জাতীয় পার্টির মহাসচিবের উপস্থিতিতে সিলেট সার্কিট হাউস রণক্ষেত্র, গোলাগুলি by ওয়েছ খছরু

সিলেট সার্কিট হাউসে জাতীয় পার্টির দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সার্কিট হাউস। এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু সার্কিট হাউসে উপস্থিত ছিলেন। সংঘর্ষকালে সিলেট সার্কিট হাউস ব্যাপক ভাঙচুর ছাড়াও উভয় পক্ষ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ২০ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদসহ ১৮ জনকে আটক করেছে। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এ ঘটনার পর সিলেট সার্কিট হাউসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ পাহারায় জিয়াউদ্দিন বাবলুকে নিয়ে যাওয়া হয় সার্কিট হাউসের ওপরের কক্ষে। সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে গতকাল বিকালে সিলেটে আসেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু। তিনি বিকালে নগরের মেট্রো হোটেলে সার্কিট হাউস অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আর সন্ধ্যায় সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির নেতাদের নিয়ে সার্কিট হাউসের ভিআইপি কক্ষে বৈঠক শুরু করেন। এ সময় সেখানে যান জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব সেলিম উদ্দিন ও এমপি ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া গ্রুপের কর্মীরা। এ সময় দুই এমপিকে রেখে কেন বৈঠক হচ্ছে- এ বিষয়টি জানতে চান সেলিম ও এহিয়া গ্রুপের কর্মীরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। প্রথমে ভিআইপি কক্ষের ভেতরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে একপক্ষ আরেক পক্ষের ওপর হামলা চালায়। কক্ষের বাইরে বেশ কয়েক রাউন্ড গুলির ঘটনা ঘটে। আধঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ একপর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে সার্কিট হাউসের বাইরে। দুই পক্ষের মধ্যে গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানা পুলিশ সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে পুলিশ ২২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষকালে এমপি এহিয়া গ্রুপ ও তাজ রহমান গ্রুপের কর্মীরা পাল্টাপাল্টি গুলি ছুড়ে বলে জানিয়েছের প্রত্যক্ষদর্শীরা। সংঘর্ষে বিশ্বনাথ উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লালু, জাবের আহমদ, দিনার হোসেন, হালিম বাছির আহমদসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে, সংঘর্ষের পর পুলিশ সার্কিট হাউস এলাকায় অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশ জকিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ, জেলা জাপার যুগ্ম আহ্বাক আবদুল মালেক খান, ফয়েজ আহমদসহ ১৮ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের সিলেটের কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর যাদের আটক করা হয়েছে তারা নিচের সারির নেতা। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি সোহেল আহমদ জানিয়েছেন, খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে পুলিশ ১৮ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে থানায় মামলা হলে আটককৃতদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। এদিকে, সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ সিদ্দিকী এ ঘটনার জন্য বহিরাগতদের দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, এমপি এহিয়ার নেতৃত্বে সার্কিট হাউসে হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। তারা সশস্ত্র অবস্থায় এসে হামলা চালায়। তবে, এমপি এহিয়া জানিয়েছেন, তার গ্রুপের কর্মীরা সার্কিট হাউসে গেলে ওখানে থাকা সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। তারা মারধর করে কর্মীদের তাড়িয়ে দিতে চাইলে এ ঘটনা ঘটে। তার পক্ষের কেউ গুলি ছুড়েনি বলে জানান তিনি।
বাবলুকে হুইপ সেলিম উদ্দিনের ‘ঠক্কর’
সিলেটে এসে ‘ঠক্কর’ খেলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু। দলের অধিকতর জুনিয়র নেতা ও পার্টির যুগ্ম মহাসচিব বিরোধীদলীয় হুইপ সেলিম উদ্দিনের সঙ্গে এ ঠক্কর খেলেন তিনি। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেট নগরীতে জাতীয় পার্টির তার বলয়ের নেতাদের নিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করেছেন। আর জাতীয় পার্টির সিলেটের বর্তমান কমিটির নেতাদের নিয়ে আলাদা ইফতার পার্টির আয়োজন করলেন দলের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু। এ ইফতার পার্টির আয়োজনকে কেন্দ্র করে সিলেটে জাতীয় পার্টির নেতারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগেন। অনেক নেতাই কোন ইফতার পার্টিতে যোগ দেননি। তবে, বর্তমান কমিটির মূল স্রোতের নেতারা পার্টির মহাসচিবের ইফতার পার্টিতে যোগ দেন। সিলেটে জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি নতুন নয়। দলের চেয়ারম্যান আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একেক সময় এক-এক নেতার হাতে দলের দায়িত্ব দেয়ার কারণে সিলেটের বিভক্তি চরমে। এ বিভক্তির সর্বশেষ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমান ও দলের যুগ্ম মহাসচিব সেলিমউদ্দিনের মধ্যে। তাজ রহমান দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেও তিনি সংসদ সদস্য কিংবা হুইপ হতে পারেননি। আর সেলিম উদ্দিন দলের যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার পাশাপাশি সংসদ সদস্য ও বিরোধীদলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে এটিইউ তাজ রহমান দলের প্রেসিডেন্ট আলহাজ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও সেলিম উদ্দিন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। এ দুই নেতার দ্বন্দ্বের কারণে বছরখানেক আগে জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিনের নেতৃত্বে থাকা কমিটি ভেঙে দেন তাজ রহমান। আর সিলেট জাতীয় পার্টির ত্যাগী নেতা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ সিদ্দিকীকে আহ্বায়ক ও উসমান আলীকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করেন। এরপর সেলিম উদ্দিন অংশের নেতারা জাতীয় পার্টির ওই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর থেকে সিলেটে জাতীয় পার্টি দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এবার রমজানে সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টি কয়েক দিন ধরে ইফতারের আয়োজন করছিলেন। এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছেন দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলু। গতকাল সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীড় পাড় এলাকার হোটেল মেট্রোতে এ ইফতার পার্টি অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে দুপুরে দলের মহাসচিব সিলেটে এসে পৌঁছলে বিমানবন্দরে দলের সিনিয়র নেতারা বরণ করেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এটিইউ তাজ রহমান, আবদুল্লাহ সিদ্দিকী, উসমান আলী, সদর দক্ষিণের আহ্বায়ক ফরিদুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক শামীম আহমদ মিন্টুসহ সিনিয়র নেতারা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। গতকালের ইফতার সম্পর্কে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ সিদ্দিকী গতকাল জানিয়েছেন, সেলিম আহমদ দলের যুগ্ম মহাসচিব হওয়ায় আমি নিজে গিয়ে দাওয়াত দিয়েছি। তিনি বলেছেন, জকিগঞ্জে তার একটি ইফতার মাহফিল রয়েছে তিনি সেখানে যাবেন। এ কারণে আসতে পারবেন না। এর পরও আমরা তাকে উপস্থিত থাকার জন্য বারবার অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি বলেন, দলের মহাসচিবের সঙ্গে সিলেটের কারও ঠক্কর হতে পারে না। কেউ ইফতারে না এলে কিছু হবে না। এদিকে, জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব সেলিম উদ্দিন জানিয়েছেন, ভোরের দিকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নগরীর শিবগঞ্জের শাকিল কমিউনিটি সেন্টারে আমরা ইফতারের আয়োজন করেছি। এ আয়োজনে ৫০০-এর বেশি নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। সেলিম উদ্দিন বলয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল শহীদ লস্কর বশীর ছাড়াও বিদ্রোহী অংশের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.