সোনামসজিদ স্থলবন্দর: শতকোটি টাকা লোপাট শিমুল-পলাশ সিন্ডিকেটের
যে প্রক্রিয়ায় রাজস্ব লুটপাট
শিমুল এমপি হওয়ার পর থেকে নজিরবিহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি চলেছে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে। বন্দর পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেড, শ্রমিক লীগ নামে সংগঠন, কাস্টমস ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের যোগসাজশে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি ও ওজনে ছাড় দেয়ার ঘটনা অনেক বেড়ে যায়। ফলে আমদানি করা পণ্যের প্রতিটি ট্রাক থেকে সরকার তিন ভাগের মাত্র একভাগ রাজস্ব পায়। নামসর্বস্ব কিছু শ্রমিক সংগঠনের নেতা রাজস্ব ফাঁকিতে সহায়তা করেন। বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, রাজস্ব ফাঁকি, ঘুষবাণিজ্য ও জালজালিয়াতির মাধ্যমে ব্যবসায়ী, কাস্টমস কর্মকর্তা ও বন্দর সংশ্লিষ্টরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
কাস্টমস-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অসাধু ব্যবসায়ীদের সুযোগ করে দিতেই প্রতি গাড়িতে প্রায় চার টন ফলের ওজন কম দেখিয়ে রাজস্ব কর্মকর্তারা গাড়িপ্রতি উৎকোচ নেন ৩০ হাজার টাকা করে। এতে প্রতি গাড়ি থেকে সরকার রাজস্ব হারায় প্রায় এক লাখ ২০ হাজার টাকা। এত লোভনীয় আয়ের উৎস যাতে বন্ধ না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্মকর্তারা প্রায় সময়ই এসব অসাধু আমদানিকারকের শুল্ক ফাঁকির প্রথা চালু রেখে স্বার্থরক্ষা করে চলেছেন। এ ছাড়া বাণিজ্যিক পণ্যের গাড়িতে আরও বেশি পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার জন্য ব্যবসায়ী ও রাজস্ব কর্মকর্তার সমন্বয়ে সোনামসজিদ শুল্ক স্টেশনে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট। স্থানীয় সংসদ সদস্যের ভাই পলাশ এ সিন্ডিকেট পরিচালনার নেপথ্যে ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) নির্দেশনা অনুযায়ী বন্দরে আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ১০ চাকার ট্রাকে ১৮ টনের বেশি পণ্য বহন করা যাবে না। আর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা ১০ চাকার ট্রাকে ২১-২২ টন পণ্য নিয়ে আসে। অথচ রাজস্ব দেয় ১৭-১৮ টনের। ফলে প্রতি ট্রাকে তিন থেকে চার টন ফলের রাজস্ব ফাঁকি দেয়া হয়। আর শুল্ক ফাঁকির মোট টাকার ৩ ভাগের একভাগ টাকা ভাগবাটোয়ারা হয় সিঅ্যান্ডএফ, পানামা, কাস্টমস আর প্রভাবশালী নেতাদের পকেটে। বাকি দুই ভাগ অর্থ যায় আমদানিকারকের পকেটে। এ ছাড়া উচ্চ ডিউটির পণ্য আনা হচ্ছে মিথ্যা ঘোষণায়। ফলের প্রতিটি ট্রাক থেকে ১০ হাজার টাকা করে চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এসব কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন সংসদ সদস্যের ভাই সোহেল আহমেদ পলাশ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যথানের পর সিঙ্গাপুরে চলে যান সাবেক এমপি শিমুল ও তার ভাই পলাশ। মুঠোফোনে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন সোহেল আহমেদ পলাশ। তিনি বলেন, আমি ৫ বছরে কোনোদিন পোর্টে গেছি বা কাউকে হুকুম করেছি এ রকম কোনো প্রমাণ নেই। এখন সময় খারাপ যাচ্ছে এজন্য অনেকেই অনেক কথা বলবে। তবে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাবেক এমপি শিমুলের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
No comments