দিন-রাত ব্যস্ত পাদুকা কারখানা by সাঈদা ইসলাম

ঈদে পোশাকের সঙ্গে নতুন জুতাও চাই। বাড়তি চাহিদা
থাকায় বাজারে জুতা সরবরাহ করতে কারখানায় দিন-রাত
কাজ করছেন শ্রমিকেরা। চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব মাদারবাড়ী
এলাকার একটি কারখানা থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
ঈদের আর বেশি বাকি নেই। কারখানায় কাজ চলবে বড়জোর ২৭ রমজান পর্যন্ত। তাই শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততায় মুখর চট্টগ্রামের হাতে তৈরি পাদুকার কারখানাগুলো। ক্রেতার মনপছন্দ ঝকঝকে চকচকে জুতা তৈরি করতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন কারিগরেরা। চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকাশিল্প মালিক গ্রুপের হিসাব অনুযায়ী, নগরে নিবন্ধন করা জুতার কারখানা রয়েছে সাড়ে ৫০০। এর বাইরেও অন্তত ২০০ কারখানা রয়েছে। হাতে তৈরি জুতার কারখানাগুলোর বেশির ভাগই ছোট। চট্টগ্রামে সবচেয়ে বেশি পাদুকার কারখানা রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম মাদারবাড়ী, অভয় মিত্র ঘাট, জলসা মার্কেট ও নালাপাড়ায়। এই কারখানাগুলোর মালিক-শ্রমিকদের অধিকাংশই ভৈরব ও মানিকগঞ্জের অধিবাসী।
গত মঙ্গলবার বেলা একটার দিকে পূর্ব মাদারবাড়ী মালুম লেনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার প্রতিটি সরু গলির ভেতরে রয়েছে জুতার কারখানা। বেশির ভাগ কারখানায় তখনো চলছে কাজ শুরুর প্রস্তুতি। কারখানার মালিক-শ্রমিকেরা জানান, ঈদ মৌসুম ঘিরে প্রতিটি কারখানায় ব্যস্ততা বেড়েছে। বেলা একটা থেকে ভোররাত পর্যন্ত অধিকাংশ কারখানায় কাজ চলে। সকালে ঘুমাতে যাওয়া শ্রমিকদের দিন শুরু হয় তাই দুপুরে।
মুন স্টার শুপজের মালিক সাইফুল ইসলাম জানান, ঈদে জুতা তৈরির অর্ডার বেশি আসে। দিনের তুলনায় রাতে কাজের গতি ভালো থাকে।
মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রায় সব কারখানার জুতা যায় নগরের জুতার সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার নূপুর মার্কেটে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলা ও উপজেলাগুলোতে জুতা যায়। বেশির ভাগ জুতাই তৈরি হয় র্যা ক্সিন দিয়ে। তবে অর্ডার পেলে চামড়ার জুতাও তৈরি করা হয়। পাইকারি বাজারে কারখানার মালিকেরা জুতা বিক্রি করেন ডজন হিসেবে। এক ডজন জুতা তৈরির কাজে শ্রমিকেরা পান গড়ে ২০০-৩০০ টাকা। মেয়েদের জুতার মধ্যে পেনসিল ও ফ্লাট—দুই ধরনের জুতাই তৈরি হয়। ছেলেদের নানা নকশার স্যান্ডেল ও সাইকেল শুট বেশি তৈরি হয়।
গতবারের তুলনায় এবার দেশি জুতার বাজার মন্দা বলে জানিয়েছেন মালিকেরা। তাঁরা বলছেন, শুল্কমুক্ত করে দেওয়ায় ভারতীয় জুতায় বাজার সয়লাব। সঙ্গে রয়েছে চায়নিজ জুতাও। স্মৃতি শুজজের মালিক মো. শরিফ আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, শেষ ১০ দিনে মার্কেটগুলোতে জুতা বেশি বিক্রি হয়। একসময় দেশি জুতার কদর বেশি থাকলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা এবার ভারতীয় জুতা বেশি আমদানি করেছেন। এ কারণে দেশের সনাতন কারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত ঈদ মৌসুমে সাড়ে ৩০০ ডজন জুতার অর্ডার পেয়েছিলেন তিনি। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত অর্ডার পেয়েছেন ২০০ ডজন।
একই ধরনের কথা বললেন চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকাশিল্প মালিক গ্রুপের সভাপতি হাজি মো. সোলায়মান। তিনি বলেন, ‘পরিমাণে অল্প হলেও আমরা মধ্যপ্রাচ্যে জুতা সরবরাহ করছি। কিন্তু কোনো ধরনের সরকারি সহায়তা পাচ্ছি না।’
ঈদকে ঘিরে ব্যস্ততার কারণে সব কারখানাতেই কাজ করছেন মৌসুমি শ্রমিকেরা। আর এম শুলজ কারখানায় এ মৌসুমে ৩০ জন কাজ করছেন। এঁদের মধ্যে ১৯ জনই মৌসুমি শ্রমিক। নজরুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক জানান, ঈদের এক মাস কাজ করে আট-নয় হাজার টাকা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। বছরের বাকি সময় ভৈরবের নিজ গ্রামে কৃষিকাজ করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.