ব্যবসায়ীদের মুখে চওড়া হাসি by মনিরুজ্জামান

ন​রসিংদীর বাবুরহাটের একটি দোকানে কেনাবেচা l প্রথম আলো
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে ট্রাকের দীর্ঘ সারি। ওঠানো-নামানো হচ্ছে বড় বড় কাপড়ের গাঁট। অলিগলিতেও হাজারো ব্যবসায়ী-ক্রেতার ভিড়। বেশির ভাগ দোকানের সামনেই একাধিক ভ্যান দাঁড়িয়ে। সেগুলোতেও তোলা হচ্ছে কাপড়। তবে তাঁদের মতে, ভারতীয় বা চীন নয়, এবারের ঈদবাজারে ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি চাহিদা দেশীয় থ্রিপিস ‘কিরণমালা’র প্রতি। দামে কম হওয়ায় বিক্রি বেশি হচ্ছে এই থ্রিপিস। ঈদ সামনে রেখে দেশের পাইকারি কাপড়ের অন্যতম বাজার নরসিংদী সদর উপজেলার শেখেরচর-বাবুরহাটে এমন জমজমাট চিত্র এখন প্রতিদিনের। সাধারণত শুক্র, শনি ও রোববার সাপ্তাহিক হাট বসলেও ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনার জন্য এখন সাত দিনই বসছে। হাটের বিক্রেতাদের দম ফেলার ফুরসত নেই। বেচাবিক্রি ভালো হওয়ায় এবার তাঁদের মুখে চওড়া হাসি।
শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস, শার্ট পিস, প্যান্ট পিস, থান কাপড়, পাঞ্জাবির কাপড়, গামছা, বিছানার চাদরসহ প্রায় সব ধরনের দেশীয় কাপড় পাওয়া যায় এখানকার ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার দোকানে। আর এই বাবুরহাটকে কেন্দ্র করে নরসিংদীজুড়ে গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক টেক্সটাইল, ডায়িং, এমব্রয়ডারিসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানা। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। ঈদ সামনে রেখে এসব শিল্প-কারখানার শ্রমিকেরাও এখন ব্যস্ত।
ঈদকেন্দ্রিক বিশাল চাহিদার কথা মাথায় রেখে বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরা বড় আকারে প্রস্তুতি নেন এবং সব ধরনের কাপড়ের পসরা সাজান। আর সারা দেশের খুচরা বিক্রেতারা রোজার শুরুতেই নতুন কাপড় কিনতে এখানে হাজির হন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় উৎপাদিত কাপড়ের পাশাপাশি বিদেশ থেকে আমদানি করা কাপড়ও বিক্রি হয় এই মোকামে।
সরেজমিনে গত শুক্রবার বাবুরহাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি অলিগলিতে ভ্যানের লম্বা সারি। ক্রেতারা যেমন উৎসাহে আছেন, তেমনি বিক্রেতারাও রয়েছেন উচ্ছ্বাসে। ব্যবসায়ীরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে বাবুরহাটে সাপ্তাহিক বেচাকেনা দুই হাজার কোটি টাকা হলেও ঈদ ঘিরে ব্যবসা দ্বিগুণ হচ্ছে।
বাবুরহাট বাজারে জেএম ফ্যাশনে কথা হয় হবিগঞ্জ থেকে কাপড় কিনতে আসা ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় এবং এক জায়গাতেই সব কাপড় পাওয়া যায় বলে ব্যবসায়ীদের কাছে এই হাট জনপ্রিয়। কাপড়ের দাম অনেক কম। আর সবচেয়ে বড় কথা—এখানে কোনো খাজনা দিতে হয় না।’
আর-টেক্স প্রিন্ট শাড়ির দোকানে ময়মনসিংহের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘মফস্বলের মানুষেরা একমাত্র ঈদের সময়ই কাপড় কেনেন। আর বাবুরহাটে সব ধরনের ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী সব মানের কাপড় পাওয়া যায়। তাই আমরা এখানেই আসি।’
পাকিজা ফেব্রিকস কালেকশন বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক শংকর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘এবার ঈদে শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিস ও থান কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে কিরণমালার জয়জয়কার। দামে একেবারে কম হওয়ায় চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, পাকিজার কাপড় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বিষয়টি চিন্তা করে দাম নির্ধারণ করায় বেচাকেনা ২-৩ গুণ বেশি হয়েছে। এ ছাড়া কাপড়ে গুণগত মানের পাশাপাশি এবার ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে।
আমানত শাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান হেলাল মিয়া বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে আমরা ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ৩০০ থেকে ২০০০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন মানের নতুন লুঙ্গি এনেছি। আধুনিকতায় লুঙ্গি ব্যবহারের প্রবণতা কমলেও ঈদ সামনে রেখে সবাই নতুন লুঙ্গি কেনেন।’
বাবুরহাট বণিক সমিতির সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, গত তিন ঈদে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বেচাকেনা করতে পারেননি বাজারের ব্যবসায়ীরা। বসে বসে কর্মচারীদের বেতন ও দোকান ভাড়া দিয়ে লোকসান গুনতে হয়েছে। এই ঈদে আশানুরূপ বেচাকেনা হচ্ছে। ঈদ উপলক্ষে প্রতি হাটে সাত-আট শ কোটি টাকার কাপড় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.