রাউদার ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার আলামত

বাংলাদেশে পড়তে আসা মালদ্বীপের বাসিন্দা আত্মহত্যাকারী মডেল তারকা রাউদা আদিবের লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যার আলামত পাওয়া গেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে লাশের ময়নাতদন্তের অনুমতি দিলে গতকাল দুপুর ২টার দিকে রাউদা আদিবের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। এতে প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যার বাইরে লাশের শরীরে কোনো আলামত পাওয়া যায় নি।
ময়নাতদন্তের টিম প্রধান ডাক্তার এনামুল হক গণাধ্যমকে জানিয়েছেন, লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে প্রাথমিকভাবে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলেই মনে হচ্ছে। তবে ভিসেরা প্রতিবেদনের জন্য লাশের শরীর থেকে কিছু আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। ভিসেরা প্রতিবেদন আসার পরেই রাউদার মৃত্যু নিয়ে তারা পরিষ্কার ধারণা পাবেন।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেয়ের লাশ দেখতে রামেক হাসপাতালের হিমঘরে যান বাবা ডা. মোহাম্মদ আদিব ও মা আমিনাথ মুহারমিমাথ। মেয়ের লাশ দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন মালদ্বীপের এই দম্পতি। পরে মেয়ের লাশের ময়নাতদন্তের সিদ্ধান্তের কথা জানান বাবা ডা. মোহাম্মদ আদিব।
দুপুর ১টার দিকে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারপর ময়নাতদন্ত করেন ওই তিন চিকিৎসক। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান এনামুল হকের নেতৃত্বে রাউদার লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। ময়নাতদন্তকারী অন্য দুই ডাক্তার হলেন ফরেনসিক বিভাগের ডা. মনসুর রহমান  ও ডা. এমদাদুর রহমান।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পূর্ব) আমীর জাফর জানান, লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনো কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ধরা পড়েনি। তারপরও ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ঢাকায় কিছু আলামত পাঠানো হবে। তারপর মৃত্যুর আসল ঘটনা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই উপ-কমিশনার বলেন, এখন পর্যন্ত তার পরিবার এই ঘটনায় কোনো মামলা দায়েরের কথা বলেননি। তাই আপাতত অপমৃত্যুর মামলাই রুজু থাকছে শাহ মখদুম থানায়। তিনি বলেন, লাশ ঠিক কখন ঢাকায় কিংবা মালদ্বীপে পাঠানো হবে সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
এর আগে রাউদার মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে গত বৃহস্পতিবার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবদুল আজিজ রিয়াদ জানান, কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. আবদুল মুকিত সরকারকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
এ ছাড়া রাউদার মরদেহ উদ্ধারের ব্যাপারে বৃহস্পতিবার খোঁজ-খবর নেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আইশাদ শান সাকির। ওইদিন বিকাল চারটার দিকে তিনি রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। এ সময় তিনি রাউদার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার সহপাঠী, শিক্ষক ও কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (২৯ মার্চ) রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজছাত্রী হোস্টেলের বিদেশি ব্লকের ২০৯ নম্বর কক্ষে ওড়না পেঁচানো অবস্থায় রাউদার ঝুলন্ত মরদেহ পাওয়া যায়। এই মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১৩তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন রাউদা। বিদেশি কোটায় ভর্তির পর গত বছরের ১৪ই  জানুয়ারি মহিলা হোস্টেলের দ্বিতীয় তলার ওই কক্ষে উঠেছিলেন রাউদা। ওই ব্লকে আরো ১৪ জন বিদেশি ছাত্রী থাকেন।

No comments

Powered by Blogger.