ফেলানী হত্যাকাণ্ড: ন্যায়বিচার না পাওয়ার ক্ষত শুকানোর নয়

বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ফেলানী খাতুন হত্যার ঘটনায় করা মামলায় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যের নির্দোষ হওয়ার খবর প্রকৃতপক্ষে বিচারহীনতারই নামান্তর। অভিযুক্ত সদস্য অমিয় ঘোষকে দোষী প্রমাণের মূল দায়িত্ব ছিল কোনো স্বাধীন কৌঁসুলির। অথচ সেই সুযোগ ভুক্তভোগীর পরিবার পায়নি, কারণ তারা কোনো আইনজীবী নিয়োগ করতেই পারেনি। উপরন্তু বিএসএফের নিজস্ব কর্মকর্তাদের যাঁরা এর আগে অমিয়কে খালাস দিয়েছিলেন, সেই একই আদালতকে দিয়েই এবারের কথিত পুনর্বিচার সম্পন্ন করানো হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। বিচারের বিষয়ে একটি প্রবাদতুল্য কথা আছে যে, বিচার নিশ্চিত করলেই হবে না, ন্যায়বিচার যে করা হয়েছে তা প্রতীয়মানও হতে হবে। এখন ফেলানী হত্যাকাণ্ডের পুনর্বিচার প্রক্রিয়াকে কোনোক্রমেই এই সংজ্ঞার আলোকে ন্যায়বিচার বলা যাবে না।
উপরন্তু এই বিচারের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বড়কর্তারা যে আমাদের শান্তিপূর্ণ সীমান্ত গড়ার আশ্বাস দিয়ে থাকেন, তাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে রাখে। এই মামলায় আগে যে রায় হয়েছিল, তা পুনর্বিবেচনা করতে বিএসএফ যে ধরনের দীর্ঘসূত্রতার আশ্রয় নিয়েছিল, তাতে করে কেবল বাংলাদেশ নয়, ভারতসহ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সচেতন মানুষের মনে ন্যায়বিচার না পাওয়ার মতো একটি বোধের জন্ম নেওয়াই স্বাভাবিক। সুতরাং কোর্ট মার্শালতুল্য বিএসএফের নিজস্ব আদালতে পুনরায় যে ‘বিচার’ হলো, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন মাসুম বলেছে, এই রায় ভারতের সংবিধান ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থী। আমরাও তাই মনে করি। বড় কথা, ফেলানী যে বিএসএফের গুলিতেই নিহত হয়েছিল, তা নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাম্প্রতিক আলোচিত সফরের রেশ মিলিয়ে না যেতেই ফেলানী হত্যাকাণ্ডের বিচার বঞ্চনার খবর ছড়িয়ে পড়ল।
ফেলানীর মা রায় শুনে কেঁদেছেন। এই কান্না এপারের-ওপারের নিরীহ মানুষেরও কান্না। ভারত সরকারের উচিত হবে সম্পর্কের যে নতুন উচ্চতা, তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সীমান্তকে শান্তির সীমান্তে পরিণত করা।

No comments

Powered by Blogger.