‘ভুল–বোঝাবুঝি’ বলছে পুলিশ: মাদক জব্দের পর র্যাবের মামলা by গাজী ফিরোজ

প্রায় এক বছর আগে চট্টগ্রামে একটি হোটেলের রান্নাঘর থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করেছিল র্যাব। অভিযানে গ্রেপ্তার হন হোটেলের ব্যবস্থাপকও। তবে তদন্ত শেষে র্যাবের মাদক জব্দ করার বিষয়টিকে হোটেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘ভুল-বোঝাবুঝি’ বলছে পুলিশ। ইতিমধ্যে এই মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তবে পুলিশ ‘প্রভাবিত’ হয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন এই মামলার সরকারি কৌঁসুলি।
আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. শাহেনূরের আদালতে এই মামলায় পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের নারাজি আবেদনের শুনানির বিষয়ে দিন ধার্য রয়েছে। গত বছরের ৯ আগস্ট মদ জব্দের ঘটনায় র্যাব বাদী হয়ে মামলা করে। তদন্ত শেষে একই বছরের ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।
মামলার নথি অনুযায়ী, গত বছরের ৯ আগস্ট চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকার হোটেল শাহজাহানে (আবাসিক) অভিযান চালায় র্যাব-৭। হোটেলের দ্বিতীয় তলার রান্নাঘরের পাশে বিক্রির উদ্দেশ্যে মজুত রাখা দেশি-বিদেশি ২৫৪টি মদের বোতল ও ১৭০ ক্যান বিয়ার জব্দ করে র্যাব। হোটেলের ব্যবস্থাপক মো. শহীদ উল্লাহকেও গ্রেপ্তার (বর্তমানে জামিনে) করা হয়। এ ঘটনায় র্যাব-৭-এর উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুস সাত্তার খান বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইন এবং মাদক আইনে সদরঘাট থানায় মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার হোটেলের ব্যবস্থাপক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহেদ হোসেন ও হোটেলের কর্মী প্রাণতোষ মজুমদারকেও আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, জব্দ করা মাদকের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি আসামি।
চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, হোটেল শাহজাহানের বার লাইসেন্স রয়েছে। এই হোটেলে দেশি-বিদেশি মদ বিক্রি করা হয়। র্যাবের অভিযানের সময় ব্যবস্থাপনা পরিচালক উপস্থিত না থাকায় বার লাইসেন্স ও মালামালের চালান দেখানো সম্ভব হয়নি। তদন্তে ঘটনাটি ভুল-বোঝাবুঝি বলে প্রমাণিত হয়েছে। আসামিদের মামলা থেকে অব্যাহতি এবং জব্দ করা মালামাল মালিককে ফেরত দিতেও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
র্যাবের করা মাদক মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদরঘাট থানার সাবেক উপপরিদর্শক মজিবুর রহমান (বর্তমানে ঢাকায় সিআইডিতে কর্মরত) গতকাল বুধবার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্তে যা পাওয়া গেছে, তাই বলা হয়েছে।’ সরকারি কৌঁসুলির নারাজি আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আদালত আবেদনটি গ্রহণ না করলে পুনঃ তদন্ত হবে। বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার।’
চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে গত ১৮ জুন আদালতে নারাজি আবেদন করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, জব্দ করা মদ হোটেলের বার থেকে উদ্ধার হয়নি। এসব পাওয়া গেছে হোটেলের দ্বিতীয় তলায় রান্নাঘরের পাশ থেকে। মদ বৈধভাবে সংগ্রহ করা হলে বারে থাকত। রান্নাঘরের পাশে রাখা হতো না। এসব মদ আমদানি করা হয়েছে, তার কোনো প্রমাণও দেখাতে পারেননি আসামিরা। এসব মদ মজুত রাখতে হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স নিয়ে মজুত করতে হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর সরকারি কৌঁসুলি অভিযোগ করেন, তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়ার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
জানতে চাইলে হোটেল শাহজাহানের ব্যবস্থাপক মো. শহীদ উল্লাহ গতকাল দুপুরে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, র্যাবের জব্দ করা মদের কাগজপত্র রয়েছে। তবে তাঁরা র্যাবকে তা দেখাতে পারেননি। বারে না রেখে হোটেলের রান্নাঘরে কেন মদ রাখা হয়েছিল, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লোকজন প্রায়ই বিরক্ত করে। তাই বারে না রেখে রান্নাঘরের পাশে মদগুলো মজুত রাখা হয়েছিল।
তবে এই মামলার বাদী র্যাবের উপসহকারী পরিচালক মো. আবদুস সাত্তার খান (বর্তমানে ঢাকায় র্যাব-৩-এ কর্মরত) দাবি করেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে নিয়ম অনুযায়ী তদন্তের ফল তাঁকে জানানোর কথা থাকলেও তা জানানো হয়নি। তিনি বলেন, অভিযানে জব্দ করা মাদকের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি হোটেল কর্তৃপক্ষ।

No comments

Powered by Blogger.