বিপজ্জনক বা স্পর্শকাতর ব্যক্তিদের তালিকা চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় by দীন ইসলাম

সরকারের কাছে ‘বিপজ্জনক বা স্পর্শকাতর’ বিবেচিত ব্যক্তিদের তালিকা চেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। তালিকাটি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে সরাসরি দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া, স্পর্শকাতর যে কোন বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত ৩০শে জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক নাসরীন আফরোজ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠিটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠির মর্ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সহসাই বিপজ্জনক ব্যক্তিদের তালিকা বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। বিমান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ই এপ্রিল বেলা সোয়া তিনটায় অবসর ছুটি ভোগরত গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী দেলেনা বেগম মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম আযমের স্ত্রী সাইদা আফিফা আযম ও তার ভাতিজা লুৎফুল কবিরকে ভিআইপি লাউঞ্জে নিয়ে যান। ভিআইপি গেট দিয়ে গোলাম আযমের স্ত্রী সৌদি আরবে ওমরাহ করতে যাওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে গেলে তাদের পরিচয় পেয়ে আটক করা হয়। উল্লেখ্য, দেলেনা বেগম গোলাম আযমের ছেলে সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমান আযমীর শাশুড়ি। তাদের আটকানোর সময় দেলেনা বেগম ছাড়াও বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন আযমীর স্ত্রী তাসনীম আঞ্জুম। এদিকে ঘটনার পর পরই সিভিল এভিয়েশনের সদস্য অপারেশনের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিমানবন্দরে কর্তব্যরত গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও নিজ উদ্যোগে বিষয়টি তদন্ত করে। এছাড়া, বিষয়টি সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করে তদন্ত করেছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ (এপিবিএন)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেলেনা বেগম অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি ভিআইপি পাস ব্যবহার করতে পারেন। তবে তিনি তথ্য গোপন করে ভিআইপি পাস নেয়ায় অন্যায় করেন। এ কারণে দেলেনা বেগমকে জিজ্ঞাসা করা মাত্রই তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে এভাবে ভিআইপি পাস নিয়েছিলেন বলে মুচলেকা দেন। মুচলেকা দেয়ার সময় বিমানবন্দরে ডিজিডিএফআই, এনএসআই, এপিবিএনসহ সব সংস্থার লোকজন উপস্থিত ছিলেন। সবার সামনেই দেলেনা বেগম মুচলেকা দেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কোন কাজ করবেন না বলে জানান। এদিকে এ পুরো ঘটনার বিশদ জানিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। গত ২৭শে মে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ঘটনাটি অবহিত করতে তদন্ত প্রতিবেদনসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায়। এর ভিত্তিতেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দুইটি নির্দেশনা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চিঠি পেয়েই কাজ শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা সরকারের কাছে বিপজ্জনক বা স্পর্শকাতর বিবেচ্য ব্যক্তিদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য পুলিশের আইজিকে দুয়েক দিনের মধ্যে অনুরোধ করবে। একই সঙ্গে সমন্বয়ের অনুরোধ জানিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.