ছিটমহলে যৌথ জনগণনা শুরু

পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ ও ভারতের ভেতরে থাকা ১৬২টি ছিটমহলে গতকাল সোমবার থেকে যৌথ জনগণনা শুরু হয়েছে। চলবে ১৬ জুলাই পর্যন্ত। ২০ জুলাই করা হবে ফলাফল প্রকাশ। এর আগে সর্বশেষ গণনা হয়েছিল ২০১১ সালে।
ছিটমহলবাসীর নাগরিকত্ব নির্ধারণ ছাড়াও এ গণনার লক্ষ্যগুলোর মধ্যে আছে ছিটমহলের প্রকৃত জনসংখ্যা, ঘরবাড়ি, ভোগদখলকৃত জমি, অর্থসম্পদ ও আর্থসামাজিক অবস্থার একটি পূর্ণাঙ্গ হিসাব তৈরি করা।
ভারতে রয়েছে ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল। আর বাংলাদেশে রয়েছে ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল। এই গণনা করছে উভয় দেশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত ৭৫টি দল। প্রতি দলে একজন করে বাংলাদেশি ও ভারতীয় গণনাকারী রয়েছেন। তবে তাঁদের কাজ দেখভালের দায়িত্বে একজন করে ভারতীয় ও একজন করে বাংলাদেশি সুপারভাইজার রয়েছেন।
গণনা চলাকালে ছিটমহলবাসীদের তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী কোনো দেশের নাগরিকত্ব নিতে চাইলে তা অবশ্যই ফরমে উল্লেখ করতে বলা হচ্ছে। এ গণনার প্রধান বিষয়ই হচ্ছে কে কোন দেশের নাগরিক হতে চান সে বিষয়টি।
সর্বশেষ গণনায় যাঁদের নাম বাদ গেছে এবার তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছে ছিটমহল নিয়ে কাজ করা কিছু সংগঠন। কেননা, জীবিকার তাগিদে এ সময়ের মধ্যে বহু ছিটমহলবাসী তাঁদের এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছেন। অথচ তাঁদের সবারই বসতি রয়েছে ছিটমহলে। আবার যাঁরা বিভিন্ন সময় বিতাড়িত হয়ে ছিটমহলে আশ্রয় নিয়েছেন, দাবি উঠেছে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করারও।
২০১১ সালের গণনা অনুযায়ী ভারতে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলে রয়েছে ১৪ হাজার ২২১ জন বাংলাদেশি। অনুরূপভাবে বাংলাদেশে ১১১টি ভারতের ছিটমহলে রয়েছে ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন ভারতীয়।
এদিকে এ গণনায় বেশ খুশি দুই দেশেরই ছিটমহলবাসী। ছিটগুলোতে উৎসবের আমেজে সকাল থেকে শুরু হয় এ গণনা। যদিও বাংলাদেশের ভেতর ৪৩টি ও ভারতের ভেতর ২০টি ছিটমহলে জনবসতি নেই, আছে জমিজমা।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় ভারতের ২০ নম্বর লতামারী ছিটমহলের অধিবাসী ৭৫ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুল্লাহ মিয়া গতকাল বাংলাদেশি হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে নির্ধারিত ফরমে টিপসই দেন l ছবি: প্রথম আলো
প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই কাজ চলবে। কাজ নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে শেষ করার জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন থেকে পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
লালমনিরহাট: জেলার তিনটি উপজেলায় ৫৯টি ছিটমহলের মধ্যে পাটগ্রামে ৫৫টি, হাতীবান্ধায় দুটি ও লালমনিরহাট সদরে রয়েছে দুটি। অন্যদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলায় লালমনিরহাট তথা বাংলাদেশের ৩৩টি ছিটমহল রয়েছে।
পাটগ্রামের ২০ নম্বর লতামারী ছিটমহলের অশীতিপর হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘এখানকার ৬৮ বছরের বন্দীজীবনে আমরা সবাই ভাই হয়ে গেছি। এই ভাইদের ছেড়ে ভারতে কি যাওয়া যাবে? তাই আগেই মনে গাঁথা হয়ে গেছে আমরা বাংলাদেশি।’
কুড়িগ্রাম: জেলার তিনটি উপজেলার ১২টি ভারতীয় ছিটমহলের মধ্যে ভূরুঙ্গামারীতে রয়েছে ১০টি, কুড়িগ্রাম সদরে একটি ও ফুলবাড়ীতে একটি। সকাল ১০টার দিকে ফুলবাড়ীর দাশিয়ারছড়া ছিটমহলে আলতাফ হোসেনের বাড়িতে এ জেলার গণনাকাজের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমিন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ছিটমহলবাসীর জমিসংক্রান্ত জরিপ, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ের কাজের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে।
নীলফামারী: জেলার ডিমলা উপজেলায় ভারতীয় চারটি ছিটমহলে জনগণনা শুরু হয় সকাল ১০টায়। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ আসতে থাকেন গণনা ক্যাম্পে। জেলা প্রশাসক জাকীর হোসেন, পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান ও ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রেজাউল করিম সকালে যৌথ এ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
পঞ্চগড়: জেলার তিনটি উপজেলার ৩৬টি ছিটমহলে গণনা শুরু হয় সকালেই। ছিটমহলগুলোর মধ্যে পঞ্চগড় সদরে রয়েছে সাতটি, বোদায় ২৩টি ও দেবীগঞ্জে ছয়টি। ৩৬টি ছিটমহলে ১৮টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রেই নিজেদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ভিড় করেন ছিটমহলবাসীরা।
{প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন: কলকাতা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও পাটগ্রাম প্রতিনিধি}

No comments

Powered by Blogger.