টক-মিষ্টি রসে মুখরোচক লেবু by রাফাত জামিল

এখন লেবুর ভরা মৌসুম। কাঁচাবাজার, ফেরিওয়ালার
ঝুড়ি—লেবুর পসরা সবখানে। ছবি: জাহিদুল করিম
পুষ্টিগুণের পাশাপাশি লেবুর ঔষধিগুণ অতুলনীয়। ছবি: জাহিদুল করিম
শরবত, চা, সালাদ, ভর্তা আর তরকারি রান্নায় লেবু দারুণ নধর (রসাল) ফল। চিকিৎসা, এমনকি রূপচর্চায়ও লেবু বেশ কাজের। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি লেবুর ঔষধিগুণও অতুলনীয়। লেবুর রসে হালকা টক ও মিষ্টতা থাকায় এটি খুবই মুখরোচক।
এখন লেবুর ভরা মৌসুম। কাঁচাবাজার, ফেরিওয়ালার ঝুড়ি—লেবুর পসরা সবখানে। দেশের বাজারে পাঁচ জাতের লেবুর দেখা মেলে। কাগজি লেবু, এলাচি (লম্বাটে), কলম্ব বা গন্ধরাজ (গোল), টাঙ্গাইল লেবু এবং বাতাবি লেবু বা জাম্বুরা।
কাগজি লেবু বেশি আসে ময়মনসিংহ, মধুপুর, সাতক্ষীরা, মাগুরা, বরিশাল, নোয়াখালী, সোনাপুর, কুষ্টিয়া এবং পাবনা থেকে। এলাচি লেবু মূলত সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকেই আসে। কলম্ব আসে মানিকগঞ্জ (ঢাকা) ও ময়মনসিংহ থেকে। টাঙ্গাইল লেবু নামেও আরও এক প্রজাতির লেবু ওঠে বাজারে, এটা টাঙ্গাইল থেকেই আসে। বাজারে উঠতে শুরু করেছে বাতাবি লেবু। এগুলো আসে টাঙ্গাইল, যশোর, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী এবং ভারত থেকে।
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম জামালউদ্দিন বলেন, ‘সচরাচর উঁচু স্থানে, যেখানে পানি জমে না সেখানেই লেবুর ফলন সবচেয়ে বেশি। লেবু চাষের উপযুক্ত মাটিতে পিএইচের পরিমাণ অবশ্যই ৭.৫ থাকবে। ফল ধরার ৪০-৪৫ দিন পরই লেবু খাওয়ার উপযোগী হয়।’
লেবু ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, চট্টগ্রামের লেবুর (কাগজি) ঘ্রাণ সুন্দর, সুস্বাদু আর হালকা টক স্বাদের। রস এবং টক বেশি রাজশাহীর লেবুতে। জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র এবং আশ্বিন লেবুর ভরা মৌসুম। সারা বছরই লেবুর দেখা মেলে। তবে, ফাল্গুন ও চৈত্রে লেবু ওঠা একেবারে কমে যায়। ওদিকে আষাঢ়ের শেষেই বসবে জমজমাট জাম্বুরার বাজার।
কারওয়ান বাজারের লেবু ব্যবসায়ী লোকমান হোসেন বলেন, ‘এখনকার লেবুর খোসা পাতলা, রস বেশি, কিন্তু খুব একটা স্বাদের না। ভাদ্র-আশ্বিনের দোফলা লেবুই সবচেয়ে সুস্বাদু। মৌসুমি লেবুর বাইরে বারোমাসি লেবুর চাহিদা বেশি এবং খেতেও ভালো। এ ছাড়া এলাচি ও কলম্ব লেবুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি হোটেলগুলোতে ও অনুষ্ঠানের খাওয়া-দাওয়ায়।’
লোকমান আরও বলেন, লেবুর মৌসুম আর রোজা একই সময়ে পড়ায় বাজারে দাম স্বাভাবিক আছে। বাজারে ধরন অনুযায়ী নানা দামে লেবু বিক্রি হচ্ছে।
কথা হলো খুচরা ক্রেতা মওদুদ ইসলামের সঙ্গে। বললেন, ‘সব খাবারের সঙ্গেই লেবু খাওয়া যায়। তবে, শরবতের জন্যই লেবু কেনা। প্রতিদিনের ইফতারিতে শরবতের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিই, রোজার মাসে শরবতের তালিকায় লেবু থাকবেই।’
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ শামছুন্নাহার নাহিদ বলেন, ‘লেবু ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সৃষ্ট রোগ নিরাময়সহ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এর ভিটামিন ‘সি’ দেহের আয়রন শোষণ ক্ষমতা প্রখর করে। লেবুর শরবত শরীরে উৎপন্ন টক্সিন ঝেড়ে ফেলে লিভারকে সুস্থ রাখে। ফলে হজমশক্তি বেড়ে যায় বহুগুণে। লেবু রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণ করে। এর অ্যাসকরবিক অ্যাসিড অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা কমায়।’ তিনি আরও বলেন, লেবুতে থাকা পটাশিয়াম মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুকে সক্রিয় রাখে। লেবুর রস দাঁতের ব্যথা, মাড়ি থেকে রক্ত পড়া এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে। লেবুর রস গলাব্যথা, মুখে ঘা এবং টনসিলের প্রতিরোধক। লেবুর রস কোলন, প্রোস্টেট ও ফুসফুস ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করে।
লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। আরও আছে বিভিন্ন অনুপাতের ফ্লাভনয়েডস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-বি, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাস।

No comments

Powered by Blogger.