গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশদানকারী বিচারককে বদলি

গাইবান্ধায় আদালতের কর্মচারীকে মারধরের ঘটনায় গতকাল সোমবার পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হননি। যাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন থানার ওসি ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১০ জন। এঁরা কেউ আদালতে জামিনের জন্য আবেদনও করেননি। এদিকে পরোয়ানার আদেশদানকারী বিচারককে বদলি করা হয়েছে।
আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশদানকারী গাইবান্ধার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম এস এম তাসকিনুল হককে বদলির আদেশ জারি করা হয়েছে। সরকারের এই বদলি-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের তারিখ ৫ জুলাই উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তাঁকে বদলি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, তাসকিনুল হককে বদলির কোনো প্রস্তাব রেজিস্ট্রার কার্যালয় পায়নি। আইন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে গোবিন্দগঞ্জ চৌকির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. নাহিদুজ্জামানকে বদলির প্রস্তাব এসেছিল এবং তাতে সম্মতি দেওয়া হয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে ১ নম্বর ক্রমিকে নাহিদুজ্জামান ও দ্বিতীয় ক্রমিকে তাসকিনুল হকের নাম দেখা যাচ্ছে। প্রশ্নের উত্তরে সুপ্রিম কোর্ট রেজিস্ট্রারের দপ্তর সূত্র নিশ্চিত করেছে যে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন ব্যতিরেকে বিচারক বদলির কোনো সুযোগ নেই।
এদিকে গাইবান্ধার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে জেলা পুলিশ। অভিযুক্ত আট পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁরা হচ্ছেন, গাইবান্ধা ডিবি (গোয়েন্দা) পুলিশের উপপরিদর্শক রাকিব হোসেন এবং কনস্টেবল রফিক, ওই ব্যাংক শাখায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সহকারী উপপরিদর্শক আইয়ুব হোসেন, পুলিশ কনস্টেবল সাদ্দাম, সাইমুম, শাহিনুর, আবদুল্লা ও বাবলু।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন আট পুলিশ সদস্যকে লাইনে ক্লোজড করার কথা নিশ্চিত করেছেন।
তবে গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজিউর রহমানকে কারণ দর্শাও নোটিশ দেওয়া হয়। তবে সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা শাখার ব্যবস্থাপক আয়েশ উদ্দিনকে গত রোববার ও গতকাল সোমবার ব্যাংকে দেখা যায়নি।
অভিযোগে জানা যায়, ২ জুলাই গাইবান্ধার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের কর্মচারী কমল চৌধুরী দুটি চেক নিয়ে সোনালী ব্যাংক গাইবান্ধা শাখায় যান। তিনি ব্যাংকে গিয়ে দেখেন, সহকারী উপপরিদর্শক আইয়ুব হোসেন নিজেই ক্যাশ কাউন্টারের ভেতর চেকের সিরিয়াল ওলটপালট করছেন। এ সময় ওই আদালতের রেকর্ড কিপার মোজাম্মেল হক, ক্যাশিয়ার জুয়েল কবীরসহ অন্য গ্রাহকেরা তাঁর এ কাজের প্রতিবাদ জানান। এ নিয়ে আইয়ুব হোসেন ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁদের ধমক দেন। তখন কমল চৌধুরী উভয় পক্ষকে শান্ত হতে বললে তিনি উত্তেজিত হয়ে তাকে গালাগাল দেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে গাইবান্ধা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক রাকিব হোসেনের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশের লোকজন ব্যাংকে গিয়ে শাখা ব্যবস্থাপকের কক্ষে বসা কমল চৌধুরীকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করেন। তাঁকে রক্ষায় এগিয়ে এলে আদালতের রেকর্ড কিপার মোজাম্মেল হক, ক্যাশিয়ার জুয়েল কবীরকেও মারধর করা হয়।
এ ঘটনায় কমল চৌধুরী বাদী হয়ে রোববার দুপুরে গাইবান্ধা সদর থানার ওসিসহ ১০ জনকে আসামি করে গাইবান্ধার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ওই দিনই ১০ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই আদেশ তামিল করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সহকারী পুলিশ সুপারকে (এ সার্কেল) নির্দেশ দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.