পুলিশের ‘ঘুষ তহবিল’- ঊর্ধ্বতনেরাও দায় এড়াতে পারেন না

পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্য অপরাধ করলে কি ওই বাহিনীর ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ন হয় শুধু? নাকি ওই অপরাধের আইনি প্রতিকার নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতাও সৃষ্টি হয়? এই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে এ কারণে যে বরিশাল মহানগর পুলিশের উপকমিশনারসহ ১১ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষের টাকার তহবিল সংগ্রহের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরে তাঁদের বিরুদ্ধে ‘সাময়িক বরখাস্ত’ নামক লঘু ও লোক দেখানো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই প্রসঙ্গে পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘পুলিশ বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন’ হয়েছে বলে যুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এটা শুধু পুলিশের ভাবমূর্তির প্রশ্ন নয়, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন।
পুলিশের সদস্যরা পদোন্নতি পাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘুষ দিচ্ছেন, আর তাঁদের পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন কর্মকর্তারা ঘুষ নিচ্ছেন, সে জন্য তাঁরা তহবিল পর্যন্ত গঠন করেছেন—পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্তে বরিশাল মহানগর পুলিশের ১১ জন সদস্যের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এটা কত গুরুতর একটা অপরাধ তা উপলব্ধি করা দরকার। পদোন্নতিপ্রত্যাশী পুলিশ সদস্যরা ঘুষের টাকা সংগ্রহ করেন কী উপায়ে? কোথা থেকে? এটা করতে গিয়ে নিশ্চয়ই তাঁরা দুর্নীতিতে লিপ্ত হন। নিরীহ-নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে আটক করে মামলায় ফাঁসানোসহ নানা রকমের ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যাপক।
পদোন্নতি পেতে যাঁরা ঘুষ দিচ্ছেন, শুধু তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যথেষ্ট নয়। যাঁরা ঘুষ নিয়ে পদোন্নতির সুযোগ করে দিচ্ছেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এই গুরুতর অনৈতিক চর্চা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, নইলে পুলিশ বিভাগের ন্যূনতম পেশাদারত্বও থাকবে না। পুলিশ বিভাগের নিজের পক্ষে পুলিশ সদস্যদের এসব অপরাধের যথাযথ আইনি প্রতিকার করা সম্ভব নয়। পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের তদন্ত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে দুটি কমিটি গঠন করেছে, তারা এসব তদন্ত করে যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ন্যায়বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিক। একটা বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করলে আরও ভালো হয়।

No comments

Powered by Blogger.