জাবির আকাশে উড়লো মনুষ্যবিহীন আকাশযান by নুর আলম

নতুন কিছু করার ভাবনা এবং এই যুগোপযোগী প্রযুক্তিকে দেশীয় কাজে লাগানোর অনুপ্রেরণা থেকেই মূলত এ যানটি তৈরি করার কথা, বলছিলেন কোয়াডকপ্টার (চার পাখা বিশিষ্ট) নামক মনুষ্যবিহীন আকাশযানের নির্মাতা শওকত আলী। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই প্রথম দেশীয় যন্ত্রাংশ দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইটি বিভাগে (পিএমআইটি প্রোগ্রামের) তিন শিক্ষার্থী তৈরি করলেন কোয়াডকপ্টার নামক ড্রোন। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রকল্প হিসেবে এই ড্রোনটি তৈরি করেছেন সুরাত-ই- মোস্তফা, শওকত আলী এবং রফিকুল ইসলাম। প্রকল্পটি তৈরি করতে তাদের খরচ হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা। এই প্রকল্পটির তত্ত্বাবধায়ন করেন আইআইটি প্রভাষক জামশেদ ইকবাল চৌধুরী এবং সার্বিক সহযোগিতা করেন আইআইটি সহকারী অধ্যাপক এম শামীম এবং শামীম আল মামুন।  ড্রোনটি আকাশে উড্ডয়নের জন্য চারটি আলাদা পাখা আছে। ব্যাটারি চালিত এই ড্রোনটি একবার চার্জ করা হলে বিশ মিনিট পর্যন্ত আকাশে উড়তে পারবে। ড্রোনটি প্রায় এক কেজি বেশি ওজন বহন করতে সক্ষম। বর্তমানে এটিকে ৫০ মিটার দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে  ২-৩ কিলোমিটার দূর থেকেও ড্রোনকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে জানান নির্মাতারা। ড্রোনটির সাহায্যে সঠিক সময়ে ভৌগোলিক অবস্থানসহ দূরবর্তী নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে সেন্সরের তথ্য যেমন, তাপমাত্রা, বায়ুচাপ, আর্দ্রতা ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গা ও উচ্চতা থেকে সংগ্রহ করা যাবে। এ ছাড়া ড্রোনটিতে ক্যামেরা যুক্ত করা হলে এটির সাহায্যে সরাসরি ভিডিও চিত্র প্রেরণ, ছবি তোলা, চিকিৎসা সেবা পাঠানো, নিরাপত্তা ব্যবস্থা থেকে শুরু করে জরিপের কাজেও ব্যবহার করা যাবে। ড্রোনটিতে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) লাগানোর ব্যবস্থাও আছে। এটি লাগানোর পর লক্ষ্যবস্তু স্থির করলেই সেখানে ড্রোনটি পৌঁছে যাবে। এ বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক আইআইটি প্রভাষক জামশেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, দেশীয় বাজারের যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি করা কাঠামো এবং মাইক্রো কন্ট্রোলারের প্রোগ্রামিং এর সাহায্যে ড্রোনটি  তৈরি করা হয়েছে। আমাদের দেশে এখনও এই প্রযুক্তির চর্চা এবং উন্নয়ন সেভাবে শুরু হয়নি। এরূপ প্রযুক্তির ব্যবহারের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে উদ্ভাবনের খরচ এবং যন্ত্রাংশের স্বল্পতা। তবে দেশীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার করাই খুব কম খরচেই এটা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। আইআইটি সহকারী অধ্যাপক শামীম আল মামুন বলেন, এ আকাশযানটির সাহায্যে যেসব কাজ মানুষের প্রাণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অথবা যেসব কাজে মানুষ সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারে না সেখান থেকে খুব সহজেই তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। যদিও এই প্রকল্পটি কোন নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়নি। ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক কাজে ব্যবহার করা যায় এরূপ ড্রোন তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.