সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা: রাখাইনদের জায়গা দখল করে দুই নেতার মার্কেট

স্থাপনা নির্মাণের জন্য ইট–বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটায় রাখাইন মহিলা মার্কেটের জমি দখল করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির স্থানীয় দুই নেতা মার্কেট নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাখাইন সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধিদল জেলা প্রশাসককে লিখিত চিঠি দিয়েছে।
কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনির আহম্মেদ ভূঁইয়া ও তাঁর ভাই কুয়াকাটা পৌর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বাবুল ভূঁইয়া এক সপ্তাহ ধরে ওই মার্কেট নির্মাণ করছেন।
কুয়াকাটা রাখাইন মহিলা মার্কেটের সভানেত্রী লুমা রাখাইন ও স্থানীয় রাখাইন সম্প্রদায়ের পক্ষে উচাচী মাস্টার মাতুব্বার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ১৯৯৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি রাখাইন মার্কেটের নামে জেলা প্রশাসক বরাবর ৫৩০ নং খতিয়ানের ৫৩৫৭ নং দাগের ০.৮০ শতাংশ জমি দান করা হয়। কুয়াকাটার অবহেলিত রাখাইনদের জীবনমানের উন্নয়নে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাখাইনেরা ওই জমি দান করেন। ওই জমিতে জেলা প্রশাসন রাখাইন মহিলা মার্কেট, কুয়াকাটার ঐতিহ্য ‘কুয়া’ সংস্কার, মাঠের পশ্চিম পাশে পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য বিশাল মঞ্চ নির্মাণ করে। এই মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী সভাও করেছেন। খোলা মাঠে প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে। এতে রাখাইন মার্কেটটি দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ২০০৯ সাল থেকেই স্থানীয় প্রভাবশালী মনির ভূঁইয়া তাঁর লোকজন নিয়ে মার্কেটের জায়গা দখল শুরু করেন। তখন বিষয়টি কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এভাবে ছয় বছরে দখলদারেরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। এখন সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে তারা রাখাইন মার্কেটের জায়গায় ‘ভূইয়া মার্কেট’ নামে পাকা স্থাপনা নির্মাণ করছে। রাতদিন অবিরাম কাজ চলছে। দখলদারেরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ এর প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। এতে রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তাই দখলপ্রক্রিয়া বন্ধে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ খুবই জরুরি।
জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকার বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কুয়াকাটার পৌর প্রশাসক ও কলাপাড়ার ইউএনওকে নির্দেশনা দিয়েছি।’
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জানিয়েছে, কুয়াকাটার নৈসর্গিক সৌন্দর্য ধরে রাখতে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরের ড্যাপ (বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা) প্রণয়নের আগ পর্যন্ত সব ধরনের অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ বন্ধ থাকবে।
মনির আহম্মেদ ভূঁইয়া মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই জমি আমাদের এবং কুয়াকাটা পৌরসভা থেকে অনুমতি নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।’ বাবুল ভূঁইয়া বলেন, প্রশাসনের নির্দেশে ওই জায়গায় নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও ইউএনও মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কুয়াকাটায় নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। কাজেই পৌরসভা থেকে অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। এ ছাড়া জেলা প্রশাসকের অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.