গ্রিসে ‘না’ জয়ী, ইউরোপীয় নেতাদের মুখ গোমড়া

গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে উড়ছে জাতীয় পতাকা। দেশটির জনগণ রোববার প্রমাণ করেছে, তারা কারও কাছে নতি স্বীকার করেনি। ছবি: এএফপি
গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে উড়ছে জাতীয় পতাকা। দেশটির জনগণ রোববার প্রমাণ করেছে, তারা কারও কাছে নতি স্বীকার করেনি। ছবি: এএফপি
গ্রিসে গণভোটের ফলাফলের বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা। তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় হতাশার সঙ্গে আছে সতর্কতা।  গ্রিসে গতকাল রোববারের গণভোটে ‘না’ ভোট সুস্পষ্টভাবে জয়ী হয়েছে। গণভোটের চূড়ান্ত ফলে দেখা যায়, ‘না’ ভোট পড়েছে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ। বিপরীতে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, এই রায়ের মধ্য দিয়ে গ্রিসের জনগণ খুব শক্ত করে ঋণদাতাদের দেওয়া কঠোর কৃচ্ছ্রসাধনের শর্তসংবলিত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রস্তাব (বেইল আউট) প্রত্যাখ্যান করেছে।
‘না’-এর মানে আলোচনার সব পথ শেষ। ঋণদাতাদের কাছ থেকে আর আর্থিক সহায়তা পাওয়ার পথ বন্ধ। এ মাসের মধ্যে ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) ৩০০ কোটি ইউরো গ্রিসকে ফেরত দিতে হবে। গ্রিসকে ইউরোজোন থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে।
‘না’ ভোটের জয় উদ্‌যাপনে গতকাল রোববার গ্রিক পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয় হাজারো জনতা। ছবি: রয়টার্স
‘না’ ভোটের জয় উদ্‌যাপনে গতকাল রোববার গ্রিক পার্লামেন্টের সামনে জড়ো হয় হাজারো জনতা। ছবি: রয়টার্স
গণভোটের ফলাফলের প্রতিক্রিয়ায় গ্রিসের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পানোস কামেনোস বলেছেন, জনগণ প্রমাণ করেছে, ভয় দেখিয়ে কারও স্বার্থ হাসিলের চেষ্টার কাছে তারা নতি স্বীকার করেনি। গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা সব সময় হুমকি দিয়ে এসেছেন, গ্রিস যদি ইউরোজোনে থাকতে চায়, তাহলে ‘হ্যাঁ’ ভোটের বিকল্প নেই। কিন্তু গ্রিসের ভোটাররা এই হুমকিকে সরাসরি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন।
ইউরোজোন থেকে গ্রিসকে বের করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি তারা পরোয়া করেননি। ইউরোপীয় নেতাদের মুখের ওপর বলে দিয়েছেন, ‘না’।
‘না’ ভোটের সমর্থকদের সঙ্গে রোববার বিজয় উদ্‌যাপন করছেন গ্রিস পার্লামেন্টর প্রেসিডেন্ট। ছবি: এএফপি
‘না’ ভোটের সমর্থকদের সঙ্গে রোববার বিজয় উদ্‌যাপন করছেন গ্রিস পার্লামেন্টর প্রেসিডেন্ট। ছবি: এএফপি
গ্রিসের জনগণের এমন রূঢ় জবাবে ইউরোপীয় নেতারা হতভম্ব। ইউরোজোনের অর্থমন্ত্রীদের নেতা জেরোয়েন ডিজেলব্লোয়েম তাঁর প্রতিক্রিয়ায় গণভোটের ফলাফলকে ‘খুবই দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। এই ডাচ অর্থমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এ ফল গ্রিসের ভবিষ্যতের জন্য খুব দুঃখজনক।’
গ্রিসের বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে আজ সোমবার ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ।
গণভোটের ফলাফলের পর ইউরোপ ও এথেন্সের মধ্যে শেষ সেতুবন্ধনটাও ভেঙে ফেলতে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাসকে অভিযুক্ত করেছেন জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর সিগমার গ্যাবরিয়েল। তিনি বলেছেন, ইউরোজোনের নিয়মের প্রতি ‘না’ বলার মধ্য দিয়ে সমঝোতা অকল্পনীয় হয়ে উঠেছে।
পরে জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, গণভোটের ফল নিয়ে ফোনে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জার্মানির চ্যান্সেলর। ম্যার্কেল ও ওলাঁদ গতকাল রাতে ফোনে সিপ্রাসের সঙ্গে কথা বলেছেন। গ্রিসের জনগণের রায়ের প্রতি সম্মান দেখাতে তাঁরা একমত হয়েছেন।
‘না’ ভোটের জয় উদ্‌যাপন করছেন গ্রিসের উৎফুল্ল জনতা। ছবি: এএফপি
‘না’ ভোটের জয় উদ্‌যাপন করছেন গ্রিসের উৎফুল্ল জনতা। ছবি: এএফপি
গণভোটের ফলের প্রেক্ষাপটে ইউরোজোনের নেতাদের নিয়ে কাল মঙ্গলবার একটি সম্মেলন করার অনুরোধ আসার পর তাতে তাৎক্ষণিক সায় দিয়েছেন ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক।
ইউরোপীয় কমিশন এই গণভোটের ব্যাপারে আঁটোসাঁটো বিবৃতি দিয়েছে। এতে গণভোটের ফলাফলে প্রতি সম্মান দেখানোর কথা বলা হয়েছে।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট জাঁ-ক্লদ জাঙ্কার আজ ইসিবির প্রধান ও ইউরোজোনের অর্থমন্ত্রীদের নেতা ডিজেলব্লোয়েমের সঙ্গে টেলিকনফারেন্স করবেন।
স্লোভাক অর্থমন্ত্রী পিটার কাজিমির টুইটারে লিখেছেন, ইউরোজোন ছাড়ার কাছাকাছি গেছে এথেন্স।
ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী টিমো সোইনি তাঁর দেশের একটি টেলিভিশনকে বলেছেন, ইউরোজোনে গ্রিসের ভাগ্য নির্ভর করছে ইউরোপীয় করদাতাদের ইচ্ছার ওপর।
গণভোটের ফলাফলে পোল্যান্ডও হতাশ।
গ্রিসের গণভোট বেদনাদায়ক দিনের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন ইইউ পররাষ্ট্রনীতির প্রধান ফেডারিকা মোগেরিনি। ছবি: রয়টার্স
গ্রিসের গণভোট বেদনাদায়ক দিনের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন ইইউ পররাষ্ট্রনীতির প্রধান ফেডারিকা মোগেরিনি। ছবি: রয়টার্স
লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট দালিয়া গ্রেবাউসকাইতে বলেন, গ্রিসের গণভোট পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এস্তোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী তাভি রইভাস টুইটারে লিখেছেন, গ্রিসের জনগণের ভাগ্যে ভালো কিছু দেখছেন না তিনি।
লাটভিয়ার প্রধানমন্ত্রী লাইডমোটা স্ট্রুজুমা টুইটারে লিখেছেন, গ্রিসের জনগণের ‘না’ ভোট ভবিষ্যৎ সমঝোতাকে খুবই কঠিন করে তুলবে।
তবে লাটভিয়ার প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র আইভা রোজেনবার্গ বলেন, গ্রিস ফিরতে চাইলে সমঝোতার দরজা খোলা রাখবে ইউরোপ।
গণভোটকে ইউরোজোন থেকে গ্রিসের বেরিয়ে যাওয়ার একটি পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে রাশিয়া।
গ্রিসের গণভোটের ফলাফলে ইউরোপপন্থীরা যখন হতাশ, তখন এতে বেশ খুশি ইউরো ও কৃচ্ছ্রবিরোধীরা।
এই ঘরানার একজন ইউকে ইনডিপেনডেন্স পার্টির নাইজেল ফ্যারাজ। টুইটারে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় গ্রিসের ভোটারদের প্রশংসা করেছেন তিনি।
স্পেনের প্রগতিবাদী বাম পোদেমস দল এই ফলাফলে রীতিমতো উল্লসিত। দলটির নেতা পাবলো ইজেলেসিয়াস টুইটারে লিখেছেন, ‘গ্রিসে আজ গণতন্ত্র জয়ী হয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.