গণঅভ্যুত্থানের চেতনা হাইজ্যাক হতে দেওয়া যাবে না : সিপিবি
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় জুলাই-আগস্ট গণহত্যার বিচার; জনজীবনে শান্তি ফিরিয়ে আনা; সংস্কারের রোডম্যাপ ঘোষণা; পাচারের টাকা ফেরত ও খেলাপি ঋণ আদায়; ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্য, মন্দির-মাজার এবং নারীর ওপর হামলাকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি; সীমান্ত হত্যাকাণ্ড বন্ধ এবং পাহাড়ে হামলা বন্ধের দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে নেতারা এ কথা বলেন।
নেতারা বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের চেতনায় স্বৈরাচারী ব্যবস্থার অবসান ও শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিজ নিজ দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সিপিবি এবং বামপন্থিরা জনগণের পাশে থেকে এই সংগ্রামকে এগিয়ে নেবে।
অভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের প্রকৃত তালিকা তৈরি, পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে ভয় ও অপমানের রাজনীতির অবসান ঘটানোর আহ্বান জানান নেতারা।
নেতারা বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কারের কার্যক্রম শুরু ও নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের মধ্য দিয়ে জনগণের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই সময়ের দাবি। এই কাজে দৃশ্যমান ভূমিকা পালনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সিপিবি সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহীন রহমান ও পরেশ কর এবং সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান, অধ্যাপক এমএম আকাশ, ক্বাফি রতন, কাজী রুহুল আমিন, ডা. সাজেদুল হক রুবেল, জলি তালুকদার, আসলাম খান, লুনা নূর, হাফিজুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক ইদ্রিস আলী, মোসলেউদ্দিন, হাসিনুর রহমান রুশো প্রমুখ।
সমাবেশে নেতারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত সরকারের ৪০ দিন পার হলেও এখনো মধুচন্দ্রিমা কেটেছে বলে মনে হচ্ছে না। তারা এখনো নিত্যপণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারল না। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটিয়ে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে পারল না। দখলদারিত্ব-চাঁদাবাজি থেকে দেশকে মুক্ত করে ভয়ের রাজত্বের অবসান ঘটাতে দৃশ্যমান রূপরেখাও সামনে আনতে পারল না। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের জান-মালের নিরাপত্তা, নির্বিঘ্নে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের বিষয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
তারা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন এলাকায়, পার্বত্য এলাকায় যে হত্যাকাণ্ড-ভাঙচুর সংঘটিত হলো তা মানুষকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এর আগে সংঘটিত ভাঙচুর, চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় মানুষের উদ্বেগ কমছে না। এসব ঘটনায় দেশি-বিদেশি নানা অপশক্তি নানামুখী কার্যক্রম করারও সুযোগ পাচ্ছে।
সমাবেশে নেতারা বলেন, অর্থনীতির দুর্বৃত্তায়ন অব্যাহত রেখে ভালো রাজনীতি আশা করা যাবে না। দেশে মুক্তবাজারের নামে লুটপাটের চলমান অর্থনীতি এই সংকটের গোড়ার কথা। দুর্নীতি-লুটপাট আজ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দুর্নীতি ও লুটপাটের যেসব খবর বেরোচ্ছে তা দেশবাসীর কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু চলমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীনরা নিজেদের স্বার্থে আইন করে, কমিশন ভোগ করে, চাঁদাবাজি করেই তারা তাদের অর্থ সম্পদ গড়ে তুলেছে, টাকা পাচার করেছে। এরা দেশকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে পৃথিবীর অন্য দেশে নিজেদের আবাসভূমি গড়ে তুলেছেন। আজ তাই এমন নীতি করতে হবে যাতে করে উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত নয় এমন জনগোষ্ঠী কখনোই অর্থ সম্পদের মালিক হতে পারবে না। তাহলে সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা যাবে। এ দেশে কমিউনিস্টরা এজন্যই দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে চলেছে।
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরানা পল্টনের পার্টির কার্যালয়ে এসে শেষ হয়। এছাড়াও সিপিবির আহ্বানে আজ দেশের বিভিন্ন জেলায় সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীতে সিপিবির মিছিল। ছবি : সংগৃহীত |
No comments