অপমানে মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যা? তদন্ত দাবি পরিবারের

আত্মহত্যার আগে একটি চিরকুট লিখেছিলেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ইউনিটের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খান। তাকে গলাধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান। এ অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন এ মুক্তিযোদ্ধা। চিরকুটটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ মুক্তিযোদ্ধার লাশ উদ্ধারের একদিন পেরিয়ে গেলে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে কোন মামলা হয়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হওয়ায় বিপাকে রয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাজধানীর তোপখানা রোডে হোটেল কর্ণফুলীর ২০৪ নম্বর কক্ষ থেকে আইয়ুব খানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৫ দিন আগে ওই হোটেলে উঠেছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ হোটেল কক্ষের ভেতর থেকে কীটনাশকের গন্ধ বের হলে হোটেল কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। তারা ভেতর থেকে দরজা বন্ধ দেখতে পায়। খবর পেয়ে দরজা ভেঙে আইয়ুব খানকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে এই মুক্তিযোদ্ধাকে হাসপাতালে পাঠানো হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন তাকে। হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্তের পর মরদেহ গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল সকালে সেখানে তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সূত্র জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যার আগে একটি সুইসাইড নোট (চিরকুট) রেখে গেছেন। এতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে অভিযুক্ত করে লেখা রয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ইউনিট ঘোষণার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নানকে টাকা দিয়েছিলাম। টাকা দিয়ে বারবার আবেদন করার পরও তিনি দক্ষিণ জেলা ইউনিট ঘোষণা করেননি। তার বাসায় গিয়ে টাকা ফেরত চাইলে তিনি গলাধাক্কা দিয়ে অপমান করে বের করে দেয়ায় আমি আত্মহত্যা করলাম। আমার লাশটা যেন ঢাকায় দাফন করা হয়। নিহতের মামাতো ভাই আমীর হোসেন বলেন, আইয়ুব খান যে হোটেলে আত্মহত্যা করেছেন সেখানে পাওয়া একটি চিরকুটের অনুলিপি শাহবাগ থানা-পুলিশের কাছে আছে। তিনি কেন এ আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন সে সম্পর্কে ওই চিরকুটে বিস্তারিত লেখা আছে। চিরকুটে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি আবেদনও ছিল। কিন্তু ওই চিরকুটের কোন অনুলিপি পুলিশ তাদের দেয়নি। তিনি এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের শাস্তি দাবি করেন। চিরকুটপ্রাপ্তির বিষয় স্বীকার করে শাহবাগ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মামুন ফরাজী জানান, অপমৃত্যুর অভিযোগে মামলা হয়েছে। প্ররোচনার বিষয়ে মামলা হবে কি-না তা নিহতের পরিবার ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যাপার বলে জানান তিনি। তবে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান এসআই মামুন ফরাজী। তবে মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যার পেছনে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নান। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। কিন্তু পত্রিকায় কমিটি গঠন, অর্থ নেয়া এবং অপমান করা সংক্রান্ত যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে এর সঙ্গে সচিবের কোন সম্পর্ক নেই। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) ইউনিট কমান্ডের আহ্বায়ক কমিটি গঠন নিয়ে যে বিষয়টি বলা হয়েছে তাতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই, বিষয়টি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের এখতিয়ারাধীন। সচিব এম এ হান্নান মুক্তিযোদ্ধা আইয়ুব খানকে গলাধাক্কা দেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি আইয়ুব খানকে চেনেন না। তার কাছে তিনি কখনও আসেননি। আইয়ুব খান আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছিলেন। তার দুই পুত্র ও দুই কন্যা রয়েছে। বড় পুত্র আরিফ হোসেন (১৮) চট্টগ্রামে একটি দোকানে কাজ করে।

No comments

Powered by Blogger.