কোকেন কাণ্ড: ৫ দেশের ১০ জন শনাক্ত

তেলের সঙ্গে কোকেন আনা হয়েছিল বলিভিয়া থেকে। সেখান থেকে প্রথমে নেয়া হয় উরুগুয়ে। উরুগুয়ের বন্দর থেকে তেলের সঙ্গে কোকেন মেশানো ব্যারেলগুলি তোলা হয় জাহাজে। সেই জাহাজ তা নিয়ে আসে চট্টগ্রাম বন্দরে। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তা নেয়ার কথা ছিল উত্তর আমেরিকায়। কিন্তু বাংলাদেশে খালাসে ঝামেলা হওয়ায় সিদ্ধান্ত বদল করে ভারতের কলকাতায় নেয়ার কথা ছিল। এজন্য কলকাতায় রাজু নামে এক ব্যক্তি সব বন্দোবস্ত করেছিলেন। সেখান থেকেই এই চালান চলে যেতো নির্দিষ্ট গন্তব্যে। কিন্তু তার আগে ধরা পড়ে যায় কোকেনের এই চালানটি। এই কোকেন পাচারের সঙ্গে ৫ দেশের অন্তত ১০ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশান ও উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩ জনকে। শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদপ্তরের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া এই তিনজন হলেন- মোস্তফা কামাল, আতিকুর রহমান খান ও একে আজাদ। এর আগে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল দু’জনকে। একই ঘটনায় চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার হওয়া খানজাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফাকে গতকাল ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল রাজধানীর কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান এসব তথ্য জানান। তিনি জানান, যুক্তরাজ্য প্রবাসী বকুল নামে এক ব্যক্তি এই কোকেন চালানের মূলহোতা। তিনি কোকেন বাংলাদেশে পাঠিয়ে তার আত্মীয় ও বন্ধু মোস্তফা কামালকে তা খালাস করার জন্য বলেন। মোস্তফা কামাল বন্দরের মাল খালাস করার বিষয়টি দায়িত্ব দেয় মন্ডল গ্রুপের কর্মকর্তা আতিকুরকে।  মোস্তফা কামাল বেসরকারি একটি সংস্থার (এনজিও) উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন, এখন আবাসন ব্যাবসা করেন বলে জানা গেছে। আর আটক একে আজাদ পণ্য পরিবহনকারী কসকো শিপিং লাইনসের ব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও বিপণন)। তিনি কোকেনের চালানটি পুনরায় রপ্তানি করার চেষ্টা করেছিলেন বলে তথ্য পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
শুল্ক ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ঘটনা তদন্তে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের যে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল সেই কমিটিই গতকাল সকালে রাজধানীর উত্তরা ও গুলশান থেকে মোস্তফা কামাল ও আতিকুরকে আটক করে। চার সদস্যের সেই কমিটির প্রধান শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হুসাইন আহমেদ বলেন, শিপিং লাইনস থেকে পাওয়া কাগজপত্র অনুযায়ী প্রথম থেকেই আতিকুর ও মোস্তফা কামালকে খুঁজছিল তদন্ত কমিটি। সেই অনুযায়ী তাদের ধরতে কসকো শিপিং লাইনসের চট্টগ্রামের একে কর্মকর্তাকে দিয়ে আতিকুরকে ফোন করানো হয়। এরপর গতকাল সকাল ১০টার দিকে উত্তরায় মন্ডল গ্রুপের কার্যালয় থেকে আতিকুরকে আটক করা হয়। পরে আতিকুরকে দিয়ে ফোন করিয়ে গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর থেকে মোস্তফা কামালকে আটক করা হয়। এরা দুইজনই চালানটি খালাসের জন্য প্রথমে চেষ্টা করেছিলেন। খালাসে ব্যর্থ হয়ে চালানটি ভারতের কলকাতা বন্দরে অথবা উরুগুয়ের যে বন্দর থেকে চালানটি পাঠানো হয়েছিল সেই বন্দরে পাঠানোর জন্য শিপিং লাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন আতিকুর। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন একে আজাদ। আর আতিকুর ও মোস্তফা কামালের সঙ্গে ভারতে রাজু নামের এক ব্যাক্তির যোগাযোগের তথ্য মিলেছে। পণ্য খালাস করতে ৮ই জুন বাংলাদেশে আসার কথা ছিল রাজুর। কিন্তু তার আগেই চালানটি জব্দ করা হয়। এই রাজুর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বকুলের ব্যবসা রয়েছে।
শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগের মহাপরিচালক মইনুল খান বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচটি দেশে এই চালান নিয়ে কর্মকাণ্ড পাওয়া গেছে। ১০৮টি ব্যারেল ভর্তি সূর্যমুখী তেল ও  কোকেনের উৎপাদনকারী দেশ বলিভিয়া। এরপর ব্যারেলগুলো উরুগুয়েতে নিয়ে  সেখানকার একটি বন্দর থেকে কন্টেইনারে ভরে জাহাজে তোলা হয়। এরপর জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার নামায়। এই প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত লন্ডনে থাকা বকুল মিয়া ও ফজলুর রহমান নামে দুইজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। যারা বাংলাদেশে চালানটি ছাড়ানোর ব্যাপারে মূল ভূমিকা পালন করেছেন। এর বাইরে ভারতের রাজু নামে এক ব্যক্তির পরিচয় জানা গেছে, যিনিও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। বলিভিয়া থেকে কোন চক্র উরুগুরে দিয়ে চালানটি পাঠালো তা জানা যায়নি। বকুল মিয়া ও ফজলুর রহমানের ওপরে কোন চক্রের অবস্থান সে বিষয়েও জানা যায়নি। এর বাইরে বাংলাদেশে আরো কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.