প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে বরণে সিলেটে ব্যাপক প্রস্তুতি, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা by ওয়েছ খছরু

প্রধানমন্ত্রী চাইলেই বিমানটি ঢাকা হয়ে আসতে পারতো। কিন্তু না, বিমান নিয়ম মতোই সিলেট আসছে। এরপর যাবে ঢাকা। হিথ্রো থেকে সরাসরি সিলেটের ফ্লাইট এটি। এ কারণে নিয়ম অনুযায়ী সিলেট হয়ে বিমানটি ঢাকা যাবে। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী একই ভাবে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে ঢাকা গিয়েছিলেন। পথিমধ্যে তিনি এক ঘণ্টা সিলেটে বিরতি করেন। আগামীকালও একই ভাবে তিনি এক ঘণ্টা সিলেটে অবস্থান করবেন। ৬ দিনের যুক্তরাজ্য সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সকালে দেশে ফিরছেন। এবং তিনি সিলেট হয়েই ঢাকা ফিরবেন। মাত্র এক ঘণ্টার যাত্রা বিরতি নিয়ে সিলেটে প্রস্তুতির অন্ত নেই। গতকাল দিনভর এ নিয়ে দফায় দফায় চলেছে বৈঠক। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় থাকা এসএসএফ’র কর্মকর্তারা সিলেটে পৌঁছে গতকাল জেলা প্রশাসকের কক্ষে বৈঠক করেছেন। পরে সন্ধ্যায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বৈঠক করেন। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল সকাল ৯টায় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসবেন। বাংলাদেশ বিমানের ওই ফ্লাইটটি আজ রাতে হিথ্রো থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে আসবে। প্রায় ৯ ঘণ্টা ভ্রমণের পর প্রধানমন্ত্রী সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসবেন। নিয়ম অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী বিশ্রাম নেয়ার কথা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এদিন সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই  জেলা ও মহানগরের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর দেখা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরের বাইরে আসবেন না। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে ব্যাপক প্রস্তুতি চালাচ্ছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। দুটি কমিটির সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী কয়েক মাস আগেও একই ভাবে সিলেট হয়ে ঢাকা গেছেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বিমানবন্দরে তার দেখা পেয়েছিলাম। একই ভাবে এবারও আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবো। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ ভ্রমণের পর যেহেতু এক ঘণ্টার জন্য অবস্থান করবেন সেহেতু এতো বেশি ঝামেলা হবে না। আওয়ামী লীগের জেলা ও মহানগর পর্যায়ের সিনিয়র নেতারাই তার সঙ্গে দেখা করবেন। আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রী এক ঘণ্টার যাত্রা বিরতিকালে নেতাকর্মীদের কাছ থেকে সিলেটে দলের সাংগঠনিক অবস্থান সম্পর্কে অবগত হবেন। পাশাপাশি সিলেটের উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি সহ নানা বিষয় নিয়েও আলোচনা করবেন। একই সঙ্গে সিলেটের নেতাকর্মীদের তিনি দিকনির্দেশনা দিয়ে যাবেন। যেমনটি তিনি কয়েক মাস আগে দিয়ে গিয়েছিলেন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জেলা ও মহানগরের পদবিধারী নেতারা দেখা করার সুযোগ পেতে পারেন। তবে, সেটি গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগর সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান,  জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ, সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছেন। পাশাপাশি সিলেটে সংসদ সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত থাকবেন। তবে, সিলেটের কোন মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে ওসমানী বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকবেন কিনা সেটি গতরাত পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এদিকে, গতকাল প্রধানমন্ত্রীর যাত্রা বিরতিকে কেন্দ্র করে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভিড় করবেন। তারা ভেতরে না ঢুকতে পারলে বাইরে অবস্থান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন বলে দলের সূত্র জানিয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী যাত্রা বিরতিকালে ভেতরে কোন সংবাদকর্মী ঢোকার অনুমতি পাচ্ছেন না। বদরউদ্দিন আহমদ কামরান জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় দিয়ে বেরিয়ে এসে আমরাই ব্রিফ করবো।’ প্রধানমন্ত্রীর এক ঘণ্টার যাত্রা বিরতিকে কেন্দ্র করে সিলেটে প্রস্তুতির অন্ত নেই। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে প্রস্তুতি। দুপুরে সিলেট জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ নিয়ে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান, উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, জেলার সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম, পুলিশ কমিশনার কামরুল আহসান সহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, সন্ধ্যায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ নিয়ে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ উদ্দিন আহমদ ছাড়াও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী যাত্রা বিরতিকালে  গোটা বিমানবন্দরজুড়ে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া যাদের অনুমতি থাকবে কেবল তারাই ভেতরে ঢুকতে পারবেন। সিলেট মহানগর পুলিশের এডিসি মিডিয়া মো. রহমতুল্লাহ গতকাল রাতে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর জন্য যে নিরাপত্তা প্রয়োজন সেটি নেয়া হয়েছে। গতকাল মধ্যরাত থেকেই ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে যাত্রীদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় সেটিও নজরে রাখা হচ্ছে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী যে বিমানে আসবেন  সেটি নিয়মমতো এক ঘণ্টার যাত্রা বিরতি করে। বৃহস্পতিবারও সেটি এক ঘণ্টার জন্য যাত্রা বিরতি করবে। এরপর ঢাকা চলে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.