বিএনপি নির্বাচনে না আসায় ভাল হয়েছে -হবিগঞ্জে হাসিনা by মো. আমির হোসেন ও এমএ বাছিত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসায় ভালই হয়েছে। সংসদে আর কাউকে খিস্তিখেউর শুনতে হয় না। বিএনপি না থাকায় দশম সংসদ ‘ভালভাবে’ চলছে। সংসদ ভদ্রভাবে চলছে। সংসদের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরে এসেছে। গতকাল হবিগঞ্জের নিউফিল্ডে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জনসভায় দেয়া বক্তব্যে বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষ শান্তিতে থাকে আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকলে মানুষ অশান্তিতে থাকে। হবিগঞ্জ সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জেলার বেশ কয়েকটি উন্নয়নকাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ মালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবো। বাংলাদেশকে আমরা সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবো। বর্তমান সরকার দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা গ্রামের গরিব জনসাধারণের জন্য একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প চালু করেছি। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক স্থাপন করেছি। প্রত্যেক গ্রামের গরিব মানুষকে একটি করে ঘর তৈরি করে দেয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য মানুষর কল্যাণ করা। আমরা স্বল্পসুদে ঋণের এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। যাতে একজন যুবকও বেকার না থাকে। সিলেট বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত করেছি। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে বিএনপি না আসায় একটি শান্তিপূর্ণ সংসদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখন সংসদে আর অশালীন বক্তব্য শোনা যায় না। তিনি বলেন, ঘরে ঘরে ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না- এটাই আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিজ্ঞা।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকজন এবং আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল সহকারে হবিগঞ্জ নিউফিল্ডে জনসভাস্থলে আসতে থাকেন। জনসভার নির্ধারিত সময় বেলা ২টায় হলেও দুপুর ১২টার আগেই জনসভাস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। জনসভাস্থলে মানুষের ঠাঁই না হওয়ায় পার্শ্ববর্তী বাইপাস সড়কে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। জনসভাস্থলের বাইরে অবস্থারত জনতার সুবিধার্থে বিভিন্ন স্থানে বড় পর্দা লাগানো হয়। জনসভাস্থলের চারদিকে প্রায় ২ কিলোমিটার পর্যন্ত মাইক স্থাপন করা হয়।
হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট মো. আবু জাহির-এর সভাপতিত্বে ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুল মজিদ খান, সহসভাপতি আবুল ফজল ও আলমগীর চৌধুরীর সঞ্চালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিছবাউদ্দিন সিরাজ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, অর্থ প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান, সংসদ সদস্য মহিবুর রহমান মানিক, হুইপ সাহাবুদ্দিন আহমেদ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বিরেন শিকদার, সাবেক চিপ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ, মৌলভীবাজারের সাবেক এমপি আজিজুর রহমান, চুনারুঘাট-মাধবপুর আসনের এমপি মাহবুব আলী, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ প্রশাসক ডা. মুশফিক হোসেন চৌধুরী, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাউদ্দিন, সিলেটের সাবেক এমপি সফিকুর রহমান চৌধুরী, মৌলভীবাজারের সাবেক এমপি হোসেনে আরা ওয়াহিদ, চুনরুঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের, লাখাই উপজেলা চেয়ারম্যান মুশফিউল আলম আজাদ, বাহুবল উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল হাই, আজমিরীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আতর আলী, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেলাল হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক আতিক, কেন্দ্রীয় নেতা সুভ্রত পুরকায়স্থ, আওয়ামী লীগ জাতীয় পরিষদ সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভপতি মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট সিরাজুল হক চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী টিপু, আরব আলী, শেখ শামসুল হক, শরীফ উল্লাহ, এডভোকেট আলমগীর ভূঁইয়া বাবুল, মুকুল আচার্য্য, যুগ্ম সম্পাদক এডভোকেট সালেহ আহমদ, মরতুজা হাসান, মরতুজ আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম, মশিউর রহমান শামীম, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি হুমায়ূন কবির রেজা প্রমুখ।
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি যুদ্ধাপরাধীদের হতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল। আর আমরা ওই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি। অনেকের রায়ও কার্যকর হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত এক হয়ে ইসলাম কায়েমের নামে রাজনীতি করে। এরা নির্বাচন বন্ধের নামে বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী তাদের আমলে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গিয়েছিল এ কথা বলে বেড়ান। কিন্তু উন্নয়নের জোয়ার কি তা তিনি বোঝেন না। তাদের উন্নয়নের জোয়ারে দেশে ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গিয়েছিল। তারা গ্রেনেড, হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তাদের আমলে শুধু সিলেট বিভাগেই ১০টি জায়গায় গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে গ্রেনেড হামলায় হত্যা করা হয়েছিল। ওই হত্যাকাণ্ডের চার্জশিট আদালতে দাখিল হয়েছে। বিচারকাজ সম্পন্নের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি দেয়া হবে।
তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার প্রত্যেক জেলায় ১টি করে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। তাই হবিগঞ্জেও একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। এ ছাড়া হবিগঞ্জে একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও শায়েস্তাগঞ্জকে উপজেলা করার আশ্বাস দেন তিনি। বলেন, হবিগঞ্জে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতাল ও বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ শরীফ উদ্দিন সড়ক উন্নয়নকাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকালে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় বিবিয়ানা গ্যাস সম্প্রসারণ প্রকল্প, বিবিয়ানা-ধনুয়া ৩৬ ইঞ্চি গ্যাস উচ্চচাপ পাইপ সঞ্চালন লাইন, ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়ক থেকে বিবিয়ানা পাওয়ার প্ল্যান্ট সংযোগ সড়ক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উদ্বোধন করেন এবং বিবিয়ানা দক্ষিণ ৪০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, বিবিয়ানা বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট-৩ (উত্তর ৪০০ মেগাওয়াট), বিজনা ব্রিজ, নবীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও পরে নবীগঞ্জ বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড এলাকায় সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। বিকালে প্রধানমন্ত্রী হবিগঞ্জে জনসভায় যোগ দেয়ার আগে নবনির্মিত হবিগঞ্জ আধুনিক স্টেডিয়াম, হবিগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল, হবিগঞ্জ নার্সিং ইনস্টিটিউট, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ অডিটরিয়াম ও কমিউনিটি সেন্টার, হবিগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি ভবন, হবিগঞ্জ ফায়ার স্টেশন, আলেয়া জাহির কলেজ, জেলা আনসার ও ভিডিপি অফিস ভবন, বানিয়াচং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, শায়েস্তাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, হবিগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাহ উন্নয়ন কার্যক্রম উদ্বোধন এবং আজমিরীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন ও শাহজীবাজার ৩৩০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্টের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

No comments

Powered by Blogger.