ব্লু-আইশের ভয়াল থাবা

দেখতে অনেকটা ইয়াবা ট্যাবলেটের মতো। তবে রং ভিন্ন। নীল অথবা সবুজ রংয়ের ‘ব্লু-আইশ’ নামের নতুন মাদকের ভয়াল থাবা বিস্তার করেছে ঢাকায়। অভিজাত এলাকায় উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা বেশি আসক্ত হচ্ছে এতে। ইয়াবার চেয়েও এ মাদকের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ মাদক সেবনের ফলে কিডনি দুর্বলতা, যৌন ক্ষমতা হ্রাসসহ শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
সূত্র জানায়, ব্লু-আইশ মূলত থাইল্যান্ডে তৈরি হয়ে থাকে। ইন্দোনেশিয়ায়ও তৈরি হয়। তবে বেশি পরিমাণের নয়। পুলিশ ও মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, ওই ট্যাবলেট চোরাইভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশ করে থাকে। চোরাকারবারিরা কৌশলে তাদের লাগেজে বা বৈধ ওষুধের প্যাকেটে ওই ট্যাবলেট নিয়ে আসে। তবে এখন শাহজালাল আন্তর্জান্তিক বিমানবন্দরে নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় চোরাকারবারিরা এটি মিয়ানমার থেকে এনে বান্দরবান ও কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। যারা ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার করে ঢাকায় নিয়ে আসতো তারাই ওই ট্যাবলেট পাচার করে নিয়ে আসে। পরে তারা রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোর বার ও হোটেলগুলোতে সরবরাহ করে থাকে। সরবরাহ বাড়ায় দামও কমেছে এ মাদকের। ফেব্রুয়ারি মাসে গুলশান এলাকার একটি বারে অভিযান চালিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা এক তরুণের পকেট থেকে কয়েকটি ব্লু-আইশ ট্যাবলেট উদ্ধার করে। তখন থেকে ওই অভিজাত এলাকায় নজরদারি বৃদ্ধি করেন ডিবি পুলিশের সদস্যরা। রাজধানীর কয়েকটি নাইট ক্লাবের কর্মচারীরাও এই নতুন মাদকের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে যেসব উচ্চবিত্ত ছেলে ও মেয়েদের কাছে আগে ইয়াবা ট্যাবলেট জনপ্রিয় ছিল তারা এখন ব্লু-আইশে আসক্ত হয়ে পড়ছে। ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশের পশ্চিম বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (মাদক উদ্ধার, দমন ও প্রতিরোধ) মাহমুদ নাসের জনি জানান, আগে ব্লু আইশের অতটা প্রচলন ছিল না। উচ্চবিত্ত পরিবারের উঠতি তরুণ ও তরুণীরা এই ট্যাবলেট সেবন করে থাকে। বেশি সেবন করছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ ও তরুণীরা। যেসব বার ও প্রতিষ্ঠান ওইগুলো বিক্রয় করে থাকে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এবং কয়েকটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদেরও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
ঢাকা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী কমিশনার মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, আইশ পিল নামে এক ধরনের মাদক ছিল। এটি হেরোইনের মতো সেবন করে মাদক সেবীরা। তবে ঢাকায় ব্লু-আইশের ক্রয় ও বিক্রয় কম হয়ে থাকে।
যোগাযোগ করা হলে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)’র সভাপতি অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী জানান,‘ ইয়াবা ট্যাবলেটের চাইতে ভয়ঙ্কর ব্লু-আইশ। এটি প্রচণ্ড নেশার আসক্তি বাড়িয়ে দেয়। হার্ট অ্যাটার্ক, লিভারের ক্ষতি ও রক্তচাপের মাত্রা বেড়ে যায়। এতে সেবনকারী আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।  তিনি আরও বলেন, যেসব ছাত্রছাত্রী ওই ট্যাবলেট সেবন করবে তার স্মৃতি শক্তি কমে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে পারবে না। এতে তার শিক্ষাজীবন ধ্বংস অনিবার্য। দেশ ও জাতির স্বার্থে সকল প্রকারের মাদককে দমন করার জন্য তিনি আইনশৃঙ্খলার প্রতি আহ্বান জানান।

No comments

Powered by Blogger.