শিশু ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে -প্রথম আলোর গোলটেবিল বক্তারা

শিশু ভিক্ষাবৃত্তি মানবাধিকার লঙ্ঘন। এটা বন্ধ করতে হবে। এ জন্য সমন্বিত পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। যা হতে হবে টেকসই। এ ক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে সরকারি-বেসরকারি সংগঠনগুলোকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোর উদ্যোগে এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহযোগিতায় আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ সব কথা বলেন। ‘শিশু ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনে সুশীল সমাজ ও করপোরেট সেক্টরের ভূমিকা’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রথম আলোর কার্যালয়ে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম।
গোলটেবিল বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ভিক্ষাবৃত্তিতে কত শিশু নিয়োজিত তার কোনো তথ্য ভান্ডার নেই। এটা দরকার। তৈরি পোশাক শিল্পে শিশুশ্রম দূর করার উদাহরণ টেনে আনিসুল হক বলেন, শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে হলে তাদের পুনর্বাসন করতে হবে। এ সব শিশুদের বিদ্যালয়ে আনতে হবে। তাদের বাবা-মাকে স্বাবলম্বী করতে হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন কাজ করতে চায় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, তারা ইতিমধ্যে সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য ২০০ বিদ্যালয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। সেখানে ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক সুলতানা কামাল বলেন, ভিক্ষাবৃত্তি কোনো মানুষের পেশা হতে পারে না। শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি মানবাধিকার লঙ্ঘন। ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করতে সরকার ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব অনেক বেশি।
ভিক্ষুকদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে ফ্ল্যাট করে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানান সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এম এম সুলতান মাহমুদ। সমাজকল্যাণও এ বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
‘শিশু ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনে সুশীল সমাজ ও করপোরেট সেক্টরের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। প্রথম আলোর উদ্যোগে এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহযোগিতায় এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রথম আলোর কার্যালয়ে।
অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক গীতা চক্রবর্তী বলেন, ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত শিশুর সঠিক তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে ৫৫ শতাংশই ঢাকা শহরে বসবাস করে। এই শিশুদের মধ্যে প্রায় নয় শতাংশ ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র শিশুদের ভিক্ষাবৃত্তি প্রতিরোধে নেওয়া একটি প্রকল্প শুরুর আগে ঢাকা শহরে একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেই জরিপের তথ্য দিয়ে গীতা চক্রবর্তী বলেন, জরিপ চলার সময় দেখা যায়, ২৩৯ জন শিশুর মধ্যে ১৮৩ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের নিচে। ওই জরিপের ২৩৯ জন শিশুর মধ্যে মাত্র চার শিশু বলেছে তারা ভিক্ষাবৃত্তি করতে আগ্রহী। দরিদ্র পরিবারের অনেকেই উপার্জনের সহজ উপায় হিসেবে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেয়।
সিএসআরের নামে অনেক শুভংকরের ফাঁকি আছে বলে উল্লেখ করেন সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক মঈনুদ্দীন। শিশু ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধে সহায়তাকে বিনিয়োগ হিসেবে উল্লেখ করে এই ব্যাংকার বলেন, এটা সিএসআর হবে কেন? এটাতো বিনিয়োগ। এটা মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক নিশাত ফাতেমা রহমান, ইউনাইটেড হাসপাতালের যোগাযোগ ও উন্নয়ন বিভাগের প্রধান শাগুফা আনোয়ার, ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জেহরীন, ইকো কো অপারেশনের কান্ট্রি প্রোগ্রাম অফিসার হাসনা হেনা খান, সময় টেলিভিশনের বিপণন প্রধান আক্তার বাবু।

No comments

Powered by Blogger.