পানির সমস্যায় নাকাল উত্তর কাজীপাড়ার একাংশ by মোছাব্বের হোসেন

পানি সংগ্রহ করছেন উত্তর কাজীপাড়ার
কয়েকজন বাসিন্দা l ছবি: প্রথম আলো
‘দ্যাড় মাস ধইরা পানির সমস্যা। অন্যের বাড়ি গিয়া গোসল করি, কাপড় ধুই। খাইবার পানি ঠিকমতো পাই না। রোজার মইদ্যে কী যে কষ্ট হইতাছে, বইলা বুঝাইতে পারমু না। সব কষ্ট সহ্য করতে পারি, পানির কষ্ট সহ্য হয় না।’
দুই হাতে দুটি খালি বালতি নিয়ে এভাবে নিজেদের দুর্ভোগের কথা বলছিলেন রাজধানীর উত্তর কাজীপাড়ার প্যারিস ফার্নিচার গলির বাসিন্দা ইশরাত জাহান।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে উত্তর কাজীপাড়ার চারটি গলি ঘুরে দেখা গেছে, মোড়ে মোড়ে আর বাড়ির সামনে অনেকেই খালি বালতি-কলস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে ওয়াসা থেকে সরবরাহ করা পানির জন্য অপেক্ষা করছেন।
পানির সমস্যা নিয়ে কথা হয় উত্তর কাজীপাড়া বাড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের সঙ্গে। তাঁর দাবি, ওয়াসা এই এলাকায় (জোন: ১০) নতুন করে পানির লাইনের কাজ শুরু করার সময় প্রায় ৫০০ বাড়ির পানির লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়। এতে ব্যবহারের অযোগ্য নোংরা পানি আসা শুরু করে। কিন্তু নতুন করে লাইন সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, সমস্যার সমাধান চেয়ে বিভিন্ন সময়ে মৌখিক অনুরোধের পাশাপাশি এলাকার সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদার ও ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ সমস্যা সমাধানের জন্য এগিয়ে আসেননি।
জাকির হোসেন আরও বলেন, এলাকাবাসীর চাপে পাঁচ দিন ধরে ওয়াসা পানির বড় গাড়িতে পানি সরবরাহ করছে। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ গাড়ি করে পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় কম।
এলাকাবাসী জানান, পানির সমস্যা সমাধানের জন্য তাঁরা গত রোববার রাত একটার দিকে কাফরুল থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। থানা কর্তৃপক্ষ ওয়াসার ওই জোনের কয়েকজন কর্মকর্তাকে ডাকেন। পরে তিন দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলে এলাকাবাসী ফিরে যান।
এই এলাকার বাসিন্দা মাহবুবুল আলম খান বলেন, ‘কী যে একটা মানবেতর জীবন যাপন করছি, বলে বোঝাতে পারব না।’ এই এলাকার বাড়ির মালিক গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘পানির কষ্ট সহ্য করতে না পাইরা আমার ছয়টা ভাড়াটিয়া চইল্যা গেছে। আরও দুজন যাইব বইলা হুমকি দিছে। আমি তো আর ওদের আটকায়া রাখতে পারি না।’
এলাকার বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান জানালেন, তাঁদের বিক্ষোভের পর ওয়াসার ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পানি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তা খুবই অল্প পরিমাণে। আর এই পানি সংগ্রহ করছেন বেশির ভাগই নিচতলার বাসিন্দারা। এ ছাড়া ওপরের তলার বাসিন্দারা পানি পাচ্ছেন না।
রওশন আক্তার (৫০) বলেন, ‘রোজার মাসে পানির যে কষ্টটা করতেছি, তা ওয়াসার লোকজন দেখতেও আসে নাই।’ তিনি জানান, ঠিকমতো পানি না পাওয়ার কারণে তাঁর পরিবারের প্রায় সবারই বিভিন্ন সময়ে পেটের অসুখে ভুগতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়াসার জোন ১০-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল মোতালেব বলেন, সমস্যা সম্পর্কে তিনি অবগত। তবে তিনি দাবি করেন, সমস্যাগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা হাতে গোনা। এটি সমাধানের জন্য কাজ চলছে।
এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডভুক্ত। পানির সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করছেন বলে জানালেন এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হুমায়ুন রশিদ। তিনি গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা এক দিনের মধ্যে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.