এবার আল–কায়েদার ইয়েমেনি নেতা নিহত

যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলায় এবার নিহত হলেন জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার ইয়েমেন শাখার প্রধান নাসের আল-বুয়াইশি। আল-কায়েদা ইন অ্যারাবিয়ান পেনিনসুলার (একিউএপি) সদস্য খালেদ বাতারফি গতকাল মঙ্গলবার এক ঘোষণায় আল-বুয়াইশির নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেন। খবর বিবিসি ও এএফপির।
এর আগে গত সোমবার লিবিয়ার সরকার জানায়, আল-কায়েদাসংশ্লিষ্ট একটি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা মোখতার বেলমোখতার যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। আলজেরিয়ায় জন্মগ্রহণকারী বেলমোখতার আল-কায়েদা ইন ইসলামি মাগরেবের (একিউআইএম) জ্যেষ্ঠ সদস্য ছিলেন। দল ভেঙে পরে আল-কায়েদাসংশ্লিষ্ট উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকার জঙ্গি সংগঠন আল মুরাবাইতউনের নেতা হন।
অনলাইনে পাঠানো ভিডিওতে একিউএপির সদস্য খালেদ বাতারফি জানান, আল-বুয়াইশির সঙ্গে আরও দুজন ইসলামি জঙ্গি নিহত হয়েছেন। সংগঠনটির নতুন প্রধান হিসেবে সামরিক শাখার সাবেক প্রধান কাসিম আল-রেমিকে নিযুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান বাতারফি।
এ বছর মার্কিন হামলায় নিহত হওয়া একিউএপির ষষ্ঠ শীর্ষ নেতা হলেন আল-বুয়াইশি। তিনি আল-কায়েদার প্রয়াত প্রধান ওসামা বিন লাদেনের ব্যক্তিগত সচিব ছিলেন। তাঁকে আল-কায়েদার দ্বিতীয় শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হতো। একিউএপি ফরাসি রম্য সাময়িকী শার্লে এবদোতে হামলার দায় স্বীকার করেছিলেন। হামলার পর তাঁরা একে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি অপমানের প্রতিশোধ বলে দাবি করেছিলেন।
একিউএপি সাম্প্রতিক সময়ে ইয়েমেনে বেশ কিছু বড় হামলা চালায়। সরকারি দপ্তর, সেনা ক্যাম্প এবং সেনাসদস্যরা এসব হামলার শিকার হন। হামলায় কয়েক শ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
একিউএপি অবশ্য পরিষ্কার করে বলেনি যে কখন ও কীভাবে আল-বুয়াইশির মৃত্যু হয়। ইয়েমেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর মুকালার কয়েকজন বাসিন্দা একটি ড্রোন হামলার কথা উল্লেখ করেন। আর কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নামাজ শেষে শহরের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় তাঁরা যখন আড্ডা দিচ্ছিলেন, তখন একটি বিস্ফোরণে তিনজনের মৃত্যু ঘটে। তাদের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় পড়ে। এ সময় আতঙ্কিত মানুষ পালিয়ে যায়। এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আল-কায়েদার জঙ্গিরা এলাকাটি ঘিরে ফেলে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, এ ঘটনায় তাঁদের এমন বিশ্বাস হয়েছে যে নিহত তিনজন জঙ্গি সংগঠনেরই ছিলেন।
একিউএপির ওপর গ্রেগরি জনসনের লেখা বই অনুসারে, আল-বুয়াইশির জন্ম ইয়েমেনে। ১৯৯৮ সালে আল-কায়েদায় যোগ দিতে তিনি আফগানিস্তানে যান। সেখানে তিনি ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। একপর্যায়ে তাঁর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি আফগানিস্তানেই ছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বরে টুইন টাওয়ারে হামলার পর আল-কায়েদার বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযান শুরু হলে বুয়াইশি ইয়েমেনে চলে আসেন। সেখানে তাঁকে আটক করা হলে ২০০৬ সালে জেল ভেঙে পালিয়ে যান। ২০০৯ সালে তিনি একিউএপির প্রধান হন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর এই জঙ্গি নেতাকে ধরিয়ে দিতে এক কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল।
অস্বীকার: আলজেরিয়ার শীর্ষ জঙ্গি নেতা মোখতার বেলমোখতার নিহত হওয়ার যে খবর দুই দিন আগে বেরিয়েছিল, তা অস্বীকার করেছে আনসার আল শরিয়া নামের লিবিয়ার একটি জঙ্গি গোষ্ঠী। গত রোববার লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার বেলমোখতার নিহত হয়েছেন বলে দাবি করে। তবে আনসার আল শরিয়ার টুইটার বিবৃতিতে তাদের যে সাত জঙ্গি নিহত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়, সেখানে বেলমোখতারের নাম নেই।

No comments

Powered by Blogger.