অর্থমন্ত্রীর সত্য ভাষণ: ‘আমাদের লোকজনের’ও শাস্তি চাই

অবশেষে অর্থমন্ত্রী সত্য উপলব্ধি করলেন। হল-মার্ক ও বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মূল হোতাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে না পারার মূল কারণ যে খোদ ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট লোকজন, সেটা এত দিন ছিল মানুষের মুখে মুখে। মঙ্গলবার সংসদে অর্থমন্ত্রী খেদোক্তির মাধ্যমে তা স্বীকার করলেন। এখন মানুষ সংগতভাবেই জানতে চাইবে ওই লোকগুলো কে? সুশাসনের জন্য স্বচ্ছতা জরুরি। অর্থমন্ত্রী যাঁদের ‘আমাদের লোক’ বলে অভিহিত করেছেন, তঁাদের নাম প্রকাশ করা হোক। তাহলে সমাজে তাঁদের চেহারাটা যেমন পরিষ্কার হবে, তেমনি তাঁদের শাস্তির আওতায় আনাও সহজ হবে।
তবে কেলেঙ্কারির মূল হোতাদের কোনোক্রমে ছাড় দেওয়া যাবে না। হল-মার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেলে থাকলেও তাঁর আত্মসাৎ করা প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা উদ্ধারের জোরদার চেষ্টা না থাকা বিস্ময়কর। বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির জন্য অভিযুক্ত সেই সময়ের চেয়ারম্যানের খুঁটির জোর এতই বেশি যে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরের কথা, তাঁর গায়ে একটা টোকাও পড়ল না! এঁরা বা তাঁদের সহযোগীরাই যদি মন্ত্রীর ভাষায় ‘আমাদের লোক’ হন, তাহলে সরকারি ব্যাংকগুলোর লাটে উঠতে আর কিছুর দরকার হবে না।
ইতিমধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের বোঝা দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৭১ কোটি টাকা, যা দিয়ে একটি পদ্মা সেতু হতে পারে। সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ সোনালী ব্যাংকের। আর বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৫৭ শতাংশ। ঋণের অর্ধেকের বেশিই যদি খেলাপি হয়, তাহলে তাকে ব্যাংক না বলে লুটপাটের আখড়া বলাই ভালো।
রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব। সরকার ব্যাংক-ঋণ জালিয়াতি মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে চায় কি না, সেটাই আসল ব্যাপার। যদি ব্যাংকিং খাতের লুটপাট বন্ধ করতে চান, তাহলে অভিযুক্ত সবাইকে দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। আর ব্যাংকগুলোকে ঠিকভাবে চালাতে না পারলে অন্তত বেসিক ব্যাংকসহ ওই ধরনের কয়েকটি সরকারি ও বিশেষায়িত ব্যাংক ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দিন। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় খেলাপি ঋণের বোঝা টানার কী দরকার?

No comments

Powered by Blogger.