সাংসদপুত্রকে বাঁচানোর চেষ্টা- আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করুন

গভীর রাতে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে যে ব্যক্তি দুজন দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষকে হত্যা করেছেন বলে অভিযুক্ত, তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইন প্রয়োগে স্পষ্টতই গড়িমসি লক্ষ করা যাচ্ছে। তিনি ক্ষমতাসীন দলের এক সাংসদের ছেলে বলে তাঁকে রক্ষা করার অপচেষ্টা চলতে পারে না। তাঁর যথাযথ বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
গত ১৩ এপ্রিল রাত পৌনে দুইটায় রাজধানীর নিউ ইস্কাটনের রাস্তায় যানজটে আটকা পড়ে বখতিয়ার আলম রনি নামের ওই ব্যক্তি বিরক্ত হয়ে নিজের গাড়ির জানালা খুলে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছিলেন বলে নিজেই পুলিশের কাছে স্বীকার করেন। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন তাঁর গাড়ির চালক ইমরান ফকিরও আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে একই কথা বলেন। কিন্তু বখতিয়ার আলম রনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে শনিবার তাঁকে আদালতে নেওয়া হলো, অথচ শুনানির সময় জবানবন্দির জন্য তাঁকে আদালতের কাঠগড়ায় তোলা হলো না। এর আগে তিনি অসুস্থতার ভান করে কালক্ষেপণ করেছেন এবং হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাঁর কোনো রোগ পাওয়া যায়নি বলে ডিবি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এই পর্যায়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিবিসি বাংলাকে বললেন, ‘ঘটনাটি কে ঘটিয়েছে এবং কীভাবে ঘটিয়েছে, তা নিয়ে আমরা এখনো স্পষ্ট ধারণা পাইনি।’ মন্ত্রীর এই বক্তব্য এ মামলায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ সম্পর্কে সংশয় সৃষ্টি করে। আসামিকে আদালতে বিচারকের সামনে হাজির না করা, তাঁর অসুস্থতা প্রমাণিত না হওয়া সত্ত্বেও তাঁর আইনজীবী যখন তাঁর চিকিৎসার আবেদন করলেন, তখন পুলিশের বিরোধিতা না করাসহ মামলাটি পরিচালনার সামগ্রিক দিক লক্ষ করে প্রতীয়মান হয় যে তাঁর বিরুদ্ধে নিরপেক্ষভাবে আইন প্রয়োগের দায়িত্ব যাঁদের, তাঁরাই তাঁকে রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।
কিন্তু আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। বাদীপক্ষ দরিদ্র ও দুর্বল, তাই আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকেই সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে মামলা লড়ে হত্যাকারীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.