মানব পাচার আইনে চট্টগ্রামে ৩৪ মামলা- সাক্ষীরা আসেন না নিষ্পত্তি হয়নি একটি মামলাও by গাজী ফিরোজ

চট্টগ্রামে নগর ও জেলায় মানব পাচার আইনে ২০১২ সাল থেকে মামলা হয়েছে ৩৪টি। কিন্তু এখনো একটি মামলাও নিষ্পত্তি হয়নি। অথচ আইন অনুযায়ী, মামলার বিচার শেষ করতে হবে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে। চট্টগ্রামে মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল না থাকায় বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলাগুলোর বিচার চলছে।
সরকারি কৌঁসুলিরা জানান, চট্টগ্রামে মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে দায়ের করা মামলাগুলোর বিচার শেষ হচ্ছে না সাক্ষীর অভাবে। আদালত ধার্য তারিখে বেশির ভাগ সাক্ষী হাজির হন না।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বলেন, মানব পাচার প্রতিরোধ দমন আইনে আসামির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন এবং সর্বনিম্ন পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আইনে রয়েছে, ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। এ ছাড়া মামলাগুলো বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করতে হবে। চট্টগ্রাম আদালতে এ আইনের কোনো মামলায় বিচার না হওয়ায় পাচারকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে।
ফখরুদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, চট্টগ্রামকে পাচারকারীরা ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। এ জন্য চট্টগ্রাম আদালতে মানব পাচার প্রতিরোধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন করে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা উচিত।
পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে মানব পাচার আইন পাস হওয়ার পর থেকে নগর ও জেলায় মামলা হয়েছে ৩৪টি। এর মধ্যে বিচার শুরু হয়েছে ১৭টির, তদন্তাধীন রয়েছে ১৭টি মামলা।
তদন্তাধীন মামলাগুলোর মধ্যে পতেঙ্গা থানার মামলাটি আলোচিত। গত বছরের ১৮ নভেম্বর বঙ্গোপসাগর হয়ে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে নৌবাহিনীর সদস্যরা ৬২৫ জনকে উদ্ধার করেন। সিআইডি চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. কুতুব উদ্দিন বলেন, মানব পাচার আইনে দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে।
চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩–এর সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম বলেন, গত দুই বছরে ট্রাইব্যুনালে মানব পাচার আইনে করা কোনো মামলার রায় হয়নি। সাক্ষীদের পুলিশ হাজির করতে না পারায় মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া অভিযোগপত্র দিতেও দেরি করে পুলিশ।
জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান বলেন, সম্প্রতি এ মামলার সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জারি করা সমন ও পরোয়ানা আলাদা গুরুত্ব দিয়ে থানায় পাঠানো হচ্ছে। কিছুদিন পরপর থানার ওসিদের তাগাদা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট পরিদর্শক উনু মং দাবি করেন, এ মামলার সাক্ষীদের হাজির করতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটি গত ৮ জুন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে আয়োজিত সভা­য় সাক্ষী হাজির করানো ও পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন কমিটির সভাপতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। এর আগে গত ৯ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায়ও এ বিষয়ে তাগাদা দেওয়া হয়।
মেজবাহ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মানব পাচার রোধে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সাক্ষীদের হাজির ও তদন্ত শেষ করতে পুলিশকে বলা হয়েছে। সাক্ষীদের হাজির করতে পুলিশ ব্যর্থ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.