ঢাকা বনাম কলকাতা কে বেশি ‘বাঙালিত্ব’ ধারণ করে?

১৯০৫ সালে তৎকালীন বৃটিশ ভাইসরয় লর্ড কার্জন বঙ্গকে দুভাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তখন সে সিদ্ধান্তকে ভেবেছিলেন ‘রাষ্ট্রদ্রোহী বাবুদের’ বিরুদ্ধে ‘মারাত্মক আঘাত’ হিসেবে। কেননা, ঐক্যবদ্ধ বঙ্গ ছিল একটি শক্তি। বিভাজিত বঙ্গ ভিন্ন জিনিস। সেই যে বিরোধের শুরু এখনও তার শেষ হয়নি। ১০০ বছর পরও ‘বাঙালিত্ব’ নিয়ে দুই বাংলার মধ্যে প্রবল প্রতিযোগিতা চলছে। কে বেশি বাঙালিত্ব ধারণ করে? ঢাকা নাকি কলকাতা? শুনুন টাইমস অব ইন্ডিয়ার সাগরিকা বসুর কলামে। সমপ্রতি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দুদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক সীমান্তবিষয়ক একটি চুক্তি হলে কেমন হয়? ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরে সঙ্গী হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে মমতাকে অনেক বেশি হাস্যোজ্জ্ব্বল ও উষ্ণ মনে হয়েছে। তাদের হাসিমাখা ছবিতে ছেয়ে গেছে পত্রপত্রিকার পাতা। কিন্তু দু’ পাশের দুই বাঙালি যখন এক হন, তখন সমপর্ক এতটা উষ্ণ থাকে না। একটি সাধারণ ভাষার দরুণ কখনই দুই মানুষ এতটা বিভাজিত থাকেনি এর আগে।
এক শতাব্দী পরও, দু’ বঙ্গের মধ্যে বিরোধটা জিইয়ে আছে। কারও যুক্তি, পদ্মার ইলিশ গঙ্গার ইলিশের চেয়ে অনেক ভাল। কলকাতায় দুটি ফুটবল ক্লাবের মধ্যে চির প্রতিদ্বন্দ্বিতাটি কিংবদন্তিসুলভ। মোহনবাগান ও ইস্ট বেঙ্গল যদিও কলকাতায়ই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তবুও তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গের দ্বন্দ্বের বিষয়টি সংক্রমিত করেছে ওই ২ ক্লাবকেও। ইস্ট বেঙ্গলের জয় উদযাপন করা হয় ইলিশ দিয়ে। মোহনবাগানের জয়ে বিশালাকারের চিংড়ি গলাধঃকরণ না করলেই নয়!
কিন্তু নারী রাজনীতিবিদদের কথা যদি আসে, দুই বঙ্গের মধ্যে অবশ্য মিল রয়েছে। ঢাকার আছেন খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের আছেন আমাদের তেজস্বী ‘দিদি’। এর অর্থ, বেঙ্গল টাইগাররা হয়তো বিলুপ্তির ঝুঁকিতে আছে। কিন্তু বেঙ্গল টাইগ্রেসরা (নারী বাঘ) এখনও তর্জন-গর্জন ছেড়েই যাচ্ছেন বিরতিহীনভাবে।
তবে রবীন্দ্র সংগীতের যে উদাহরণীয় ভূমিকা, তার জন্য অবশ্য সুন্দরবনের উভয় পাশের বঙ্গদ্বয়ই সমানভাবে গর্বিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশের জাতীয় সংগীত লিখেছেন। যদি বাংলাদেশের রুনা লায়লা থাকেন, তবে কলকাতার আছেন উষা উত্থপ। কলকাতার চেয়ে ঢাকাই শাড়ি কিন্তু উপরের দিকে। বাংলাদেশ থেকে সেসব বেশি যায় কলকাতার দিকে। আবার ঢাকার পুরুষরা এখন ধুতি-পাঞ্জাবি পরেন না বললেই চলে। কিন্তু কলকাতার ‘ভদ্রলোক’রা এখনও সেগুলো পরেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম যদিও নিজেদের ডাকে ‘টাইগার’ নামে। তবে ভারতীয় নীল পোশাকধারীরা এখনও ওপরেই আছে।
শিক্ষা-দীক্ষার ব্যাপারেও কিছু মিল-অমিল রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের অধ্যাপকরা শাসকদলের ক্রোধের শিকার হয়েছেন বটে। কিন্তু ঢাকার মতো দিন দুপুরে ব্লগার হত্যাকাণ্ড হুগলির তীরে ঘটেনি। অবশ্য তসলিমা নাসরিন কলকাতায় যে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন, তার তুলনা নেই। চলচ্চিত্রের কথা আসলে অবশ্যম্ভাবীভাবে পিছিয়ে রয়েছে ঢাকা। সত্যজিৎ রায় বা মৃণাল সেনের সমতুল্য এখনও ঢাকার কেউ হয়ে উঠেননি। কিন্তু ওই দুজন একসঙ্গে দুই বাংলার অর্জনকে অনেক দূর নিয়ে গেছেন।

No comments

Powered by Blogger.