বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা- বছরে কোটি টাকা খরচেও শান্তিনগরে শান্তি নেই by অরূপ দত্ত

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গতকাল বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
শান্তিনগরের চারপাশের সড়কগুলো ডুবে যায় ঘোলা পানিতে।
দুর্ভোগে পড়েন পথচারী ও ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে বসা বিক্রেতারা
জলাবদ্ধতার অশান্তি থেকে রক্ষা পাচ্ছে না শান্তিনগর। আধা ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতেই শান্তিনগর তলিয়ে যায়। অথচ রাজধানীর শান্তিনগর ও আশপাশের এলাকার ড্রেনেজ লাইন পরিষ্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও পানিনিষ্কাশন পাম্প ব্যবহারে প্রতিবছর ঢাকা ওয়াসা প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে।
রাজধানীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে মূল কর্তৃপক্ষ ঢাকা ওয়াসা। সংস্থাটির হিসাব বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর ড্রেনেজ লাইন পরিষ্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও পানিনিষ্কাশন পাম্প ব্যবহারে বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ করা হয়। এর মধ্যে কাকরাইল মোড় থেকে মালিবাগ মোড়, শান্তিবাগ, গুলবাগ, মধুবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এলাকা থেকে চামেলীবাগ হয়ে শান্তিনগর মোড়, সার্কিট হাউস রোড, বেইলি রোড ও আশপাশের এলাকার ড্রেনেজ লাইন পরিষ্কারে খরচ হয় প্রায় এক কোটি টাকা।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মাটির ওপরে (সারফেস) প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার ড্রেনেজ লাইন এবং মাটির নিচে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার ড্রেনেজ পাইপলাইন রয়েছে। এসব রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। এর বাইরে ঢাকা ওয়াসার তত্ত্বাবধানে রয়েছে মাটির নিচে সাড়ে তিন শ কিলোমিটার মূল ড্রেনেজ লাইন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) ও ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় ১৯৯৭ সালে শান্তিনগর প্রধান সড়ক উঁচু করা হয়েছিল। দুই পাশে তৈরি করা হয়েছিল ড্রেনেজ লাইন। এতে জলাবদ্ধতা থেকে সাময়িক শান্তি ফিরে পায় এলাকাবাসী। কিন্তু দুই বছরের মাথায় আবারও ফিরে আসে জলাবদ্ধতার অশান্তি। বৃষ্টি হলে এখন শান্তিনগর মূল সড়ক, চামেলীবাগ, বাজার রোড ও সার্কিট হাউস রোডে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
রাস্তা যখন উঁচু করা হয়েছিল, তখন ঢাকার মেয়র ছিলেন মোহাম্মদ হানিফ। বর্তমানে ডিএসসিসির মেয়র তাঁর ছেলে সাঈদ খোকন। গতকাল সোমবার সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, রাস্তা উঁচু করার পর প্রায় দুই বছর শান্তিনগর এলাকায় জলাবদ্ধতা কম হতো। পরে আবার সমস্যা দেখা দেয়। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা কমাতে ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন ও অন্য সংস্থাগুলোর সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অবশ্য ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ ডি এম কামরুল আলম চৌধুরী বলেন, আগে শান্তিনগর এলাকায় জলাবদ্ধতা সারা দিনেও যেত না। সে তুলনায় এখন অনেক কম। তিনি বলেন, ড্রেনেজ লাইন রক্ষণাবেক্ষণ করা হলেও সেগুনবাগিচা বক্স কালভার্টের ভেতরে গৃহস্থালি ও অন্যান্য বর্জ্য জমে সংকুচিত হয়ে পড়ায় পানি যেতে সমস্যা হয়। তাই শান্তিনগরসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা বেশি হয়।
ভোগান্তির চিত্র: আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড বলছে, গতকাল সকালে ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে মাত্র এক মিলিমিটার। এতে শান্তিনগর মোড়ে খানিকক্ষণের জলজট হয়। বেলা ১১টার দিকে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কাদা জমে আছে রাজারবাগ পুলিশ লাইন প্রান্ত থেকে চামেলীবাগ, শান্তিনগর মোড় ও বাজার এলাকায়। সেই কাদা শুকাতে সময় লাগে দুই ঘণ্টার বেশি। সন্ধ্যার বৃষ্টিতে আবার একই অবস্থা ফিরে আসে।
গত রোববার সকালে পাঁচ মিলিমিটারের বৃষ্টিতে শান্তিনগর, রাজারবাগ এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়, যা স্থায়ী হয় এক ঘণ্টার ওপর। এর আগে বৃহস্পতিবার ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিতে শান্তিনগর এলাকার রাস্তাঘাটে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা হাঁটুপানি ছিল।

No comments

Powered by Blogger.