পুলিশ ছেড়ে দেওয়ার পরই আওয়ামী লীগে

পুলিশের কাছ থেকে গতকাল সকালে ছাড়া পেয়ে বিকেলে
আওয়ামী লীগে যোগ দেন ছালামত আলী (ফুল হাতে
চশমা পরা)। তাঁর পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা
রোববার বিকেলে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, মামলার কারণে ছালামত আলীকে আটক করা হয়েছে। তবে গতকাল সোমবার সকালে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার পর বিকেলেই তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ছালামত আলী রাউজানের যুবলীগের কর্মী মোবারক হোসেন হত্যা মামলার আসামি।
বিএনপির এই নেতাকে গতকাল বিকেলে রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নিয়ে যান নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি দিদারুল আলম। তাঁর দাবি, ছালামত আলী স্বেচ্ছায় আওয়ামী লীগে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ কারণে তাঁকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে নিয়ে যান তিনি। ছালামত আলীর বিরুদ্ধে যুবলীগের কর্মী হত্যা মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি তাঁর জানা নেই।’
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে বিএনপির নেতা ছালামত আলীর মুঠোফোনে গতকাল সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজশাহীর চারঘাটে ভোটকেন্দ্র পোড়ানো মামলার আসামি ও কৃষক দলের এক নেতা পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের হাতে ফুল দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন।
রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিয়ে বিএনপির এই নেতার আকস্মিক দলবদলের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। তবে শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছালামত আলী স্বেচ্ছায় আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তাঁকে দলে যোগদান করার ব্যাপারে জোর করা হয়নি।’
মামলার আসামিকে আদালতে পাঠানোর পরিবর্তে আওয়ামী লীগে যোগদান করানো আইনসিদ্ধ কি না—এ প্রশ্নের জবাবে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁর (ছালামত আলী) বিরুদ্ধে মামলা থাকলে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে। আওয়ামী লীগে যোগদানের সঙ্গে মামলার সম্পর্ক নেই।’
গত রোববার বিকেলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির ইফতার মাহফিলে যোগ দিতে যাওয়ার সময় নগরের জামালখান এলাকা থেকে ছালামত আলীকে আটক করে পুলিশ। এ নিয়ে গতকাল প্রথম আলোয় ‘ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে বিএনপি নেতা আটক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। বিএনপির নেতাকে আটকের বিষয়ে গত রোববার চট্টগ্রামের হাটহাজারী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মশিউদ্দৌলা রেজা প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, ছালামত আলীর বিরুদ্ধে অনেক মামলা রয়েছে। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে গতকাল জানতে চাইলে মশিউদ্দৌলা বলেন, ‘আমি রোববার রাতেই ঢাকার উদ্দেশে চট্টগ্রাম ত্যাগ করি। বিষয়টি রাউজান থানার ওসি ভালো বলতে পারবেন।’
পুলিশ সূত্র জানায়, রোববার বিকেলে আটকের পর ছালামত আলীকে রাউজানের নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়িতে রাখা হয়।
মামলার কোনো আসামি আটক বা গ্রেপ্তার হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার নিয়ম। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আইয়ুব খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফৌজদারি মামলার আসামি আটক বা গ্রেপ্তার হলে তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই আসামি জামিন পাবেন নাকি কারাগারে যাবেন, তা আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।’
জানতে চাইলে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছালামত আলী এখন মুক্ত। তিনি বাড়িতে চলে গেছেন।’ মামলার আসামিকে আটকের পর আদালতে পাঠানোর পরিবর্তে ছেড়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়ে গেছে। এ জন্য তাঁকে আদালতে পাঠানোর প্রয়োজন হয়নি।’
ছালামত আলীর বিরুদ্ধে যুবলীগের কর্মী খুনের ঘটনায় করা মামলার তথ্য ওসি নিশ্চিত করলেও তাঁর বিরুদ্ধে আর কী কী মামলা রয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি।

No comments

Powered by Blogger.