রাজনীতি by মাহবুব তালুকদার

চাচা জিজ্ঞাসা করলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন কেমন?
প্রশ্নটা শুনে আমি হকচকিয়ে গেলাম। চাচার কাছ থেকে এ ধরনের প্রশ্ন আমি কখনো আশা করি না। আমাকে নিয়ে তার মনে দুটো ধারণা বদ্ধমূল রয়েছে। প্রথমত, আমি রাজনীতি বুঝি না। দ্বিতীয়ত, আমি কারণে বা অকারণে সরকারের সমালোচনা করি। এমতাবস্থায়, চাচার উপরোক্ত প্রশ্ন আমাকে স্বাভাবিকভাবে বিব্রত করল।
কি হলো? তুমি আমার কথার জবাব দিচ্ছ না কেন? চাচা ঈষৎ হেসে বললেন, যেহেতু দেশের সার্বিক অবস্থা এখন খুব ভাল, সেজন্য সত্য কথাটা তোমার মুখে আটকে যাচ্ছে।
বললাম, আপনি নিজেই তো আপনার প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিলেন। তাহলে আমাকে জিজ্ঞাসা করে লাভ কি?
আমি তোমার মতামতটা জানতে চাচ্ছি।
আমার মতামত কি খুব গুরুত্বপূর্ণ?
অবশ্যই। তুমি সাধারণ মানুষের একটা অংশের প্রতিনিধি। তাই তোমার কাছ থেকে মতামত যাচাই এ মুহূর্তে বিশেষ প্রয়োজন।
এ মুহূর্তে কেন?
ব্যাপারটা তাহলে তোমাকে খুলেই বলি। সরকার এখন মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা ভাবছে।
তাই নাকি? হঠাৎ এ সময়ে এমন অশুভ চিন্তা কেন?
এমন একটা মহৎ চিন্তাকে তুমি অশুভ বলছ কোন যুক্তিতে?
চাচা! আপনার কথা অনুযায়ী দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এখন ভাল। তাহলে এভাবেই চলুক না দেশটা। অযথা নির্বাচনের কথা তুলে ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ কি?
ঝামেলা হবে কেন? সিটি করপোরেশন নির্বাচন তো চমৎকার হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ পর্যন্ত প্রশংসা করে বলেছেন, কোথাও কোন রক্তক্ষয় হয়নি। সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুসরণ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি রক্তপাতহীন হয়, তাহলে নির্বাচনের ইতিহাসে তা একটা মডেল হয়ে থাকবে।
৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের মডেল বাদ দিয়ে এখন কি সিটি করপোরেশনের মতো জাতীয় নির্বাচন করার কথা ভাবা হচ্ছে?
অসুবিধা কি? জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি আসেনি, কিন্তু সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে তারা তো এসেছিল। পরে তারা নিজেরাই কেটে পড়েছে, সেটা তাদের ব্যাপার। জাতীয় নির্বাচনে তারা যদি আসে, পরে কেটে পড়লেই বা কি আসে যায়?
আমার তো মনে হয় না, বিএনপি কেবল বৈধতা দিতে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে?
চাচা বললেন, ৫ই জানুয়ারি বিএনপি নির্বাচনে না আসায় ক্ষতিটা কার হয়েছে? বিএনপি এখন সংসদের বাইরে। তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা ঝুলছে। তাদের বড় বড় নেতারা সবাই কারাগারে। নির্বাচনে না এসে বিএনপি নিজেই নিজের পায়ে কুড়াল মেরেছে। সত্যি বলতে কি, খালেদা জিয়া এখন মনে মনে পস্তাচ্ছেন।
এরপরও আমি মনে করি না খালেদা জিয়া ৫ই জানুয়ারি মার্কা কোনো নির্বাচনে আসবেন।
কেন? তার অসুবিধা কি? নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করা হলেই তো হলো।
আমার মনে হয়, জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে কিছু সাংবিধানিক সংকট রয়েছে। আলোচনার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সমঝোতা না হলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। আর নির্বাচন কমিশনের কথা বলছেন? একটা অনুগত নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করার অর্থ অধিকতর অনুগত করা।
আজকাল তুমি বড় কঠিন কথা বলতে শুরু করেছ।
কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছি না, দেশের এমন চমৎকার রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা ভাবা হচ্ছে কেন?
সরকার যখন ভাল অবস্থায় থাকে তখনই তো মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা ভাবা হয়। দল হিসেবে বিএনপির অস্তিত্ব প্রায় শূন্যের কোঠায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করে জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা হচ্ছে। খালেদা জিয়াও তার ব্যক্তিগত মামলায় ফেঁসে যেতে পারেন। তিনি নির্বাচনে অযোগ্য হওয়ারই সম্ভাবনা। বিএনপিতে ভাঙন ধরাতে সবরকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সংস্কারপন্থিরা তো আছেনই, মামলার ভারে জর্জরিত অন্য নেতারা বিএনপির নামে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। জামায়াতকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করারও ব্যবস্থা হয়েছে। তাছাড়া দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির এখন অনেক উন্নতি হয়েছে।
চাচা! বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। কিন্তু উন্নতিটা নড়বড়ে’।
বিদেশীরা কি বলল না বলল, তাতে কি আসে যায়?
কিছু তো নিশ্চয়ই আসে যায়। সম্প্রতি বৃটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় তাতে বাংলাদেশ বিষয়ক সর্বদলীয় কমিটি সভাপতি কনজারভেটিভ দলীয় এমপি অ্যান মেইন রাজনৈতিক সংঘাত ও অস্থিরতাকে বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা বলে উল্লেখ করেছেন। অন্য এক এমপি কেরি ম্যাকার্থি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অনেক অগ্রগতি আছে। কিন্তু যে কথা বলা প্রয়োজন, তা হচ্ছে দেশটিতে গণতন্ত্র প্রয়োজন। প্রয়োজন গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে ক্ষমতার পালাবদলের ব্যবস্থা। এর কোনো বিকল্প নেই।’
বৃটিশ পার্লামেন্টের এমপিদের গায়ে পড়ে এসব কথা বলার উদ্দেশ্যটা কি?
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে তারা খুবই উদ্বিগ্ন।
আমরা তো তাদের রাজনীতির ব্যাপারে গায়ে পড়ে কোনো পরামর্শ দিতে যাই না।
চাচা! বাংলাদেশের রাজনীতিকদের বিবদমান দুটি দলের রাজনৈতিক উত্তেজনা যখন বৃটিশ পার্লামেন্টের সামনে উত্তাপ ছড়ায় তখন তারা নীরব থাকবেন কি করে? পৃথিবীতে বাংলাদেশ সম্ভবত একমাত্র দেশ যার রাজনৈতিক দলের বৈদেশিক শাখা রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে বৃটিশ কনজারভেটিভ পার্টি বা লেবারপার্টির সমর্থকদের কোন সংগঠন বা অফিস নেই। যুক্তরাষ্ট্রে যেমন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বৈদেশিক শাখা আছে, বাংলাদেশে তেমন ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির কোন শাখা সংগঠন নেই।
এতে তুমি কি বোঝাতে চাও? এতে কি প্রমাণিত হয় না যে, বাংলাদেশের রাজনীতি চর্চা যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে?
আমি বাংলাদেশের রাজনীতির নষ্ট চরিত্রের বিষয়টা মাননীয় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর উক্তি দিয়ে বোঝাতে চাই।
তিনি কি রাজনীতি সম্পর্কে কোন নেতিবাচক উক্তি করেছেন?
না। তা করেননি। তবে তিনি সম্প্রতি একটি সত্য কথা বলেছেন।
কি সেই সত্য কথা?
ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, ‘রাজনৈতিক কারণেই রাস্তা ও ফুটপাথ দখলমুক্ত করা যায় না।’
এতো খুবই সত্য কথা। চাচা বললেন।
কথাটা চিন্তা করে দেখার মতো। সম্প্রতি দেশের একটি প্রধান পত্রিকা এর সম্পাদকীয়তে বলেছে: ‘কথা সত্য। কিন্তু তিনি কোন রাজনীতির কথা বলেছেন? যে রাজনীতির তিনি একজন নেতা এবং যে রাজনীতি তাকে মন্ত্রী করেছে, সেই রাজনীতির কাছে তিনি এত অসহায় হলে চলবে কেন?’ পত্রিকাটি আরো লিখেছে: ‘সঠিকভাবেই সড়ক পরিবহন মন্ত্রী বলেছেন, রাস্তা দখলমুক্ত করতে না পারলে ষোল লেন করেও যানজট দূর করা যাবে না। দখলদারেরা ক্ষমতাবান। কিন্তু তারা কি মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর চেয়েও ক্ষমতাবান?’
এসব কথা বলে তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছ?
চাচা! আমরা এক অর্থে রাজনীতির রাহুগ্রাসে পতিত হয়েছি। দেশের স্বাধীনতাসহ আমাদের রাজনীতিবিদদের বিশাল অর্জন রয়েছে, একথা যেমন সত্য, তেমনি রাজনীতির দোহাই দিয়ে আমাদের জনগণকে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে।
তুমি কি বুঝতে পারছ, তুমি কি বলছ?
আমি না বুঝে কোন কথা বলছি না। মাননীয় অর্থমন্ত্রী যখন বলেন, শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাবে না, কারণ তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না, এরও অলক্ষ্যে রয়েছে রাজনীতি। ছাত্রলীগের টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে যখন কোন ব্যবস্থা নেয়া যায় না, তখনও বোঝা যায় এর পেছনে রাজনীতির স্বার্থ জড়িত। এমনকি পুলিশের বিরুদ্ধে হামলাকারী আওয়ামী ক্যাডারদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে গেলে সেখানেও রাজনৈতিক স্বার্থ এসে বিচারের পথ রোধ করে দাঁড়ায়। ঢাকার দুজন মেয়রই ভেবেছিলেন, তারা নগরবাসীকে একটা জঞ্জালমুক্ত আধুনিক ঢাকা শহর উপহার দেবেন। কিন্তু তাদের নির্দেশে বিলবোর্ড সরানোই সম্ভব হচ্ছে না। অনেক ক্ষমতাবান ব্যক্তি জমি দখল করে নিচ্ছে, সেখানেও দখলকারীর পরিচয় তিনি ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিক। সুতরাং দখলদারিত্ব তার অধিকার।
এসব বলে তুমি কি বোঝাতে চাইছ?
রাজনীতির নামে এসব অপকর্ম যারা করে, আমরা তাদের প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছি।
তোমার কথাবার্তা কি বিরাজনীতিকরণের হোতাদের উসকে দেবে না?
আমি কখনও বিরাজনীতিকরণের পক্ষে নই, তা আপনিও জানেন। আমি মনে করি, রাজনীতি সর্বদা সুস্থধারায় প্রবাহিত হওয়া উচিত। আমি বললাম।
আমাদের আলোচনার এই পর্যায়ে চাচি ঘরে ঢুকলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, খুব সরগরম মনে হচ্ছে। আজকের আলোচনা কি নিয়ে?
রাজনীতি। আমি বললাম, রাজনীতি আমাদের দিয়েছে অনেক, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে কম নয়।
এজন্য রাজনীতি দায়ী নয়, দায়ী রাজনীতিকের আবরণে যারা অপকর্ম করছে, তারা। চাচি বললেন।
চাচা বিরক্ত হয়ে বললেন, তোমরা রাজনীতির অর্জনগুলো দেখছ না।
কি অর্জন? চাচির প্রশ্ন।
বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত চুক্তি কি একটা অর্জন নয়?
সেটা অবশ্যই অর্জন। আমি তা খাটো করে দেখছি না। কিন্তু ট্রানজিট? চাচি আবার প্রশ্ন করলেন।
সেটাও একটা বড় অর্জন।
চাচি ঘরের তাক থেকে একটা পত্রিকা হাতে তুলে নিয়ে বললেন, তুমি কি পত্রিকা পড়া বাদ দিয়েছ?
কেন?
পত্রিকার পাতা মেলে ধরে চাচি জানালেন, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ট্রানজিটের কারণে বাংলাদেশের কোন লাভ হবে না। ট্রানজিটের মাশুল বা অবকাঠামো উন্নয়নে ভারত কি দেবে সে বিষয়ে কোন চুক্তি বা নীতিমালা হয়নি। পুরো বিষয়টি নিয়ে সরকারের কোন পরিকল্পনা ছিল না। যে কারণে ইতিমধ্যেই ভারত মাশুল ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার শুরু করেছে।’
এসবই হচ্ছে ভারতবিরোধী কথা।
তা হবে কেন? এসব হচ্ছে বাংলাদেশের স্বার্থের কথা। আমি জানালাম।
তোমরা দেখছি নরেন্দ্র মোদির সফরের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের সাফল্য খাটো করতে চাও। চাচার বক্তব্য।
আমরা একজন ভারতীয় সাংবাদিকের মতামতের ভিত্তিতে নরেন্দ্র মোদির সফরের তাৎপর্য তুলে ধরতে চাই। বলে চাচি আরেকটা পত্রিকার পাতা মেলে ধরলেন।
কে তিনি? চাচার জিজ্ঞাসা।
কুলদীপ নায়ার। তিনি বলেছেন, ‘ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরটি হয়েছে অসময়ে। দেখে মনে হয়েছিল তিনি যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পড়তি ইমেজ ঠেকাতে বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। তিনি সেখানে কেবল ভারতবিরোধী অনুভূতিকেই আরও তীব্রতর করে তুলেছেন। কেননা, নয়াদিল্লিকে নিরপেক্ষ হিসাবে মনে হয়নি। আমি জানিনা কেন এবং কতদিন ধরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্তৃত্বপরায়ন শাসনকে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে আমাদের’।
কি আশ্চর্য! চাচা সবিস্ময়ে উচ্চারণ করলেন।
আশ্চর্যের কিছু নেই। চাচি জানালেন, ভারতের প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কূটনীতিক কুলদীপ নায়ার আরও অনেক কঠোর ও কঠিন কথা বলেছেন। সেটা পড়ে নিও। বাংলাদেশের মানুষের প্রকৃত মনোভাবই তার লেখায় উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের মানুষ কখনোই ভারত বিদ্বেষী নয়। চাচা উচ্চকণ্ঠে জানালেন।
বাংলাদেশের মানুষ খালেদা জিয়াও নয় যে, অবস্থান পরিবর্তন করে ভারত প্রেমের কথা ঘোষণা করবে। তবে আমরা সমতা ও সমমর্যাদার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে আগ্রহী।
তাহলে বাংলাদেশের মানুষের রাজনীতিটা কি?
আমরা বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশপ্রেমী। দলীয় রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বেরিয়ে আমরা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বুঝে নিতে চাই। এটাই বাংলাদেশীদের রাজনীতি। চাচি মৃদুকণ্ঠে বললেন।

No comments

Powered by Blogger.