ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ, মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ১০০ ঘরবাড়ি by রুহুল বয়ান

মহেশখালী গোরকঘাটা-শাপলাপুর সড়কের ছোট
মহেশখালী দক্ষিণ পাড়ায় বিকল্প সড়ক ভেঙে
যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন যান চলাচল l প্রথম আলো
ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের মহেশখালীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১০০ ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। তলিয়ে গেছে ফসলের জমি। সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। বিভিন্ন দপ্তরের হিসাবমতে, মোট ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি টাকা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গোরকঘাটা-শাপলাপুর, চালিয়াতলী-মাতারবাডী, মাতারবাড়ী-ধলঘাট, গোরকঘাটা-কুতুবজোম ও গোরকঘাটা-কালারমারছড়া ও জনতা বাজার সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। কিছু স্থানে দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে সড়ক। এসব স্থানে বন্ধ হয়ে গেছে গাড়ি চলাচল।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পৌর এলাকা, মাতারবাড়ী, হোয়ানক, বড় মহেশখালী ও ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের ২৩ গ্রামের ১০০ কাঁচা ঘরবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরও ৪০০ ঘরবাড়ি। আউশ, শাকসবজি ও পানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিলীন হয়ে গেছে বন বিভাগের সোনাদিয়ার ও ঘটিভাঙার ১০ হেক্টর বাগান। সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭ কিলোমিটার।
উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী গৌরাঙ্গ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ের আওতাধীন গোরকঘাটা-শাপলাপুর ও জনতা বাজার এবং গোরকঘাটা-ঘটিভাঙা সড়কের ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে ছয় কিলোমিটার ভেঙে গেছে। আট ইউনিয়নের ২৮২ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কের মধ্যে ভেঙে গেছে ৫০ কিলোমিটার সড়ক। বিশেষ করে মাতারবাড়ী-ধলঘাট সড়ক একেবারেই ভেঙে গেছে। ওই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে স্থানীয় লোকজন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ভেঙে যাওয়া ৫৬ কিলোমিটার সংস্কার করতে অন্তত ২৫ কোটি টাকা দরকার। তা না হলে সড়কগুলো সংস্কার সম্ভব হবে না।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আর পি বড়ুয়া বলেন, গোরকঘাটা-কালারমারছড়া সড়কের এক কিলোমিটার অংশ ভেঙে গেছে। সড়কটি সংস্কারের জন্য এক কোটি টাকা দরকার। তাই জরুরি ভিত্তিতে সড়ক সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
বন বিভাগের মহেশখালীর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুল হক জানান, ঝাউ ও ম্যানগ্রোভ বাগানের ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বড়মহেশখালী ও কুতুবজোম ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিদারুল আলম বলেন, উপজেলায় এবার ৬৫ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হচ্ছে। বর্ষণে সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে দুই হেক্টর জমির আউশ। আংশিক ক্ষতি হয়েছে আরও ১০ হেক্টর জমিতে। আর ১ হাজার ৫০০ হেক্টর পানবরজের মধ্যে সম্পূর্ণ ২৫ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩০ হেক্টর। ফলে আউশ, গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ও পান চাষে ক্ষতি হয়েছে অন্তত ৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শফিউল আলম বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। ভেঙে যাওয়া ঘর নির্মাণের জন্য অন্তত দুই কোটি টাকা প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনোয়ারুল নাসের বলেন, আপাতত শুকনো খাবার হিসেবে ৩০০ পরিবারের মধ্যে গুড় ও চিড়া এবং আরও ৩০০ পরিবারের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.