয়নাল আবেদীনের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য আব্দুর রহিম জীবন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শূরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার জসীম উদ্দীন, খন্দকার ইমদাদুল হক, মো: মহিউদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার হাবিবুর রহমান, আব্দুর রব ফারুকীর, আতিক চৌধুরী, নওশাদ আলম ফারুক, মাওলানা নেছার উদ্দিন ও কবিরুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
প্রধান অতিথি আরো বলেন, জুলাই আন্দোলনের শহীদ ও আহত ক্ষতিগ্রস্ত সকলকে পুনর্বাসন করতে হবে। রক্ত সাগর পাড়ি দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে, তার ফলে আমরা একটি মুক্ত স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি, মত প্রকাশের সুযোগ পেয়েছি। রাষ্ট্রীয় সকল শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট অপশক্তি ছাত্র জনতার আন্দোলনকে ব্যর্থ করে দিতে চেয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ব্যর্থ করার সকল রকম অপচেষ্টা করেও এই জুলুমবাজ ফ্যাসিস্ট সরকার পার পায়নি। ৫ আগস্ট তারা পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। নিপীড়ন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশে শেখ হাসিনা ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ কায়েম করেছিল। আজকের ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে সেই চেপে বসা ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছে। আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সন্তানেরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে পরিণত হয়েছে।
নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জুলুম নির্যাতন চালিয়ে এদেশকে বসবাসের অযোগ্য ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে সাংবিধানিক সকল প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। বিচারব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে বিচারের নামে অবিচার শুরু করেছিল। তারা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে জামায়াতের ১১ জন শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করেছে। ১৬ বছরের শাসনামলে জামায়াতের ৫০০ জন নেতাকর্মীকে শহীদ করেছে। ২০ হাজার মিথ্যা মামলা দিয়ে লাখ লাখ নেতাকর্মীকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দেয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশের সীমানাকে অরক্ষিত করে সীমান্তে ফেলানীর মতো লাশ উপহার দিয়েছে। এমতাবস্থায় দেশ পুনর্গঠন করতে হবে। দেশপ্রেমিক শক্তির মাধ্যমে সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গুলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।
তিনি বলেন, বিপ্লবোত্তর নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। ৫ আগস্ট থেকেই দুর্বৃত্তদের লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও চাঁদাবাজির প্রতিরোধ এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কোনো উপাসনালায়সহ দেশের মানুষের জান-মালের নিরাপত্তায় জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেছে।
ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দ্যেশ্যে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার এই ঐতিহাসিক বিজয়কে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করলে এর দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে। এদেশের জনগণ এখন সজাগ ও সচেতন রয়েছে কোনো কুচক্রী মহলের আর কোনো দেশ বিরোধী এজেন্ডা আর বাস্তবায়ন করতে দেবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে দেশপ্রেমিক অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেই সকল শহীদ পরিবারের দায়িত্ব নিয়ে তাদের কর্মসংস্থান এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
ডক্টর শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান প্রায় দেড় হাজার শহীদ হয়েছেন এবং আড়াই হাজারের মতো পঙ্গু হয়েছেন। রাষ্ট্র গঠনের জন্য যারা জীবন দিয়েছে এবং পঙ্গু হয়েছে তাদের পরিবারকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র মেরামত করা সম্ভব নয়। শহীদ পরিবারকে সঠিকভাবে গঠন না করে একটি রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে দাড় করানো যাবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ মেরামতের অংশ হিসেবে আমাদের এই শহীদ পরিবারকে বাংলাদেশের কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে তাদেরকে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। গত ১৫ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় ইসলাম বিদ্বেষী বানানো হয়েছে কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিক্ষা খাতে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে অথচ সেখানে কোনো আলেমকে রাখা হয়নি। শিক্ষা কমিটিতে অবশ্যই দুই জন আলেমকে রাখতে হবে। ইসলামের অনুশাসন অর্থাৎ কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণার ভিত্তিতেই দেশ পরিচালিত হতে হবে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ঘাপটি মেরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। আর কোনো বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ছাত্র জনতাকে সাথে নিয়ে তার উচিত জবাব দেবে।
সভাপতির বক্তব্যে আব্দুস সবুর ফকির বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সাথে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের সকল মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন এবং শহীদ হয়েছেন। মা-বোনেরা ঘরে বসে থাকতে পারেনি। তারা আন্দোলনকারীদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় দেশে জুলুমতন্ত্রের অবসান হয়েছে। আওয়ামী গুণ্ডা ও আত্মস্বীকৃত পুলিশ অফিসারদেরকে বিচার করতে হবে। সকল খুনিদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত এদেশের মানুষ শান্তি পাবে না। শেখ হাসিনাসহ সকল অপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এ সময় শহীদ পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিচারণে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় ও কান্নার রোল পড়ে যায়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
জুলাই বিপ্লবে যারা শহীদ ও আহত তাদেরকে রাষ্ট্রীয় উপাধি দিতে হবে : বুলবুল - ছবি : নয়া দিগন্ত |
No comments