অতীশ দীপঙ্কর স্মৃতিস্তম্ভ হচ্ছে টঙ্গীবাড়ীতে

বৌদ্ধ ধর্মের সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর ৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুর পরগনার বজ্রযোগিনী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার স্মৃতিকে চিরঞ্জীব করে রাখার জন্য বজ্রযোগিনী গ্রামে তার জন্ম স্থানে স্থাপিত হচ্ছে স্মৃতিস্তম্ভ। দীপঙ্করের বাবা ছিলেন তৎকালীন রাজা কল্যাণশ্রী ও তার মায়ের নাম ছিল প্রভাবতী। বাল্যকালে বাবা-মা তার নাম রাখেন চন্দ্রগর্ভ। পরে তিনি শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর নামে বিশ্বব্যাপী খ্যাতি লাভ করেন। ১৯ বছর বয়সে দীপঙ্করের ওদন্তপুরী বিহারের আচার্য পরম পণ্ডিত শীলর কাছ থেকে ভিক্ষু ব্রতে দীক্ষা লাভ করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই দীপঙ্কর বৌদ্ধ দর্শন সম্বন্ধে সাধারণ পাণ্ডিত্য লাভ করেন। বৌদ্ধ ধর্ম বিকাশের জন্য বাঙালি দীপঙ্কর বিক্রমপুরের এই বিক্রমশালী সন্তান সুদূর তিব্বত যাত্রা করেন। দীপঙ্করের বিদ্যাবত্তা ও বিবিধ গুণের জন্য জো-বো-জে অর্থাৎ প্রভু স্বামী বা স্বামী ভট্টারক উপাধি পান। দীপঙ্কর প্রায় ১২ বছর তিব্বতে বাস করে তিব্বতের বিভিন্ন প্রদেশ পরিদর্শন করে বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্রতা ও প্রকৃতি ধর্মতত্ত্ব জনগণের মধ্যে প্রচার করেন। মাত্র ২১ বছর বয়সে দীপঙ্কর সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একজন পণ্ডিত হন। বিদ্যা শিক্ষার জন্য দীপঙ্কর সুবর্ণ দ্বীপ পর্যন্ত যান। শিক্ষা জীবন শেষ করে তিনি বিক্রমশীলা বিহারের অধ্যক্ষ হন। দীপঙ্কর বহু গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন এবং তিনি ১০০টি মহাযান ধর্ম সম্পর্কিত উপদেশ দিয়েছেন। তার লিখিত কয়েকটি পুস্তকের নাম হচ্ছে বোদিপথ-প্রদীপ, চর্যা সংগ্রহণ প্রদীপ, মধ্যমোপদেশ, সংগ্রহ গর্ভ ও বর্ণ বিভঙ্গ ইত্যাদি। দীপঙ্কর নয়পালকে উপদেশপূর্ণ যে পত্র লেখেন তা বিমল রত্ন নামে পরিচিত। মুন্সীগঞ্জ জেলার তথা বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেখানে একটি মাত্র ভিটা রয়েছে যা ‘পণ্ডিতের ভিটা’ নামে সবার কাছে পরিচিত। ঢাকা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে বিক্রমপুরের বজ্রযোগিনী গ্রামে গেলে শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের স্মৃতি স্তম্ভটি চোখে পড়বে। এ স্তম্ভের দিকে তাকালে গর্বে বুক ভরে যায়। ২০০৪ সালে চীনের আর্থিক সহযোগিতায় তিব্বতীয় মডেল অনুকরণে এ স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে। তার একটু পাশেই জেলা পরিষদের অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে বিশাল আয়তনে অতীশ দীপঙ্কর পাবলিক লাইব্রেরি কাম-অডিটরিয়াম। বর্তমানে স্মৃতি স্তম্ভটির পাশেই আর একটি গোলাকৃত স্তম্ভ নির্মাণের কাজ চলছে।
এখানে অতীশ দীপঙ্কর বিশ্ব বিদ্যালয় করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। অতীশ দীপঙ্করের জন্ম স্থানে চীনসহ বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা এসে তার ভিটা ও জন্ম ভূমি পরিদর্শন করেন।

No comments

Powered by Blogger.