তিস্তার পানি বিপৎ​সীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে

উজানের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। লালমনিরহাট জেলার দোয়ানীতে অবস্থিত দেশের বৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি আজ বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যারাজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে দেওয়া হ​য়েছে।
পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রমতে আজ বুধবার বেলা ১২টায় তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু সন্ধ্যা ছয়টায় ওই পয়েন্টে পানি ৪০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩০ সে​ন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটার।
তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ি, টেপাখড়িবাড়ি, খালিশা চাঁপানী, ঝুনাগাছ চাঁপানী, গয়াবাড়ি ও জলঢাকা উপজেলার গোলমু্লা, ডাউয়াবাড়ি, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি চর ও গ্রামের ১০ হাজারের বেশি পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। তাঁদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হচ্ছে।
তিস্তায় বন্যার পানিতে পূর্ব বাইশপংকুর গ্রামের বসতভিটা হাঁটু পানির নিচে। ছবি: প্রথম আলো
পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, তিস্তার পানি দুপুর ১২টার পর থেকে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার কারণে ইউনিয়নের তিস্তা বেষ্টিত প্রায় সাতটি গ্রামের দেড় হাজারের বেশি পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যাকবলিত এলাকার মানুষজন ও গবাদি পশু নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে এসেছে।
ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত আমার ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের হাজারো পরিবার বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে বিপদজনক অবস্থায় থাকা লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে।
বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় নিরাপদ আশ্রয়স্থলে চলে যান গ্রামবাসী। নিয়ে যান গবাদি পশুও। ছবি: প্রথম আলো
এ ব্যাপারে কথা বললে পাউবো ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বেলা তিনটায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎ​সীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও সন্ধ্যা ছয়টায় বিপৎসীমার ৩০ সে​ন্টিমিটার ওপরে ওঠে। পানি আরও বাড়ছে। তিনি বলেন, ভারতের দোমোহনীতে তিস্তা নদীর পানি বিপৎ​সীমার ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এখন সেখানে পানি কমতে শুরু করেছে। ওই লোকজনকে সতর্ক করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এবং ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
নীলফামারী জেলা প্রশাসক মো. জাকীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। উজানে পানি বৃদ্ধির বিষয়টি জানার পর সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এলাকার মানুষজনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বাড়িঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় নিরাপদ আশ্রয়স্থলে চলে যান গ্রামবাসী। নিয়ে যান গবাদি পশুও। ছবি: প্রথম আলো
চলতি মাসের ১৩ থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত বিপৎ​সীমার ২২ সেন্টিমিটার, ১৯ জুন বিপৎ​সীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর ২৯ জুন সকাল ছয়টায় বিপৎ​সীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

No comments

Powered by Blogger.