চট্টগ্রামে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ: সড়ক অবরোধ, দুর্ভোগ

চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় গতকাল দুপুরে সড়ক অবরোধ
করেন পোশাকশ্রমিকেরা। তাঁদের রাস্তা থেকে সরে যেতে ও
অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে অনুরোধ করে পুলিশ
কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদে এবং ওভারটাইম পরিশোধসহ বিভিন্ন দাবিতে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত নগরের ব্যস্ততম এই সড়ক অবরোধের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
পুলিশ জানায়, আকস্মিক শ্রমিক অবরোধের কারণে নগরের ২ নম্বর গেট থেকে অক্সিজেন মোড় পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। বায়েজিদ এলাকার গ্লোরি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের পোশাক কারখানার কয়েক শ শ্রমিক এ অবরোধ করেন।
কারখানায় প্রায় ১ হাজার ৮০০ শ্রমিক কাজ করেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি পূরণে লিখিত আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। এরপর যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
আন্দোলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন শ্রমিক জানান, তাঁদের ২০১৩ সালের বার্ষিক ছুটির ভাতা (ছুটির সময় কাজ করার মজুরি) এখনো পরিশোধ করা হয়নি। গত মে মাসের ওভারটাইমও দেওয়া হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সব সময় তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
শ্রমিকেরা জানান, গতকাল বেলা দেড়টার দিকে প্রথমে কারখানার ভেতরে তাঁরা বিক্ষোভ করেন। সেখানে এক ঘণ্টা অবস্থানের পর কারখানার পাশে চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা এবং সড়কের দুদিকে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, শ্রমিকদের অবরোধের কারণে ২ নম্বর গেট থেকে অক্সিজেন মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই দিকে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে। এ সময় অনেকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দেন। বিকেল চারটার দিকে কথা হয় যানজটে আটকা পড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আলতাফ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘শ্রমিকেরা রাস্তায় নামলে মালিকপক্ষ তখন বেতন-ভাতা পরিশোধ করে। এর মধ্যে দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের।’
অটোরিকশাচালক আবদুল জলিল জানান, শ্রমিকদের অবরোধের কারণে বায়েজিদ বোস্তামী মাজারের সামনের সড়কে গাড়ি নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা বসে আছেন তিনি।
কারখানার মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা হঠাৎ বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের দাবিগুলো কারখানা কর্তৃপক্ষকে আগে জানানো হয়নি। শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের বিষয়টি তাঁর জানা নেই বলে জানান তিনি।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ প্রথম আলোকে বলেন, তিন-চার শ শ্রমিক বিভিন্ন দাবিতে বায়েজিদ সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে দাবি পূরণে আশ্বাস দিলে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ তুলে নেন। তিনি জানান, অবরোধের পরপরই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে নগর পুলিশের এক প্লাটুন ও শিল্প পুলিশের দুই প্লাটুন সদস্য ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়।
কারখানাটি স্যানমান গ্রুপের মালিকানাধীন। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. সাজিবুল হক জানান, শ্রমিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী কর্মকর্তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাঁদের অন্য দাবিগুলোও পূরণ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.