ভর্তিচ্ছুদের তোপের মুখে অবরুদ্ধ পরিদর্শক- ভোগান্তির নানা চিত্র

একাদশে ভর্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। একের পর এক সমস্যায় নাজেহাল হচ্ছে ভর্তিচ্ছুরা। ১ম মেধাতালিকা প্রকাশের পর মনোনীতরা পছন্দের কলেজ না পেয়ে গতকাল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শকে অবরুদ্ধ করে রাখে। দুপুরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা কলেজ পরিদর্শকের কক্ষে চড়াও হয় এবং উপ-কলেজ পরিদর্শক অদৈত্য রায়ের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হন। দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার বাহিনীর সদস্যদের ডেকে কলেজ পরিদর্শকের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া বা স্মার্ট সিস্টেম চালু হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আর হয়রানি যেন পিছু সরছে না। সংশোধনের অপেক্ষার ২য় তালিকা ও পরে রিলিজ স্লিপের জন্য প্রহর গুনা ছাড়া কিছুই করার নেই এসব শিক্ষার্থীর। সরজমিনে ঢাকা বোর্ডে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত ভর্তিচ্ছু আর তাদের অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ বোর্ড কর্মকর্তাদের প্রতি মারমুখী হয়ে ওঠেন। চারদিন ভোগান্তি ও হয়রানির অনেকটাই তড়িঘড়ি আর গোঁজামিল দিয়ে ভর্তি আবেদনের প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশ করে আন্তঃবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি। এ তালিকা নিয়ে সারা দেশে প্রায় ১১ লাখ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী নতুন হয়রানি ও বিড়ম্বনার মুখে পড়েছে।
বই ছাড়াই ক্লাস: চলতি বছর একাদশ শ্রেণীতে জটিলতায়, বিপত্তি, আপত্তি, ক্ষোভ, উৎকণ্ঠা আর পদে পদে ভোগান্তির ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ বই ছাড়া ক্লাসে বসতে হচ্ছে একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা জানান, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীর বাংলা সাহিত্য, বাংলা সহপাঠ ও ইংলিশ ফর টুডে পাঠ্যপুস্তক তিনটি নতুনভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে। শিক্ষানীতি-২০১০’র আলোকে পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ইংলিশ ফর টুডে পাঠ্যপুস্তকটি সম্পূর্ণ নতুনভাবে প্রণয়ন করেছে এনসিটিবি। এছাড়া বাংলা সাহিত্য পাঠ (গদ্য ও কবিতা) এবং সহপাঠ (উপন্যাস ও নাটক) পাঠ্যপুস্তক দুটির ব্যাপক পরিমার্জন ও সংশোধনও করা হয়েছে। গতকাল শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এনসিটিবি কার্যালয়ে এই পাঠ্যপুস্তক তিনটির বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এনসিটিবির কর্মকর্তা বলছেন এই বইগুলো শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতে আরও ১৫ দিন সময় লেগে যেতে পারে।
ভর্তিতে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ:  শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারণ করে দেয়ার ফি চেয়ে বেশি ফি আদায় করছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি কলেজগুলো এগিয়ে আছে। এ নিয়ে গতকাল ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে বেশকিছু অভিযোগ এসেছে। ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, গত বছর হাইকোর্ট অতিরিক্ত টাকা আদায়ে অভিযোগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ভৎর্সনা করেছেন। আমরাও তাদেরকে সর্তক ছাড়াও শোকজ নোটিশ দিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা একাদশ শ্রেণীর ভর্তিতে স্পষ্ট বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের বাইরে কোন অর্থ আদায় করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, অনলাইন ভর্তিতে একটু জটিলতা চলছে। তবে অভিযোগ পাওয়া সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি কলেজগুলো সরকার নির্ধারিত ফি’তে ভর্তি করাচ্ছে। তবে কিছু কলেজ উন্নয়ন ফি নামে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা বেশি আদায় করছে। তবে অধিকাংশ কলেজই সরকারের নির্ধারিত ফিতে ভর্তি করাচ্ছে। এবার রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে ভর্তিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। তবে ওই কলেজে অধ্যক্ষ প্রফেসর শহিদুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমরা সরকারি নীতিমালার প্রতি সম্মান রেখে ভর্তির টাকা নিচ্ছি। তিনি বলেন, সরকারের নীতিমালায় আংশিক নন এমপিও কথা বলা হলেও এমনপিও বিহীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কিছু বলেনি। তার পরও আমরা সরকারের ফির প্রতি সম্মান দেখাচ্ছি।
ভোগান্তির নানা চিত্র: রাজধানীর গুলশানে কালাচাঁদপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি মেয়েদের জন্য। সেখানে একাদশ শ্রেণীতে ৩৮টি আসন রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য বোর্ডের প্রকাশ করা মেধা তালিকায় রয়েছে ২২ জন ছেলে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ কলেজের শিক্ষকরা। থমকে গেছে তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া। শেরপুর সরকারি মহিলা কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা শাখার পাঠদানের অনুমতি নেই। কিন্তু সেখানে ৩৯ জন ছাত্রীকে ব্যবসায় শাখায় ভর্তির মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ওই কলেজের অধ্যক্ষ আশীষ চন্দ্র কর বিষয়টি জানান ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে। ছাত্রীদের কলেজে ভর্তি করা হবে কি না এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তেজগাঁওয়ে সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা না থাকলেও সেখানে ভর্তির জন্য ১৫০ জনকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এই দেড়শ‘ শিক্ষার্থীই এখন বোর্ডে কর্মকর্তাদের রুমে রুমে ধর্না দিচ্ছেন।
৬ই জুলাই দ্বিতীয় মেধা তালিকা: আগামী ৬ই জুলাই দ্বিতীয় মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। এ তালিকা অনুসারে ৭ ও ৮ই জুলাইয়ের মধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে হবে। যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হবে না বা কোন কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হবে না তাদেরকে রিলিজস্লিপধারী হিসেবে বিবেচনা করা হবে। খালি আসনের বিপরীতে অনলাইনে সর্বোচ্চ ৫টি কলেজের পছন্দক্রম দিয়ে ৯ থেকে ১০ই জুলাইয়ের মধ্যে আবেদন করতে পারবে তারা। এ ক্ষেত্রে কোন আবেদন ফি দিতে হবে না। রিলিজস্লিপধারী প্রার্থীদের আবেদনের ফল ১১ই জুলাই প্রকাশ করা হবে। রিলিজস্লিপধারী প্রার্থীদেরকে ১২ই জুলাই বিলম্ব ফিসহ সংশ্লিষ্ট কলেজে ভর্তি হতে হবে। এছাড়া যেসব শিক্ষার্থী পূর্বে অনলাইন বা এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন করেনি সেসব শিক্ষার্থী কলেজের শূন্য আসন দেখে ৯ থেকে ১১ই জুলাইয়ের মধ্যে অনলাইনে নির্দিষ্ট আবেদন ফির মাধ্যমে পাঁচটি কলেজের পছন্দক্রম দিয়ে আবেদন করতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.