ময়লা-আবর্জনায় ভরা মহাসড়ক

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কড্ডা এলাকায়
ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কে এভাবেই ময়লা ফেলে
রাখা হয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো
ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আবর্জনা ফেলে রাখছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। এতে অনেক সময়ই রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। চলাচলের সময় যানজট ও দুর্গন্ধে নাকাল হচ্ছে মানুষ। শিল্পকারখানার তরল বর্জ্য ফেলা হচ্ছে তুরাগ নদ ও স্থানীয় খাল-বিলে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকায় সিটি করপোরেশনের কর্মীরা আবর্জনা ফেলছেন। এর মধ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সদর উপজেলার মালেকের বাড়ি, ছয়দানা, টঙ্গী বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকাসহ বেশ কিছু স্থানে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। একই উপজেলার কড্ডা ও বাইমাইল এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আবর্জনা ফেলতে ফেলতে অর্ধেক অংশ আবর্জনার দখলে চলে গেছে। দুটি মহাসড়কের সংযোগস্থল চান্দনা চৌরাস্তার জাগ্রত চৌরঙ্গী ভাস্কর্যের নিচে প্রকাশ্যে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।
নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওপরেই সিটি করপোরেশনের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। যার কারণে মহাসড়কে যানজট লেগে থাকে। এ ছাড়া আছে প্রকট দুর্গন্ধও। নাক চেপে বাসিন্দাদের চলাফেরা করতে হয়। তা ছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কড্ডা এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশে আবর্জনা ফেলায় সেখানেও বেশির ভাগ সময় যানজট লেগে থাকে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকার দুই পাশে তিন কিলোমিটার এলাকায় থেমে থেমে যানজট লেগে ছিল। যানজটে আটকে থাকা বাসযাত্রী রহিম সরকার বলেন, ‘এখানে এলে মনে হয় না আমরা কোনো সভ্য দেশে বসবাস করি।’
কড্ডা এলাকার বাসিন্দা নাছির হোসেন জানান, প্রতিদিন সিটি করপোরেশনের কমপক্ষে ৫০টি ট্রাক বিভিন্ন স্থান থেকে ময়লা-আবর্জনা নিয়ে এসে মহাসড়কের ওপর ফেলে চলে যায়। সড়কটি যখন একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, সেই সময় ময়লা সরিয়ে নেওয়া হয়।
সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কবীর আল আসাদ বলেন, কোথাও জায়গা না থাকায় মহাসড়কের পাশে আবর্জনা ফেলা হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, গাজীপুরে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ মেট্রিক টন আবর্জনা সৃষ্টি হয়। এখন আম-কাঁঠালের সময় তা আরও বেড়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত গরমের জন্য শ্রমিকও কিছু কম আছে। যে কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে রাস্তা থেকে একটু দূরে সাময়িকভাবে সড়ক ও জনপথের জায়গা পাওয়া গেছে, সেখানে আবর্জনা ফেলার জন্য কাজ চলছে।
এদিকে গাজীপুরের অনেক শিল্পকারখানার তরল বর্জ্য সরাসরি তুরাগ নদে ফেলা হচ্ছে। এ ছাড়া স্থানীয় খাল ও বিলেও ফেলা হচ্ছে। গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কারখানাগুলোর মধ্যে ইটিপি স্থাপনযোগ্য শিল্প ইউনিট রয়েছে ৩৫৭টি। গত তিন মাসে ইটিপি স্থাপিত হয়েছে পাঁচটিতে। এ পর্যন্ত ইটিপি স্থাপিত হয়েছে ২৮৪টি শিল্পকারখানায়। ইটিপি সচল আছে এমন কারখানার সংখ্যা ২১৮টি। আর ইটিপি স্থাপনের প্রক্রিয়াধীন আছে ৩৭টি কারখানায়। এ ছাড়া পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে গত বছরের জুন থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ৮৭টি কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে ১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক সোনিয়া সুলতানা বলেন, ‘অনেক কারখানাই পরিবেশ দূষণ করছে। আমাদের অভিযানও অব্যাহত আছে।’

No comments

Powered by Blogger.